বুড়িমার চকলেট বোম

প্রত্যেক পুজো আর উৎসব ঘিরে থাকে আলাদা আলাদা বিশেষত্ব। তেমনই কালীপুজো মানেই আলোর রোশনাই-এর সাথে হরেক রকম বাজির সমাহার। আর বাজির কথা উঠলেই ৯০ দশকের ছেলে মেয়েদের মনে পড়ে যায়, একটাই নাম তা হল বুড়িমার চকলেট বোম। যদিও এখন পরিবেশ দূষণের কড়াকড়িতে পুরোপুরি নিষিদ্ধ এই চকলেট বোম জাতীয় শব্দবাজি। কিন্তু অনেকেই জানেন না কে এই বুড়িমা? বাজির এমন নামকরণের আসল কারণই বা কি? দেখে নিন বিখ্যাত এই বাজি আবিষ্কারের অজানা কাহিনী।

শূন্য থেকে শুরু করে সফল এই মহিলা ব্যবসায়ী অর্থাৎ সকলের প্রিয় বুড়িমার আসল নাম অন্নপূর্ণা দাস। তাঁর বাজি তৈরির কাহিনী আজও সমান প্রাসঙ্গিক। আদতে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা অন্নপূর্ণা দেবী দেশভাগের পর চলে এসেছিলেন তখনকার পশ্চিম দিনাজপুর জেলার ধলদিঘীতে।

স্বামীহারা অন্নপূর্ণা দেবীর কাঁধে তখন তিন মেয়ে এবং এক ছেলের দায়িত্ব। তাই পেটের দায়ে সে সময় ধলদিঘীর বাজারে সবজি বিক্রি করতেন তিনি। পরে ধলদিঘী থেকে গঙ্গারামপুরে এসে নিজের বিড়ির ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এই ভাবেই সংসার চালানোর পাশাপাশি মেয়ের বিয়েও দিয়েছিলেন বেলুড়ে। পরে বেলুড়ের প্যারীমোহন মুখার্জি স্ট্রিটে একটা দোকান-সহ বাড়ি কেনেন তিনি। সেই সূত্রেই মেয়ে জামাইয়ের কাছে এসে হরকুসুম গাঙ্গুলির কাছ থেকে শেখেন আলতা-সিঁদুর তৈরীর কাজ। এইভাবেই বিড়ির সাথে যুক্ত হয় আলতা, সিঁদুরের ব্যবসা।

এরপর এক কালীপুজোয় বাজির ব্যবসা করার ইচ্ছা হল তাঁর। তবে প্রথমদিকে লোকের দোকান থেকে বাজি কিনেই বিক্রিই করতেন তিনি। কিন্তু তাঁর কাছে লাইসেন্স না থাকায় দোকান ভেঙে দিয়েছিল পুলিশ। তবে পরে তিনি বুঝতে পারেন বাজি কিনে বিক্রি করার থেকে অনেক বেশি লাভ হবে তৈরি করতে পারলে। তখন বাঁকুড়ার আকবর আলির থেকে শিখেছিলেন বাজি তৈরির কৌশল।

বানান বাজি তৈরীর কারখানাও। তবে তাঁর জন্য আইনি ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে তাঁকে। তবে হার মানতে শেখেননি বুড়িমা। তাই কিছু দিনের মধ্যেই জোগাড় করে ফেলেছিলেন বাজি বিক্রির লাইসেন্স। ততদিনে ক্রেতাদের কাছেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন বুড়িমা। তাই নিজের নতুন নামেই শুরু করেন ব্র্যান্ড। আর তাতেই কেল্লাফতে ! সেই থেকে রাতারাতি ‘বুড়িমা’ ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে বাজির বাজারে। তবে সবচেয়ে বেশি নাম করে ‘বুড়িমার চকলেট বোম’।

১৯৯৫ সালের ৩ জুন মৃত্যু হয় বুড়িমার। পরে তাঁর নাতিরা হাল ধরেন ব্যবসার। যদিও শব্দ দূষণ রুখতে শব্দবাজি পুরপুরি নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে কালী পুজো আসলেই এখনও মনে পরে যায় বুড়িমার চকলেট বোমের কথা।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *