ভাইফোঁটা

বাঙালি হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রত্যেক বছর কালীপুজোর দুদিন পরেই অর্থাৎ কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিন ভাইফোঁটা পালন করেন আপামর বাঙালি। তাই প্রত্যেক বছর এই বিশেষ দিনটা বরাদ্দ থাকে প্রত্যেক ভাই বোনদের জন্যই। তবে এই ভাইফোঁটার পেছনেও রয়েছে বেশ কিছু পৌরাণিক কাহিনী।  বছর বছর ভাইফোঁটা দিলেও অনেকেই কিন্তু জানেন না সেই  অজানা কাহিনী।

ভাইফোঁটা কি?

ভাইফোঁটার দিনে দিদি বা বোনেরা ভাই-দাদাদের সুস্থ এবং মঙ্গলময় জীবনের কামনা করেন। সকলের বিশ্বাস এই বিশেষ দিনে ভাই-বোনের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। বছরের পর বছর ধরে প্রত্যেক বাঙালি বাড়িতে এই দিনটিকে ধুমধাম করে  পালন করা হয়ে আসছে। সেইসাথে চলতে থাকে চুটিয়ে খাওয়া-দাওয়া আর উপহার বিনিময় পর্ব। তবে বিভিন্ন জায়গায়  ভাই ফোঁটা বিভিন্ন নামে পরিচিত। তাই বাংলায় যা ভাইফোঁটা নামে পরিচিত তা পশ্চিম ভারতে ভাইদুজ, মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটকে ভাইবিজ, আর নেপাল ও দার্জিলিং-এ ভাইটিকা নাম পরিচিত।

অজানা পৌরাণিক কাহিনী:

শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করে ঐদিন তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে গিয়েছিলেন। তখন সুভদ্রা কৃষ্ণের কপালে ফোঁটা দিয়ে মিষ্টি খাইয়ে তাঁকে বাড়িতে স্বাগত জানিয়েছিলেন। সেই থেকেই যুগ যুগ ধরে পালন করা হচ্ছে এই ভাইফোঁটা।

প্রতিবছর দিদি বা বোনেরা ভাই বা দাদাকে আদর-যত্ন করে আসনে বসিয়ে, প্রদীপ জ্বেলে কপালে দই কিংবা চন্দন অথবা হলুদের ফোঁটা দিয়ে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে বলেন, ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পরলো কাঁটা। যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দি আমার ভাইকে ফোঁটা’।

রয়েছে আরও একটি পৌরাণিক কাহিনি। একসময় পাতালে  বালির হাতে বন্দি ছিলেন বিষ্ণু। তাই  বিপদে পড়েছিলেন স্বর্গের দেবতারাও। সেইসময়  বিষ্ণুকে উদ্ধার করতেই দেবী লক্ষ্মী বালিকে ভাই পাতিয়ে ছিলেন। তাকে ফোঁটা দিয়ে স্বয়ং দেবী লক্ষ্মী উপহার হিসাবে বিষ্ণুকে মুক্তি দিতে বলেছিলেন। এই দিনটিও ছিল কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি।

 

যম দ্বিতীয়া নামকরণের ব্যাখ্যা:

ভাইফোঁটার আরও একটি নাম হল যম দ্বিতীয়া। এই নামের পিছনেও রয়েছে এক অজানা ব্যাখা। পৌরাণিক কাহিনী মতে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের এই দ্বিতীয়া তিথিতে বোন যমুনার বাড়ি গিয়েছিলেন ভাই যমরাজ। তখন ভাইকে নিজে হাতে নানারকম পদ রান্না করেখাইয়েছিলেন যমুনা। সমস্ত খাবার খুব তৃপ্তি করে খেয়েছিলেন যমরাজ। সেইসাথে তিনি বোন যমুনাকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, প্রতিবছর এই বিশেষ দিনে যে ভাইয়েরা দিদি বা বোনের বাড়ি গিয়ে তাদের হাতের রান্না খেয়ে আসবে। তাদের অকাল মৃত্যুর ভয় কেটে যাবে। সেই থেকেই যমরাজ অমরত্ব লাভ করেন। পাশাপাশি এই বিশেষ দিনটি অনেকের কাছে যম দ্বিতীয়া নামেও পরিচিত।

 

২০২৩-এ ভাইফোঁটার শুভক্ষণ

চলতি বছর ভাইফোঁটা দুদিন পড়েছে। অর্থাৎ ১৪ ও ১৫ই নভেম্বর। এইদিন ফোঁটা দেওয়ার শুভ সময় হল ১৪ই নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ২:৩৬ মিনিট থেকে ১৫ই নভেম্বর, বুধবার দুপুর ১:৪৭ মিনিট পর্যন্ত।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *