কুবার পেডি

সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে মানুষের জীবন যাপন আর বাসস্থানেও এসেছে এসেছে আমূল পরিবর্তন। তাই আদিম যুগে মানুষ গুহায় থাকলেও বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির দৌলাতে এখনকার দিনে মানুষের সেই বাসস্থান অনেক উন্নত। কিন্তু জানলে অবাক হবেন এখনও পৃথিবীতে একটা আস্ত শহর রয়েছে মাটির তলায়। কমবেশি সকলেরই পাতাল রেলে চড়ার অভ্যাস আছে ঠিকই, কিন্তু কখনও শুনেছেন পাতাল শহরের কথা? শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এটাই সত্যি!

বাড়ি থেকে গির্জা কিংবা দোকান,বাজার এই শহরের সবটাই রয়েছে ভূগর্ভে। সুদূর অস্ট্রেলিয়ার বুকে অবস্থিত এই  আশ্চর্য শহরের নাম কুবার পেডি। মাটির তলায় থাকা এই মরু শহরে রয়েছে ফুটবল ক্লাব, রেস্তোরাঁ, বইয়ের দোকান, সুইমিং পুল,সিনেমা হল সহ অন্যান্য সমস্ত রকমের পরিষেবা। কুবার পেডি একটি আদিবাসী অস্ট্রেলীয় শব্দ। যা এসেছে স্থানীয় শব্দ কুপা পিটি থেকে। এই শব্দের অর্থ হল ‘হোয়াইট ম্যান’স হোল’ বা ‘সাদা মানুষের গর্ত’। মাটি খুঁড়ে খনি আবিষ্কারের পর সেখানেই বাসস্থান তৈরী করেছিলেন বলেই সম্ভবত এই নাম।

তাই বিশ্ববিখ্যাত এই মরু শহরে মাটির নিচের এই জীবনধারা অদ্ভুত মনে হলেও এর পিছনেও রয়েছে নির্দিষ্ট কারণ। কুবার পেডি  হল মূল্যবান রত্ন উপলের খনি। বিশ্বের প্রায় ৯৫ শতাংশ উপলই আসে এই কুবার পেডি থেকে। এই কারণে এই শহরটি পৃথিবীর উপল রাজধানী নামেও বিখ্যাত। এই শহরের সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো, এখানে সবুজের চিন্হ নেই। ১৯১৫ সালেই প্রথম গড়ে উঠেছিল এই মাটির তলার শহর।

ময়ূরাক্ষী পাথর বা উপলের খোঁজেই অনেক শ্রমিকরাই চলে এসেছিলেন কুবার পেডিতে। যা অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে ৮৪৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই প্রতিদিন কাজ করে ফিরে যাওয়া কষ্টকর ছিল। আদতে এই জায়গাটা মরুভূমি। গ্রীষ্মের দিনে সেখানে মাটির ওপরের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। তাই দিনের বেলায় যেমন গরম রাতে তেমন ঠান্ডা থাকে। তাপমাত্রা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে যায়।

তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই পরিতক্ত খনিতেই নিজেদের বাসস্থান গড়ে তোলেন শ্রমিকরা। এভাবে একসময় মাটির নিচেই গড়ে ওঠে একটি আস্ত শহর। ভূগর্ভস্থ এই শহরে গোটা এলাকা জুড়ে প্রায় ১৫০০টি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। যদিও বাইরে থেকে তা দেখে বোঝার উপায় নেই। কুবার পেডিতে মাটির নিচের ভবনগুলোকে অন্তত চার মিটার গভীর হতে হয়।

২০১১ সালের আদমসুমারী অনুযায়ী, এই শহরে বসবাস করেন প্রায় ১৭০০ মানুষ। মরুভূমি এলাকা, কাজেই দিনের বেলা প্রচুর গরম থাকে কুবার পেডিতে। রাতের বেলা তুলনামূলক আবহাওয়া অনেক আরামদায়ক। তবে মাটির নিচে হওয়ায় এই শহরের দোকান, বাড়ি সবটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে তৈরি করতে হয়। তাই গ্রীষ্মকালে, এখানকার বাসিন্দাদের এসি বা কুলারেরও প্রয়োজন না হলেও শীতকালে তাদের হিটারের প্রয়োজন হয়।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *