কোণারক সূর্য মন্দির

ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মন্দির গুলির সাথে জড়িয়ে রয়েছে নানান অজানা কাহিনী। যার মধ্যে অন্যতম বাংলা থেকে ঢিল ছোড়া দূরে অবস্থিত উড়িষ্যার জনপ্রিয় তীর্থস্থান কোণারক মন্দির। পুরীর সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দির ঘিরে  রয়েছে নানান রহস্যময় কাহিনী। যা শুনলে রীতিমতো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। রোমাঞ্চকর এই মন্দিরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে নানান অজানা রহস্য। শুনতে অবাক লাগলেও বহু প্রাচীন এই মন্দিরে নেই কোন বিগ্রহ। তাই মন্দির থাকলেও হয় না কোন দেবতার পুজো! বর্তমানে যে কোণারক মন্দির দেখতে পাওয়া যায় তা নাকি আসল সূর্য মন্দিরই নয়! এমনকি মন্দিরের চূড়ায় নেই অতীতের সেই ৫২ টন ওজনের চুম্বক। নানান কাহিনী রয়েছে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা কে নিয়েও।

কোণারক সূর্য মন্দিরের অবস্থান

উড়িষ্যার এই সূর্য মন্দির পুরীর সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত। পুরী থেকে এই মন্দিরের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। আর ভুবনেশ্বর থেকে এই মন্দিরের দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার।

কোণারক সূর্য মন্দির প্রতিষ্ঠা

ইতিহাস বলছে ১২৫৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গ রাজবংশের রাজা ১ম নরসিংহদেব এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চন্দ্রভাগা নদীর তীরে প্রাচীন মিত্রবনে বাংলার স্মৃতি রূপে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই সূর্য মন্দির। সূর্যের বিভিন্ন কৌণিক অবস্থানকে নির্দেশ করে এই মন্দির তৈরি করা হয়, তাই এই মন্দিরের নাম হয়েছে কোণারক। কোণ মানে কৌণিক আর অর্ক মানে সূর্য।

কথিত আছে ভগবান শ্রী সূর্যনারায়ণ দেবের রথের আকারে এই মন্দির তৈরী। তাই এই মন্দিরে রয়েছে সূর্যদেবের রথে থাকা ১২ জোড়া চাকা এবং ৭টি ঘোড়া। আর সেই ১২ জোড়া চাকায় আছে ৮টি করে দন্ড। এই সব কিছুরই রয়েছে বিশেষ অর্থ। যেমন ১২ জোড়া অর্থাৎ ২৪ টি চাকা ২৪ বছরকে নির্দেশ করে। আর চাকাতে থাকা ৮টি দন্ড নির্দেশ করে অষ্টপ্রহরকে। তেমনি সপ্তাহের ৭টি দিন বোঝায় ৭টি ঘোড়া।

সূর্য মন্দির প্রতিষ্ঠার পৌরাণিক কাহিনী

তবে পুরাণ মতে শ্রীকৃষ্ণ পুত্র সাম্ব এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে এই সূর্য মন্দিরই কোণারক নামে পরিচিতি পায়। সাম্বর প্রতিষ্ঠাতা করা এই মন্দিরই পরে পুনঃনির্মাণ করেন ১ম নরসিংহদেব।

কোণারক সূর্য মন্দিরের বেহাল দশার ইতিহাস

সমুদ্রের তীরে অবস্থিত এই সূর্য মন্দিরের চূড়ায় একটি ৫২ টন ওজনের চুম্বক ছিল। কিন্তু এখন সেই চুম্বক আর নেই। কারণ অতীতে ওই চুম্বকের জন্যই  জাহাজের নাবিক কিংবা জলদস্যুরা ভুল পথে গিয়ে  দুর্ঘটনার কবলে পড়তো। তাই সেই জলদস্যুরাই মন্দিরের ওই চুম্বক বিকল করে দিয়েছিল। আবার অনেকে বলেন, ব্রিটিশরা এই চুম্বক গোপনে ইংল্যান্ডে নিয়ে গিয়েছিল।

আগে এই মন্দিরে মূর্তি পুজো করা হতো। কিন্তু পরে  হানাহানি আর সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই সূর্য মন্দির। তখন ২য় নরসিংহদেব মন্দিরের সূর্য-চন্দ্র দেবের মূর্তি সহ কারুকার্য করা বহু পাথর নিয়ে পুরী মন্দিরের স্থাপন করেছিলেন। সূর্য-চন্দ্র দেবতার আলাদা আলাদা মন্দিরও  প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যদিকে দিন দিন শ্রীহীন হয়ে পড়ে কোণারকের সূর্য মন্দির।

মারাঠা শাসনকালে এই মন্দিরের অর্ধেক অংশ বালির নিচে চাপা পড়ে যায়। মারাঠা সরকার মন্দিরটিকে ভেঙেও ফেলেন। পরে এই মন্দিরই হয়ে ওঠে জন্তু-জানোয়ার, ডাকাতদের বাসস্থান। দিনের আলোতেও  এই মন্দিরে যেতে ভয় পেতেন সবাই। পরে দীর্ঘ ৩০০ বছর পর অর্থাৎ ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে বালির স্তূপ থেকে উদ্ধার করে মন্দিরটিকে নতুন রূপ দেন বড়লাট লর্ড কার্জন। তবে ততদিনে কোণার্ক সূর্য মন্দিরের প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। তা এখনকার এই কোণারক মন্দিরটি আসলে নাট মন্দির।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *