সনাতন হিন্দুধর্ম মতে আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত শক্তির আধার হলেন দেবাধিদেব মহাদেব। সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়য়ের দেবতা বাবা ভোলানাথ আমাদের দেশে একাধিক রূপে পূজিত হন। সর্ব শক্তিমান শিব কোথাও কোথাও নীলকন্ঠ আবার কোথাও শিবশম্ভূ নামে পরিচিত তিনি। ভারতের নানা প্রান্তে বছর ভর পূজিত হন ভোলা মহেশ্বর। তবে মাথায় জটা, হাতে-গলায় রুদ্রাক্ষ এবং গলায় জড়িয়ে থাকা সাপ। আর কপালে ত্রিনয়ন। মহাদেবকে এই রূপেই দেখে অভ্যস্ত সবাই। ভোলানাথ একদিকে যেমন শান্ত শিষ্ট তেমনই তাঁর রুদ্ররূপে কাঁপে গোটা সৃষ্টি। মহাদেবের ত্রিনয়নে ভেসে ওঠে ত্রিভুবনের কার্যকলাপ। কিন্তু অনেকেই জানেন না মহাদেবের এই ত্রিনয়নের রহস্য!
মহাদেবের ত্রিনয়ন কিসের প্রতীক?
পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায় মহাদেবের ত্রিনয়ন আসলে তাঁর জ্ঞানচক্ষু। ত্রিকালদর্শীর এই দিব্য দৃষ্টি থেকে বাদ পড়ে না কোনো কিছুই। এই দিব্য চক্ষু দিয়েই তিন লোকের গতিবিধির উপর নজর রাখেন মহেশ্বর। মহাদেবের তৃতীয় নয়ন তাঁর সমস্ত শক্তির আধার। কথিত আছে শিব তাঁর এই ত্রিনয়ন খুললেই ছাই হয়ে যাবে গোটা বিশ্বব্রহ্মান্ড।
ত্রিনয়ন সৃষ্টির রহস্য নিয়ে পৌরাণিক কাহিনী
শিবের এই দিব্যদৃষ্টি সৃষ্টির রহস্য নিয়ে একাধিক পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে। এমনই একটি প্রচলিত কাহিনি থেকে জানান যায়, একদিন হঠাৎ করেই ধ্যান মগ্ন শিবের চোখ দু’হাত দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলেন পার্বতী। এরফলে নিমেষের মধ্যে গোটা পৃথিবীতে নেমে আসে ঘর অন্ধকার। এই অন্ধকার দূর করতেই সৃষ্টি হয় মহাদেবের ত্রিনয়ন। পরে দেবী পার্বতী হাত সরিয়ে নিলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে পৃথিবী। বলা হয় শিবের একটি চোখ সূর্যের প্রতীক তো আর একটি চোখ চন্দ্রের প্রতীক।
দ্বিতীয় পৌরাণিক কথা
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, সতীর বাবা প্রজাপতি দক্ষ একসময় যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে সতীর সামনেই তিনি চরম অপমান করেছিলেন শিবকে। স্বামীর সেই অপমানে প্রাণত্যাগ করেছিলেন সতী। এই ঘটনায় মহাদেব এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে বছরের পর বছর ধরে তিনি বনে গিয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। পরে হিমালয়পুত্রী হয়ে আবার জন্মান সতী । কিন্তু ধ্যান মগ্ন শিবের জাগতিক কোনও বিষয়েই আগ্রহ ছিল না। অনেক চেষ্টা করেও দেবতারা তাঁর ধ্যান ভাঙাতে পারছিলেন না। তখন হর-গৌরীর মিলন ঘটাতে কামদেবের সাহায্য নেন দেবতারা।
ধ্যানভঙ্গ করতে কামদেব আম গাছের আড়াল থেকে শিবের হৃদয়ে পুষ্প বাণ চালান। তা শিবের হৃদয়ে গিয়ে লাগতেই ধ্যান ভাঙে শিবের। তখন প্রচন্ড ক্রোধে ত্রিনয়ন দিয়েই কামদেবকে ভষ্ম করে দেন দেবাধিদেব মহাদেব। তবে শিবের ধ্যান ভাঙায় খুশি হন দেবতারা। তবে কামদেব নিজের জীবন উৎসর্গ করায় তাঁর স্ত্রী স্বামীর পুনর্জীবন প্রার্থনা করেন। তখন শিব জানান, দ্রাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের পুত্র হিসেবে জন্ম নেবেন কামদেব।
Leave a Reply