নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় একজন অভিনেতা হলেন অলোকেশ ঘোষ। ‘লোফার’ সিনেমায় তাঁর অভিনয় আজও চোখে লেগে রয়েছে বাংলা সিনেমা প্রেমীদের। জনপ্রিয় পরিচালক তথা প্রযোজক দেবেশ ঘোষের ছেলে তিনি। তবে বাবার পরিচয়ে নয়, নিজের প্রতিভার জোরেই নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন তিনি। একটা সময় টলিউড সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি। তবে অভিনয় জীবনে তাঁর এই সাফল্য কিন্তু রাতারাতি আসেনি।
অভিনেতা হিসাবে কেরিয়ার শুরুর আগে বেশ কিছুদিন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছিলেন লোকেশ।তিনি যখন ক্লাস নাইনে পড়তেন তখন তার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিল। তখন তিনি তার বাবাকে বলেছিলেন যে তিনি যা করবেন নিজের দমে করবেন। কথাটা হয়তো তার বাবার ইগোতে লেগেছিল। এপ্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারের অভিনেতা জানিয়েছিলেন তাঁর বাবা টলিউডের সমস্ত পরিচালক প্রযোজকদের সবাইকে বলে রেখেছিলেন তাকে যেন কাজ না দেওয়া হয়।
পরিস্থিতির চাপে একটা সময় লরির দালালিও পর্যন্ত করেছিলেন লোকেশ। করেছিলেন হোটেল ব্যবসাও। তবে অভিনয় জগতে আজ পর্যন্ত তাঁর যেটুকুন নাম হয়েছে তার জন্য তিনি সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়েছেন বাংলা সিনেমার স্বনামধন্য পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীকে। তাঁরই পরিচালিত ‘নাচ নাগিনী সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেছিলেন লোকেশ। একই সময়ে ‘মুখ্যমন্ত্রী’র সিনেমায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় করার কথা থাকলেও সেসময় তাঁর চিকেন পক্স হওয়ার কারণে ওই সিনেমাতেও সুযোগ পেয়েছিলেন লোকেশ।
এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি অভিনেতাকে। ৯০ দশকের শেষ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি উপহার দিয়েছেন একের পর এক সুপারহিট বাংলা সিনেমা। অঞ্জন চৌধুরীর তাঁকে খুবই পছন্দ করতেন। তাই বড় মেয়ে তথা অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরীর সাথে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়েও দিয়েছিলেন লোকেশের। কিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি। যার জন্য দায়ী ছিলেন অভিনেতা নিজেই। টলিপাড়া সূত্রে খবর তাঁর মদ্যপানের অভ্যাসের কারণেই তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন চুমকি চৌধুরী। তাঁদের এক মেয়েও রয়েছে।
তবে বাংলা সিনেমার এই হিরোর জীবনটা জীবনের ট্রাজেদি শেষ হয়নি এখনও। ২০০৪ সালে মারা যান তাঁর বাবা। এরপর তাঁর নিজের দিদি বাবার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির সবটাই হাতিয়ে নিয়েছিলেন। তাই বাবার সম্পত্তির কানা কড়িও পাননি লোকেশ। বাবার মৃত্যুর পর দীর্ঘ প্রায় চার বছর নিজেকে অভিনয় থেকে সরিয়ে রেখেছিলেন তিনি। পরে যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসেন তখন তিনি বুঝতে পারেন তাঁর পায়ের তলার জমি নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। ২০১৩ সালে তাঁকে শেষবার দেখা গিয়েছে ‘ভগবানের মাথায় হাত’ সিনেমায়।
তবে অভিনেতা নিজেই নিজেকে খামখেয়ালি মনে করেন। সেই কারণেই নাকি তাঁর জীবনে এসেছে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত। লোকেশের দাবি, যাঁদের তিনি বিশ্বাস করতেন তাঁরা মিষ্টি কথা বলে তাঁর পিছনে ছুরি মেরেছেন। তাঁর কেরিয়ারের ক্ষতির জন্য একজন পরিচালকের দিকেও আঙ্গুল তুলেছেন অভিনেতা। তবে খুব তাড়াতাড়ি তাঁর কিছু ছবি মুক্তি পাবে বলে জানা যাচ্ছে।
Leave a Reply