মা কালী

মা কালী হলেন আদ্যাশক্তি। তন্ত্র শাস্ত্র মতে তিনি দশমহাবিদ্যার প্রধান দশজন দেবীর মধ্যে প্রথম। বাংলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালি বাঙালি হিন্দু সমাজে কারও  কাছে একেবারে ঘরের মেয়ে শ্যামা, আবার কখনও  প্রচন্ড ভয়ংকর মাতৃ মূর্তি। তবে অন্যান্য দেবদেবীদের তুলনায় মা কালীর পুজো করার নিয়ম বিধি কিন্তু বেশ কঠিন।

তাই সামান্য ভুল ত্রুটিতেই কিন্তু রুষ্ট  হতে পারেন মা। তাই  সে কথা মাথায় রেখেই আমাবস্যার পুণ্য  তিথিতে সমস্ত নিয়ম মেনে সারা রাত জেগে মায়ের পুজো করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হোম যজ্ঞের পাশাপাশি বলি দেওয়ারও নীতি প্রচলিত রয়েছে। তবে কোনও একটি  রূপে নয়  রূপভেদে তিনি কোথাও দক্ষিণা কালী তো কোথাও শ্মশান  কালী, সিদ্ধি কালি, আবার কোথাও ভদ্রকালী, কিংবা  রক্ষা কালী নামে পরিচিত।

দক্ষিণা কালী : বাংলায় সব দেবী সবচেয়ে বেশি পূজিত হন দক্ষিণাকালী রূপে। অনেকের কাছে তিনিই শ্যামা কালী রূপে পূজিত হন। নীল বর্ণের দক্ষিণা কালী, ত্রিনয়নী মুক্তকেশী এবং গলায় মুন্ডমালা। চার হাতের মধ্যে এক হাতে নরমুন্ড এবং আর একহাতে খড়্গ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন দেবী দক্ষিণা কালী।

শ্মশান কালী: শ্মশান কালীকে কখনওই বাড়িতে পুজো করা যায় না। মূলত ডাকাতরাই শ্মশান কালীর পুজো করে। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাসেও এই শ্মশানকালীর উল্লেখ পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে এই শ্মশান কালীর পুজো করা হয়।

সিদ্ধকালী: সাধারণত বাড়িতে কখনও মায়ের এই সিদ্ধকালী রূপের পুজো করা হয় না। তাঁকে ভুবনেশ্বরী নামেও ডাকা হয়। সাধকরাই মায়ের এই রূপের পুজো করে থাকেন। সিদ্ধ কালীর সারা শরীর গয়নায় মোড়া থাকে। দেবীর ডান পা শিবের বুকে থাকে এবং বাম পা থাকে শিবের দুই পায়ের মাঝখানে। তিনি অমৃত পানে সন্তুষ্ট থাকেন।

 

ফলহারিণী কালী: প্রত্যেক বছর কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে মা কালীর পুজো হয় সম্পূর্ণ ফল দিয়ে। তাই এই দিন মাকে ফল দিয়ে আবৃত করে রাখা হয়। বাড়িতে শান্তি বজায় রাখতে অনেকেই এই আমাবস্যার দিন ফল দিয়ে কৌশিকীমায়ের এই রূপের পুজো করে থাকেন।

মহাকালী: মহাকালী হলেন মহাকালের অর্ধাঙ্গিনী। তাঁর দশটি হাত এবং দশটি পা থাকে। মায়ের এই রূপে তাঁর দশ হাতেই অস্ত্র থাকে । মহাকালীর এই প্রতিমায় শিবের কোন অস্তিত্ব নেই।  মূলত ভূত চতুর্দশীর দুপুরেই এই মহাকালীর সাধনা করা হয়। তবে কোনো গৃহস্থ বাড়িতে মহাকালীর পূজা করা হয় না।

কাম্যা কালী: মায়ের এই রূপের পুজো তখনই হয় যখন কেউ বিশেষ কামনা বাসনা নিয়ে মায়ের পুজো করেন। দেবীর এই রূপের পুজোর নিয়ম দক্ষিণা কালীর পুজোর মতোই। অষ্টমী চতুর্থী অমাবস্যা এবং পূর্ণিমা তিথিতে এই কাম্যা কালীর পূজা করা হয়।

গুহ্যকালী : শাস্ত্রে মায়ের এই রূপকে ভয়ঙ্করী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। গুহ্যকালীর গলায় থাকে ৫০ টি নরমুন্ডের হার। দেবীর  কানে থাকে শবদেহের আকারের অলংকার। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামে দেবী এই রূপে পূজিত হন।

ভদ্রকালী: যে কোনো বারোয়ারি মন্দিরে মা এই রূপে ধরা দেন। মায়ের এইরূপে ভদ্র শব্দটি কল্যাণ অর্থে এবং কালি শব্দটি জীবনের শেষ সময় বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। তবে মায়ের এই রূপটিও কিন্তু দারুন  ভয়ংকর।

চামুন্ডা কালী: দেবী চামুন্ডা হলেন আদি শক্তি। চন্ড এবং মুন্ড এই দুই অসুরকে বধ করেই তিনি চামুন্ডা রূপে পুজিত হন। দুর্গা,পার্বতী, চামুণ্ডা,কালী ও চণ্ডী হল মায়ের একই অঙ্গে ভিন্ন রূপ।

শ্রী কালী : দেবী দুর্গার একটি রূপ শ্রী কালী। কথিত আছে এই রূপেই তিনি দারুক নামের এক অসুরকে বধ করেছিলেন। পুরাণ মতে কালীর এই রূপ মহাদেবের কণ্ঠে প্রবেশ করে তাঁর কণ্ঠের বিষে কৃষ্ণবর্ণা হন। পরবর্তীকালে মহাদেব শিশু রূপে স্তন্যপান করে দেবীর শরীরের সেই বিষ গ্রহণ করেছিলেন।

রক্ষাকালী: হিন্দু শাস্ত্র মতে লোকালয়কে রক্ষার জন্য ইমায়ের এই রূপের পুজো করা হয়। দেবী দুর্গার মতই এই দেবীর বাহন সিংহ। তবে রক্ষাকালী হলেন দক্ষিণাকালীরই অন্য রূপ।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *