দীপাবলি মানেই আলো আর বাজির উৎসব। এইসময় গোটা দেশ ঢেকে যায় আলোর চাদরে। সেইসাথে থাকে বাজির আলোর রোশনাই। মোমবাতি-প্রদীপ আর টুনি বাল্বের আলোয় মুড়ে ফেলার পাশাপাশি এই সময় হরেক রকম বাজি ফাটিয়ে আনন্দ উদযাপনে মেতে ওঠেন সকলে। এক কথায় বাজি ছাড়া অসম্পূর্ণ দিওয়ালি। তাই আট থেকে আশি সকলেই এই সময় বিভিন্ন ধরনের বাজি পোড়ানোর আনন্দে মেতে ওঠেন।
ফুলঝুরি থেকে রং মশাল, তুবড়ি চরকি থেকে চকলেট বোম বাজারে এখন হরেক রকম বাজির মেলা। কিন্তু ভারতের একাধিক রাজ্যে এখন দূষণসীমা মাত্রা ছাড়িয়েছে। তাই পরিবেশ দূষণ কমাতেই এখন আমাদের দেশের একাধিক রাজ্যে রাশ টানা হয়েছে বাজি পোড়ানোয়। তবে জানলে অবাক হবেন আমাদের দেশে এমন একটি রাজ্য রয়েছে যেখানকার মানুষ দীপাবলীর সময়ও বাজি পোড়ান না।
আমাদের দেশের তামিলনাড়ুর ইরোড জেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এমনই ৭ টি গ্রাম। এই গ্রামবাসীরা দীর্ঘ ২২ বছর ধরেই এই নিয়ম পালন করছেন । আর তার পিছনে রয়েছে এক অবাক করা কারণ। আসলে পরিবেশের কথা ভেবেই বাজি সম্পূর্ণভাবে বাজি বর্জন করেছেন এই গ্রাবাসীরা। যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
দীপাবলি আর কালীপুজোর সময় যখন বাইরে বেরোলেই বারুদের গন্ধ আর আতশবাজির শব্দে টেকা দায় হয়ে পড়ে। সেখানে তখন গোটা দেশবাসীকে নতুন করে পথ দেখাচ্ছে তামিলনাড়ুর ইরোড জেলার এই ৭ গ্রামের বাসিন্দারা। এই গ্রামগুলির খুব কাছেই রয়েছে অভয়ারণ্য। পাখিদের এই অভয়ারণ্যটি ভাদামুগাম ভেলোডের আশেপাশে অবস্থিত। এই অভয়ারণ্যে স্থানীয় এবং পরিযায়ী পাখিদের কথা চিন্তা করেই এখানকার মানুষরা আতশবাজি ফাটান না।
শুধুমাত্র আলো জ্বালিয়েই দীপাবলি উদযাপন করেন তারা। কারণ এই অভয়ারণ্যের পাখিরা অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই এই অভয়ারণ্যে ডিম পাড়তে আসে। আর এই সময়ের মধ্যেই পড়ে দীপাবলি। এই সময় যাতে পাখিদের কোনও ক্ষতি না হয় তাই এই কড়া নিয়ম মেনে চলেন গ্রামবাসীর। গত ২২ বছর ধরে এই ৭ গ্রামের ৯০০টির বেশি পরিবার এই নিয়ম মেনে চলেছেন।
সেলাপ্পাম্পালিয়াম, ভাদামুগাম ভেলোদ, সেমান্দামপালায়াম, কারুক্কানকাট্টু ভালাসু, পুঙ্গামপাদিসহ আরও দুটি গ্রামের বাসিন্দারা দীপাবলিকে সত্যিই আলোর উৎসবে পরিণত করেছেন। পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিতে আর পুরোনো ঐতিহ্য মেনে, দিওয়ালির সময় এই গ্রামবাসীরা সন্তানদের জন্য নতুন জামা কাপড় কিনে দেন। আর বাজির পরিবর্তে এই গ্রামের বাচ্চারা প্রত্যেক বছর শুধুই ফুল পোড়ায়।
Leave a Reply