ট্রেনের টয়লেট

আমাদের দেশের কোণায় কোণায় শাখা -প্রশাখার মতো ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় রেল নেটওয়ার্ক দূর কে করেছে কাছে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ভারতের যে কোনো  প্রান্তে পৌঁছানোর জন্য সকলেই চোখ বুজে ভরসা করতে পারেন একমাত্র এই গণপরিবহন ব্যবস্থার উপরেই। তাই এমনি এমনিই ভারতীয় রেলকে ভারতের লাইফ লাইন বলা হয় না। ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের কাছে রেল যাত্রা বরাবরই ভীষণ আরামদায়ক।

যাত্রীদের সুবিধার্থে প্রতিনিয়ত ভারতীয় রেলকে ঢেলে সাজাচ্ছেন রেল কর্তৃপক্ষ। দূরের যাত্রীদের কথা ভেবেই দূরপাল্লার ট্রেনে ইংরেজ আমল থেকেই  বাথরুমের পরিষেবা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমুল পাল্টে গিয়েছে ভারতীয় রেলের এই বিশেষ পরিষেবাও। তাই যারা অনেকদিন ধরেই দূরপাল্লার ট্রেনে যাতায়াত করছেন তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করে থাকবেন আগেকার ট্রেনে বাথরুমের নিচের অংশ খোলা থাকতো। ফলে যাত্রীরা ট্রেনে মলমূত্র ত্যাগ করলে তা গিয়ে পড়তো রেলের পাটির ওপরেই।

কারণ আগে ট্রেনে ওপেন ডিসচার্জ সিস্টেম ব্যবহার করা হতো। তাই টয়লেটে গেলে মলমূত্র রেলের পাটিতেই পড়ে যেত। বিশেষ করে ট্রেন যখন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতো তখনই ময়লা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়তো পাটির ওপর। তাই লোকজনকে ট্রেন স্টেশনে দাঁড়ানোর সময় টয়লেট ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হতো.

কিন্তু এটা তো কোনো  সমাধান নয়। তাছাড়া এতে  পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি রেলের পাটির লোহায় জং ধরে ক্ষতি হচ্ছিল রেলেরও।  তাছাড়া খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করা মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।  তাই এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য প্রথমবার ভারতীয় রেল নিয়ে আসে কন্ট্রোল ডিসচার্জ সিস্টেম। এরফলে ট্রেনে ৩০ স্পিড উঠলেই সিস্টেমের সমস্ত মল মূত্র খালি হয়ে যেত। এর ফলে স্টেশন পরিষ্কার হয়ে গেলেও সমস্যার সুরাহা হয়নি তখনও। কারণ তখনও মলমূত্র থেকে যেত রেলের পাটিতে।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতীয় রেল ডিআরডিওর সহযোগিতায় নিয়ে আসে বায়ো টয়লেট। এরফলে এখন ট্রেনের  যাত্রীদের বর্জ্য একটি চেম্বারে সংরক্ষণ করা হয়। এই চেম্বারে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে তা  মানুষের বর্জ্য ভেঙে জলে রূপান্তরিত করে। এই  বায়ো টয়লেট তৈরি হওয়ার পর থেকেই বর্জ্যের  শক্ত অংশ কোন গন্ধ ছাড়াই আলাদা হয়ে চেম্বারে যায় এবং সেখান থেকে বেরিয়ে ডাম্পিং সেকশনে গিয়ে জড়ো হয়। জানলে অবাক হবেন এই নোংরা বর্জ্য থেকে যে জল উৎপন্ন হয় তা পুনরায় ব্যবহার করা হয়। এইভাবেই খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ আটকাতে এক দারুণ সমাধান বের করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ভারতীয় রেল।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *