কালীপুজো মানেই বুড়িমার চকলেট বোম। আশি ও নব্বইয়ের দশকের ছেলে-মেয়েদের কাছে একসময় বুড়িমার বাজিই ছিল একমাত্র ভরসা। যদিও ডেসিবেল ধরে বাজির শব্দ মাপার যুগে সেই আনন্দ এখন অনেকটাই ফ্যাকাসে। একটা সময় বুড়িমা’র বাজিই রাজত্ব করতো বাজির বাজারে। কালীপুজো ছাড়াও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচেও মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হতো বুড়িমার চকলেট বোম।
সকলের কাছে বুড়িমা নামে পরিচিত হলেও তাঁর আসল নাম হল অন্নপূর্ণা দাস। শূন্য থেকে শুরু করে সাফল্যের স্বাদ পাওয়া সেই সফল মহিলা ব্যবসায়ীর কাহিনী আজও সমান প্রাসঙ্গিক। তাঁর জন্ম হয়েছিল বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায়। দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে সে সময় তিনি চলে এসেছিলেন তখনকার পশ্চিম দিনাজপুর জেলার ধলদিঘী সরকারি ক্যাম্পে। উদ্বাস্তুদের সেই ক্যাম্প থেকে একসময় তার স্থায়ী ঠিকানা হয় হওয়ার বেলুড়।
কিন্তু তখন তাঁর কাঁধে তিন মেয়ে এবং এক ছেলের দায়িত্ব। কারণ পূর্ব পাকিস্তানেই মৃত্যু হয়েছিল অন্নপূর্ণাদেবীর স্বামী সুরেন্দ্রনাথের। সালটা ছিল ১৯৪৮। সে সময় ধলদিঘীর বাজারে সবজি বিক্রি করেই সন্তানদের পেটের ভাত জোগাড় করতেন তিনি। পরবর্তীতে ধলদিঘী থেকে অন্নপূর্ণা দেবী চলে আসেন গঙ্গারামপুরে। পরে তিনি নিজের বিড়ির ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
তবে গঙ্গারামপুরেও বেশি দিন থাকেন নি। পরে বেলুড়ের প্যারীমোহন মুখার্জি স্ট্রিটে একটা দোকান-সহ বাড়ি কেনেন তিনি। সেখানেই বিড়ির সাথে যুক্ত হয় আলতা, সিঁদুরের ব্যবসা। তাছাড়াও বিশ্বকর্মা পুজায় ঘুড়ি, দোলে রং,আর কালীপুজোর বাজি বিক্রির ব্যবসাই শুরু করেন তিনি। তবে প্রথমদিকে লোকের দোকান থেকে বাজি কিনেই বিক্রিই করতেন তিনি।
তবে পরে তিনি বুঝতে পারেন বাজি কিনে বিক্রি করার থেকে অনেক বেশি লাভ হয় তৈরি করলে। তাই বাজি তৈরী করতে কারখানাও বানান। তবে তাঁর জন্য আইনি ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে তাঁকে। তবে হার মানতে শেখেননি বুড়িমা। তাই কিছু দিনের মধ্যেই জোগাড় করে ফেলেছিলেন বাজি বিক্রির লাইসেন্স। ততদিনে ক্রেতাদের কাছেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন বুড়িমা। তাই নিজের নতুন নামেই শুরু করেন ব্র্যান্ড। আর তাতেই কেল্লাফতে ! সেই থেকে রাতারাতি ‘বুড়িমা’ ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে বাজির বাজারে। তবে সবচেয়ে বেশি নাম করে ‘বুড়িমার চকলেট বোম’।
অন্নপূর্ণাদেবী বাজি তৈরি করা শিখেছিলেন আকবর আলি নামে বাঁকড়ার এক ব্যবসায়ীর থেকে। নিজের কারখানায় বিভিন্ন জায়গা থেকে এনেছিলেন কারিগরদের। ১৯৯৫ সালের ৩ জুন মৃত্যু হয় বুড়িমার। তার পরে একমাত্র পুত্র সুধীরকুমার দাস ব্যবসা চালান। এখনও চলছে ‘বুড়িমা ফায়ার ওয়ার্কস’। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পেরিয়ে এখন বুড়িমার প্রপৌত্র সামলাচ্ছে সেই ব্যবসা।
Leave a Reply