নৈহাটি বাসীর কাছে আবেগের আরেক নাম বড়মা। বলা হয় ধর্ম হোক যার যার, বড় মা সবার। তাই জাতি,ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মধ্যে বড় মা’কে নিয়ে রয়েছে আলাদা ভক্তি। প্রত্যেক বছর নৈহাটির বড় মায়ের উচ্চতার পাশাপাশি বেড়েই চলেছে ভক্ত সমাগমও। তাই প্রত্যেক কালীপুজোতেই নৈহাটির ঋষি অরবিন্দ রোডের পাশেই মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি দর্শন করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্তরা। বাংলা তো বটেই দেশের বাইরে থেকেও বহু ভক্ত আসেন বড়মায়ের দর্শন পেতে। চলতি বছরেই শতবর্ষে পদার্পণ করেছে নৈহাটির বড়মায়ের পুজো। তাই শতবর্ষ উপলক্ষ্যে এবার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেবীর কষ্টিপাথরের মূর্তি। নতুন এই মন্দিরে সারা বছর পুজো দিতে পারবেন ভক্তরা।
অলৌকিক কাহিনী:
ভক্তদের বিশ্বাস নৈহাটির বড় মা ভীষণ জাগ্রত। এই বড়মা’কে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে বহু অলৌকিক কাহিনীও। এক দশক আগে অর্থাৎ ২০১২ সাল নাগাদ বড়মায়ের এমনই এক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন এই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় ভবেশ চক্রবর্তীর পুত্রবধূ নন্দিনী চক্রবর্তী। মায়ের সেই লীলার কথা কথা শুনলে আজও গায়ে কাঁটা দেয় ভক্তদের। সেকথা বলতে গেলে আজও চোখে জল আসে চক্রবর্তী পরিবারের পুত্রবধূর।
কারণ সেসময় নাকি স্বয়ং বড়মা অন্য রূপ ধরে এসে দর্শন দিয়েছিলেন তাঁকে। তিনি মায়ের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা থেকে জানা যায় চোখ লাল, খোলাচুল আর লাল শাড়ি পরা এক নারী। সেদিন গভীর রাতে কীর্তন সেরে নন্দিনী দেবী যখন বাড়ি ফিরছিলেন তখন তিনি জানতে পারেন তার বাড়ির দিক থেকে কোনো এক নারী গঙ্গার ঘাটে যাচ্ছেন। এরপর তিনিও নাকি নিজের চোখে দেখেন লাল পরে খোলা চুলে একজন মহিলা তার বাড়ির দিকে আসছেন। তিনি পরিচয় দিয়েছিলেন যে তিনি নাকি নবদ্বীপ থেকে এসেছেন। এরপর ভবেশ চক্রবর্তীর পুত্রবধূ নিজে তাঁর হাতে শাড়ি, আর আলতা সিঁদুর তুলে দিয়েছিলেন।
আর এরপরেই ঘটে এক অলৌকিক ঘটনা। সেই ঘটনা বলতে গিয়ে আজও গলা বুজে আসে নন্দিতা চক্রবর্তীর। শাড়ি পেয়ে খুশি হয়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি। তারপর তিনি দেখেন তার বাড়িতে রাখা মায়ের কাঠামোর মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছেন সেই অচেনা মহিলা। এরপর তিনি বোঝেন উনি কোনো সাধারণ মানুষ নন, কারণ উনিই হলেন বড়মা। হয়তো বড়মা নিজে থেকেই চক্রবর্তী পরিবারে থেকে যেতে চেয়েছিলেন এভাবেই। মানুষের বিশ্বাস তিনি আজও বিরাজ করেন ভবেশ চক্রবর্তীর গৃহে।
বড়মার পুজোর অজানা ইহিহাস
বড়মার পুজোর সাথে কীভাবে জড়িয়ে ভবেশচক্রবর্তীর পরিবার? বড়মায়ের এই পুজো ঘিরে রয়েছে এক অজানা ইতিহাস। সে প্রায় ১০০ বছর আগের কথা। সেসময় নৈহাটির বাসিন্দা ভবেশ চক্রবর্তী চার বন্ধু নিয়ে নবদ্বীপে ভাঙা রাস দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে বড় প্রতিমা দেখে তিনি ঠিক করেছিলেন বাড়িতেও এমন বড় কালীমূর্তি পুজো করবেন। এরপর পাঁচ বন্ধু মিলে এই পুজোর দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছিলেন।
সেই থেকেই চক্রবর্তী বাড়িতে পুজো করা হয় মা’কালীর। ভবেশ চক্রবর্তীর প্রয়াণের পর তাঁর এই ছেলে পুজোর দায়িত্ব নেন। তবে বছর বছর প্রতিমার আকার বাড়তে থাকায় আর ভবেশ চক্রবর্তীর ছেলের মৃত্যুর পর ২০১২ সাল থেকে পুজোয় দায়ভার নিয়ে নেন পাড়ার অন্য সদস্যরা।
Leave a Reply