বিমান পরীক্ষা মুরগি

মুরগির নাম শুনলেই ভোজন রসিকদের চোখের সামনে প্রথমেই ভেসে ওঠে লোভনীয় সব খাবারদাবারের ছবি। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না শুধু রসনা তৃপ্তিতেই নয় প্লেন ওড়ানোর কাজেও প্রয়োজন হয় মুরগির। হ্যাঁ শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। একসময় প্লেনের ইঞ্জিন পরীক্ষা করার জন্য মুরগি ছুঁড়ে মারা হয়। বিষয়টি অনেকে শুনে থাকলেও হয়তো সেভাবে পাত্তা দেননি কোনোদিন। তাই কেউ হেসে উড়িয়ে দেন আবার কেউ বুঝে উঠতে পারেন না ঠিক কি কারণে এমন অদ্ভুত নিয়ম পালন করা হয়। তাই প্লেনে চিকেন গান থাকলেও অনেকেই এর ব্যবহার সম্পর্কে অবগত নন। আসুন তাহলে জানা যাক প্লেন ওড়াতে মুরগি কিভাবে সাহায্য করে এবং কি কারণেই বা প্লেনে এই চিকেন গান থাকে?

যখনই প্লেন আকাশে উড়তে শুরু করে তখন পাখিরাও প্লেনের দিকে ধেয়ে আসে। আর সরাসরি প্লেনের ইঞ্জিনের ফ্যানের সঙ্গে থাকা খায়। যার ফলে মাঝ আকাশে বিমানের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই বিমান এবং বিমানযাত্রীদের দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতেই উড়োজাহাজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলি মুরগি নিক্ষেপ করে এই পরীক্ষা করে। বিমানের ইঞ্জিনের সঙ্গে জীবন্ত পাখির আঘাত লাগলে কোনও ক্ষতি হবে কি না তা পরীক্ষা করার জন্য জীবন্ত পাখিকে ইঞ্জিনের দিকে ছুঁড়ে মারা হতো। এই প্রক্রিয়াকে “বার্ড ক্যানন” বলা হয়।

তবে বিমানের ইঞ্জিন পরীক্ষা করার জন্য এভাবে বহু জীবন্ত পাখির মৃত্যু হওয়ায় এর ঘোর বিরোধিতা করেন পরিবেশ প্রেমী এবং পশু-পাখিপ্রেমীরা। কারণ বিষয়টি একেবারেই  আইনসম্মত নয়। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে চিকেন গানের ব্যবহার শুরু হয়। ছোট কামানের মত এই চিকেন গান প্রথম আবিষ্কার করা হয় ১৯৫০ সালে। যার মধ্যে গুলির পরিবর্তে মৃত মুরগি রাখা হত। গুলি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে মৃত মুরগি জীবন্ত পাখির মত বিমানের ইঞ্জিনে আঘাত করে।

এইভাবে পরীক্ষা করার পরই বিমানে ইঞ্জিন বসানো হয়। এর মাধ্যমে ইঞ্জিনে আগুন লেগেছে কিনা তাও পরীক্ষা করা হত।বহু বছর ধরেই এই পরীক্ষা  করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার জন্য ২ থেকে ৪ কেজি ওজনের মুরগি ব্যবহার করা হত। যদিও এখন এমনটা খুব কমই হয়। কারণ এখন ইঞ্জিন পরীক্ষার জন্য অনেক আধুনিক পদ্ধতি এসে গেছে। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রত্যেক বিমানেই একাধিক ইঞ্জিন থাকে। মাঝ আকাশে কোন ইঞ্জিন  কাজ করা বন্ধ করে দিলে অন্যান্য ইঞ্জিন চালু করে  দুর্ঘটনায় এড়ানো যায়।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *