কালীঘাট মন্দিরের অজানা কাহিনী

কলকাতার কালীঘাটের মা কালীর দর্শন পেতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য ভক্ত। দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ৫১ টি শক্তিপীঠের মধ্যে কালীঘাট হল  ৪১ তম সতীপীঠ। ২০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন এই মন্দির ঘিরে রয়েছে একাধিক প্রচলিত ইতিহাস, যা নিয়ে মানুষের কৌতুহলেরও শেষ নেই। প্রথমেই জেনে  নেওয়া যাক কালীঘাট কেন সতীপীঠ বলে পরিচিত তার অজানা ইতিহাস।

সতীর বাবা দক্ষ মহাদেবকে অপমান করায় সতী যখন প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন তখন তাঁর মৃত শরীর নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেছিলেন মহাদেব। তাই পৃথিবীকে ধংসের হাত থেকে বাঁচাতে নিজের সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবী সতীর দেহ খন্ড বিখন্ড করে দিয়েছিলেন ভগবান বিষ্ণু। সেই দেহ খন্ড যেখানেই পরেছিল সেখানেই একটি করে শক্তি পিঠ তৈরী হয়। ঠিক এইভাবেই সৃষ্টি হয়েছিল কলকাতার কালীঘাট মন্দিরের।কথিত আছে এই মন্দিরের স্থলেই দেবীর ডান পায়ের আঙুল পড়েছিল।

কালীঘাটের এই মন্দিরে দেবী মূর্তির নিম্নভাগ দেখা যায় না। মন্দিরের মধ্যেই জাগ্রত দেবীর অঙ্গ রাখা রয়েছে। ভক্তদের বিশ্বাস একটি সিন্দুকে এখনও সতীর পাথর হয়ে যাওয়া অঙ্গটি রাখা আছে। যদিও তা কারও সামনে বার করা হয় না। কালীঘাটের মায়ের বিগ্রহটি কষ্টিপাথরে তৈরি। মায়ের  জিভ, দাঁত, মুকুট, হাত ও মুণ্ডমালা সোনা ও রুপোর তৈরী।

প্রত্যেক  বছর স্নান যাত্রার দিন মন্দিরের দরজা বন্ধ রেখে, চোখ বাঁধা অবস্থায় মূর্তিটিকে স্নান করানো হয়। ২০১৬ সালে প্রায় ৪০ বছর পর দেবীর জিভ পাল্টানো হয়েছিল। বর্তমান জিভটি প্রায় ২ কিলো ১৯১ গ্রাম রুপোর ওপর ৫৫৮ গ্রাম সোনা দিয়ে মোড়া। পাল্টে দেওয়া হয়েছে  দেবীর খড়গটিও। এখন মায়ের হাতে রয়েছে দু কেজি ওজনের সোনার খড়গ।

কালীঘাট মন্দির তৈরির অজানা কাহিনী:

লোকমুখে শোনা যায়, সন্তোষ রায়চৌধুরী হুগলি নদীতে ভ্রমণকালে একদিন অলৌকিক আলো দেখে আকৃষ্ট হন এবং এগিয়ে গিয়ে কালীর মুখের আকারের পাথরের টুকরো আর পায়ের আঙুলের আকারের পাথর খুঁজে পান। সেটি তুলে নিয়ে তিনি একটি ছোট কুঁড়েঘরের মতো মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে কালীঘাট মন্দির নাম পরিচিত। মন্দিরটি তিনি বানানো শুরু করেছিলেন ১৭৯৯ সালে তবে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর নাতি রাজীব লোচন রায়চৌধুরী ১৮০৯ সালে মন্দির নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেন।

লোকমুখে শোনা যায় বাংলার এই মন্দিরেই সবচেয়ে বেশি তন্ত্র সাধনা করা হয়। আগে এই মন্দিরের মায়ের চরণে নাকি নিয়মিত বলিও দেওয়া হতো। তবে বর্তমানে বিশেষ বিশেষ দিনেই এই বলি দেওয়া হয়। বর্তমান মন্দির টি-ষষ্ঠী তলা, নাট মন্দির, জোড় বাংলা, হারকাঠ তলা ,রাধা কৃষ্ণ মন্দির এবং কুন্ড পুকুর এই ৬ টি ভাগে বিভক্ত।

কালীপুজোর দিন কালীঘাটে দেবীকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করা হয়। এইদিন এখানে কালীপুজো সন্ধ্যার সময়ই শেষ হয়ে যায়। এটাই কালীঘাটের নিয়ম। কালীপুজোয় ৬ রকম ভাজার সঙ্গে থাকে, ঘিয়ের পোলাও, ঘি ,ডাল, শুক্তো, মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস ও চালের পায়েস। তবে রাতে মা লক্ষ্মীকে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয় কালীঘাটে। তাতে থাকে লুচি, বেগুনভাজা, আলু ভাজা, দুধ, ছানার সন্দেশ আর রাজভোগ ।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *