মুকেশ আম্বানি

বিশ্ব বিখ্যাত কোটিপতিদের তালিকায় জ্বলজ্বল করছে মুকেশ আম্বানির নাম। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ  ৯০.৬ বিলিয়ন ডলার। তবে তিনি কিন্তু শুরুতেই বাবার তৈরি ব্যবসা হাতে পাননি। পারিবারিক বিভাজনের পর নিজের ব্যবসায়িক বুদ্ধি আর রক্ত জল করা পরিশ্রমেই আজ এই বিরাট সম্পত্তির মালিক তিনি। প্রথমদিকে মুকেশ আম্বানি তাঁর বাবা ধীরুভাই আম্বানির সাথেই কাজ শুরু করেছিলেন। ধীরুভাই আম্বানি তাঁর  ব্যবসা শুরু করেছিলেন সুতো এবং মশলার ব্যবসা দিয়ে। পরে তিনি টেক্সটাইল এবং কাপড় তৈরির জন্য রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিস প্রতিষ্ঠা করেন। মুকেশ আম্বানি ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল টেকনোলজি (ইউডিসিটি) থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিই ডিগ্রি লাভ করেন। মুকেশ পরবর্তীতে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ সম্পন্ন করেন।

দুই ভাইয়ের বিবাদ:

পরবর্তীতে ১৯৯০ সালের দিকে তাদের কোম্পানি পেট্রোকেমিক্যাল এবং পরিশোধনের দিকে মোড় নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান  রয়েছে মুকেশ আম্বানির।  ২০০০ সালে খুচরো এবং টেলিকম ব্যবসার প্রবেশ  ঘটে। কিন্তু ২০০২ সালে ধীরু আম্বানির মৃত্যুর পর মুহূর্তের মধ্যে ওলট পালট হয়ে যায় তাদের পারিবারিক সম্পর্ক। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর সম্পত্তির কোনো উইল করে যাননি। কারণ তিনি চেয়েছিলেন তার দুই ছেলে মুকেশ আর অনিল তাঁর  ব্যবসা একসাথে সামলাক।  কিন্তু ততদিনে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল  দুই ভাইয়ের।

তাই তারা  দুই ভাই তাদের ব্যবসা আলাদা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে যে ভাই, যে ধরনের ব্যবসা সামলাচ্ছিলেন তাদের সেই ব্যবসাই পরিচালনা করার কথা ছিল।  কিন্তু তাতে রাজি হলেন না অনিল।  দীর্ঘদিন  সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ  চলার পর শেষপর্যন্ত তাদের  মা কোকিলাবেন দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দেন।  ২০০৫ সালেপৈতৃক সম্পত্তি দুই ভাইয়ের মধ্যে ভাগ হওয়ার পর মুকেশ আম্বানির ভাগে আসে পেট্রোকেমিক্যাল, টেক্সটাইল, রিফাইনারি তেল এবং গ্যাসের ব্যবসা। অপরদিকে অনিল আম্বানির ভাগে যায়  টেলিকম (যদিও এটি মুকেশের আবিষ্কার), জ্বালানি, পরিকাঠামো এবং অর্থের ব্যবসা।

২০০৮ সাল নাগাদ, অনিল আম্বানি বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু দ্রুত লাভবান হওয়ার জন্য তাঁর কিছু ভুল  সিদ্ধান্ত, বিপুল পরিমাণ ঋণ,  ধারাবাহিকতা এবং আত্ম-সচেতনতার অভাবই পরবর্তীতে  তার দুঃখজনক পতনের কারণ হয়ে ওঠে। প্রচুর পরিমাণ ঋণে  জর্জরিত অনিল অম্বানিকে ২০১৯ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় হয় তাকে জেলে যেতে হবে অথবা সুদের সাথে পুরো ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে ততদিনে ফুলেফেঁপে ওঠে মুকেশ আম্বানির ব্যাবসা। তিনিই এই সময়ে দাদার  সাজা এড়াতে পুরো টাকা দিয়ে দিয়েছিলেন। আজ অনিল আম্বানির সম্পত্তি শুন্য।

মুকেশ আম্বানির উত্তরসূরি :

তবে বাবার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিবার অটুট রাখতে আগে ভাগেই তিন সন্তানের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুকেশ আম্বানি। তিনি জিও টেলিকমের চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব তুলে দেবেন  বড় ছেলে আকাশ আম্বানির হাতে। মেয়ে ঈশা আম্বানিকে  রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের রিটেল ইউনিটের চেয়ারপার্সন করবেন। আর ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানির হাতে থাকবে তেল ও রাসায়নিক ব্যবসার দায়িত্ব।

দুই ভাইয়ের পার্থক্য:

তাঁরা দুই ভাই-ই বাবা  ধীরুভাই আম্বানির কাছ থেকে একই ধরণের প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা পেয়েছেন। তবুও, তাঁদের মধ্যে একজন সফলতার মূল মন্ত্রটি বুঝতেই পারেননি। অনিল আম্বানি আর মুকেশ আম্বানির মধ্যে মূল পার্থক্য হলো তাদের চিন্তাধারায়! তাই  মুকেশ আম্বানিকে তাঁর ব্যবসায়িক দক্ষতার জন্য তাঁকে  ধীরুভাই আম্বানির যোগ্য উত্তরসূরি  হিসাবে বিবেচনা করা হয়।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *