ভারতবর্ষ মানেই মন্দিরের দেশ। আমাদের দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য হিন্দু দেব-দেবীর মন্দির। তবে ঠাকুর দেবতার মন্দির ছাড়াও ভারতে আজব মন্দিরের সংখ্যাও নেহাত কম নেই। ভারতের রাজস্থানে রাজস্থানের ছোটিলা গ্রামেই রয়েছে এমনই এক আজব মন্দির। যেখানে কোনো ঠাকুর দেবতা নয় ভক্তদের কাছে পুজিত হয় রয়্যাল এনফিল্ড ৩৫০সিসি-র একটি বুলেট।
সিমেন্টের বেদীর ওপর কাঁচের বাক্স, তার ভেতরের রাখা এই বুলেট। ভারতের বিখ্যাত ওই মন্দিরের নাম ‘বুলেট বাবার সিরনি’। প্রতিনিয়ত এই বাইকের সামনেই জনে জনে এসে মাথা নত করেন ভক্তরা। প্রণামী বক্সেও দান করেন দু’হাত ভরে। কিন্তু হঠাৎ বাইক কিভাবে দেবতা হয়ে উঠলো? এ যেন হার মানায় পাথর থেকে শিবলিঙ্গ হয়ে ওঠা ‘দেবতার জন্ম’ গল্পকেও। তাই এই বুলেট মন্দির তৈরীর নেপথ্যের কারণ কি? তা জানতে চান সকলেই।
আসলে ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছে হয়েছিল আজ থেকে ৩ দশক আগে, একটি গাড়ি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ১৯৮৮ সালে রাজস্থানে এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ওম সিং বান্না নামে এক ব্যক্তি। আসলে তিনিই ছিলেন এই বুলেট বাবার সিরনি মন্দিরের বাইকের মালিক। বিয়ের পরেই এই বুলেটটি কিনেছিলেন তিনি। এই শখের বুলেটটিকে তিনি তার স্ত্রীর থেকে কোনো অংশে কম ভালবাসতেন না। কিন্তু ১৯৮৮ সালের ২ ডিসেম্বর পালি থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই বাইকের চাকা স্কিড করে একটি গাছে ধাক্কা খায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওম সিং বান্নার।
সেদিন পুলিশ বান্নার দেহ এবং বাইক পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গেলেও পরের দিনের দৃশ্য দেখে সবাই অবাক। দেখা যায় পুলিশ স্টেশনে বাইকটি নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাইকটি সেই দুর্ঘটনাস্থলেই পাওয়া যায়। কিন্তু তারপর কি ঘটেছিল জানেন? শুনতে অবাক লাগলেও শেষে বাইকটি চেন দিয়ে বেঁধে রেখে, তেলের ট্যাঙ্ক খালি করে দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এইভাবে দিনের পর দিন থানায় বাইকটি বেঁধে রাখা হলেও রোজ সকালবেলায় তা খুঁজে পাওয়া যেত দুর্ঘটনাস্থল থেকেই। স্থানীয়রা অলৌকিক ঘটনা দাবি করে বলতে থাকেন এই বুলেটের মধ্যেই ওম সিং বেঁচে রয়েছেন। তাই সেই থেকেই দুর্ঘটনাস্থলেই মন্দির বানিয়ে এই বাইকটিকে দেবতাজ্ঞানে পুজো করা হয়।
স্থানীয়দের কাছে ওম বান্নার এই মন্দিরটি ‘বুলেট বাবা’র মন্দির নামে পরিচিত। ভারতের দর্শনীয় মন্দিরগুলির তালিকায় ১৭ নম্বরেই রয়েছে জোধপুরের এই ‘বুলেট বাবা’ মন্দির। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় এই মন্দিরে পুজো করা হয়। বুলেট বাবার পুজোর নিয়মও আলাদা। দর্শনের সময় বাজানো হয় এক প্রাচীন ঢাক। মন্দিরের পুরোহিত মন্ত্র উচ্চারণ করে বাইকটি পুজো করেন। আজব এই মন্দিরের পুজোর প্রসাদও আলাদা। মদ্যপ অবস্থাতেই গাড়ি দুর্ঘটনা বেশি হয় তাই এই মন্দিরে গাড়ির চালকরা ভোগ হিসাবে মদের বোতল দেন। প্রসাদ হিসাবেও পাওয়া যায় মদ।
স্থানীয়দের মধ্যে এই বুলেট বাবার মন্দিরকে ঘিরে নানা ধরনের কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, কাছাকাছি এলাকায় কোনও গাড়ি দুর্ঘটনার মুখে পড়লে তাঁদের প্রাণে বাঁচান এই ‘বুলেট বাবা’ই।
Leave a Reply