সবুজ বাজি

দুর্গাপুজোর রেশ কাটতেই বাঙালি মেতে উঠেছে কালীপুজো নিয়ে। আর কালী পুজো মানেই আলো আর বাজির উৎসব। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতেই এখন হুড়িয়ে বাজি বিক্রি হচ্ছে। তবে পরিবেশ দূষণ রুখতে এখন ডেসিবেল ধরে মাপা হয় বাজির শব্দ। পরিবেশের সুরক্ষার কথা ভেবেই বাজি পোড়ানোয় রাশ টেনেছে সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৮ সাল থেকেই জারি হয়েছে নতুন নিয়ম। তাই কালী পুজোতেও পোড়াতে হবে পরিবেশ বান্ধব বাজি। আদালতের নির্দেশ মানতেই এখন দোকান গুলিতে হিড়িক পড়েছে সবুজ বাজি  বা গ্রীন ক্র্যাকারস বিক্রির। কিন্তু সবুজ বাজি কিনতে গিয়ে কোনটা আসল আর কোনটা নকল  তা নিয়েই মানুষ এখন ধন্ধে পড়ে যায়।

অনেকেরই প্রশ্ন সবুজ বাজি  আসলে কি?

পরিবেশ বান্ধব আতসবাজিকেই বলা হয় সবুজ বাজি বা গ্রীন ক্র্যাকার। এই বাজিতে থাকে কম দূষণকারী কাঁচামাল। বিশেষজ্ঞদের মতে সাধারণ বাজির তুলনায় এই বাজিতে ৩০ শতাংশ কম দূষণ হয়। এই সবুজ বাজি ব্যবহার করলে  পরিবেশ যেমন কম দূষিত হবে তেমনি গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর প্রভাবও একটু কমবে। বাজারে বিক্রি হওয়া সবুজ বাজির তালিকায় রয়েছে ফুলঝুরি, চরকি,তুবড়ি, রং মশাল, রকেট কিংবা তারা বাজি।

 

কারা তৈরী করে এই বাজি?

সিআইএসআর-নিরি (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-র দীর্ঘ গবেষণার ফল এই সবুজ বাজি। এই বাজিতে বেরিয়াম যৌগ ব্যবহার করা হয় না। নিরির তৈরি এই ফর্মুলা অনুযায়ী যদি কেউ সঠিকভাবে গ্রীন ক্র্যাকার তৈরি করতে পারে তবেই তা পরিবেশবান্ধব বাজি হয়ে উঠবে। তবে যে কোন ধাতু দিয়ে এই পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরি করা যায় না। শুধুমাত্র যারা এই  বাজি তৈরির লাইসেন্স গ্রহণ করেছে তারাই এই ফর্মুলায় বাজি তৈরি করতে পারেন।

সাধারণ আতসবাজি ও সবুজ বাজির পার্থক্য

সবুজ বাজি ফাটালে ১১০ থেকে ১২৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ উৎপন্ন হয় না। কিন্তু এক একটি শব্দবাজিতে ১৬০ ডেসিবেল আওয়াজ হয়। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সাধারণ বাজির তুলনায় এই বাজিতে ৩০ শতাংশ দূষণ কম হয়। সাধারণ বাজিতে বেরিয়াম মোনোক্লোরাইড, বেরিয়াম নাইট্রেট ও বেরিয়াম ক্লোরেটের কারণে  সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ আর বায়ুদূষণ হয়।

তবে সবুজ বাজি ফাটালে ১১০ থেকে ১২৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ উৎপন্ন হয় না। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সাধারণ বাজির তুলনায় এই বাজিতে ৩০ শতাংশ দূষণ কম হয়।এই পরিবেশ বান্ধব বাজিগুলিতে হাঁপানি কিংবা শ্বাসকষ্টের মত সমস্যাও কম হয়।

সবুজ বাজির সমস্যা:

এই ধরনের বাজি  দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় না। তাই এই ধরনের বাজিতে অপেক্ষাকৃত নরম ধাতু ব্যবহার করা হয়। তাই এই ধাতুগুলোর স্থায়িত্ব কম। এই কারণে বাজি বিক্রেতাদের জন্য এই বাজি খুব একটা লাভজনক হয় না।

এই সবুজ বাজি কি সত্যিই দূষণমুক্ত?

সবুজ বাজি মূলত পরিবেশবান্ধব যা কম দূষণকারী কাঁচা মাল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এই বাজিতে যে একদম দূষণ হয় না সেটাও বলা যায় না। সবুজ বাজিরও ৩ টি ভাগ আছে।

সোয়াস (সেফ ওয়াটার রিলিজার): এই বাজিতে সালফার বা পটাশিয়াম নাইট্রেট থাকে না। এই বাজি ফাটালে জলীয় বাষ্প নির্গত হয়। এই বাজি ফাটালে বাতাসে ৩০ শতাংশ কম ধূলিকণা মেশে।

সফল (সেফ মিনিমাল অ্যালুমিনিয়াম): এতে কম মাত্রায় অ্যালুমিনিয়াম এবংবেশি ম্যাগনেশিয়াম থাকে। এই বাজিতেও শব্দদূষণ কম হয়।

স্টার (সেফ থার্মাইট ক্র্যাকার): এতে পটাশিয়াম নাইট্রেট বা সালফার থাকে না। কম কণা নির্গত করে এবং শব্দের তীব্রতাও কম।

লাইসেন্সিং:

সবাই এই সবুজ বাজি বিক্রি করতে পারেনা। কোন লাইসেন্স প্রাপ্ত দোকান ছাড়া এই ধরনের সবুজ বাজি সবাই বিক্রি করতে পারেনা। প্রথম দিকে ১০০০ টি  কারখানা এই বাজি বানাত কিন্তু এখন মাত্র ১৬০টি কারখানায় এই বাজি তৈরি হয়। বাকিরা নিষিদ্ধ রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে নিজেদের লাইসেন্স হারিয়েছে।

কী ভাবে বুঝবেন কোনটা সবুজ বাজি?

সবুজ বাজি কিনতে এমন দোকানে যেতে হবে যার কাছে গ্রিন ক্র্যাকার লাইসেন্স রয়েছে। ‘নিরি’ (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-র কিউআর কোড অন্যান্য বাজি থেকে সবুজ বাজিকে পৃথক করে। তবে অনেক ব্যবসায়ী ভুয়ো কিউআর কোড দেখিয়ে বাজি বিক্রি করছে। তাই কেনার সময় সতর্ক থাকতে হবে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *