‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে!’ জীবনের এই ধ্রুব সত্যি বহুদিন আগেই বলে গিয়েছিলেন কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তাই পৃথিবীতে যার জন্ম হয়েছে তারই মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পর প্রত্যেক ধর্মের মানুষের জন্যই দেহ সৎকারের আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে। হিন্দু ধর্ম মতে মৃত্যুর পর মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে গিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলার প্রথা রয়েছে। তাছাড়া হিন্দুদের শ্মশান যাত্রার সময় গোটা পথ বলা হয়ে থাকে ‘রাম নাম সত্য হ্যায়’। আর বাঙালিদের অন্তিম যাত্রায় বলা হয় ‘বল হরি, হরি বোল’। জানেন কেন মানুষের শেষ যাত্রায় রাম নাম করা হয়? এর পিছনেও রয়েছে এক বিশেষ অর্থ।
কথায় আছে যেমন কর্ম,তেমন ফল’। তাই সারাটা জীবন মানুষ যে কর্ম করে মৃত্যুর পর তারই ফল ভোগ করে। হিন্দু ধর্মের মানুষের বিশ্বাস মৃত্যুর পর মানুষের সঙ্গে তাঁর কাজের হিসাবও যায়। তাই মানুষের কর্মের ওপরই নির্ভর করে তাঁর মুক্তি আর পুনর্জন্ম। সারা জীবন পরিশ্রম করে মানুষ যতই টাকা-পয়সা, সম্পত্তি, কিংবা নাম-যশ- খ্যাতি অর্জন করুক না কেন মৃত্যুর কাছে সবাই অসহায়। তাই সবাই যেমন খালি হাতে পৃথিবীতে আসেন তেমন সব ছেড়ে খালি হাতেই চলে যেতে হয়।
যুধিষ্ঠিরের শ্লোক:
হিন্দু ধর্ম মতে রাম, হরি এবং বিষ্ণু এই তিনজনই হলেন একই দেবতার তিন রূপ। রাম কথাটি একটি সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ সত্য কথা। তাই অন্তিম যাত্রায় যাওয়ার সময় ধ্রুব সত্যকে অবলম্বন করেই হরি নাম করতে হয়। রাম কথাটি একটি সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ হলো সত্য কথা। মানুষের শেষ যাত্রায় একমাত্র ভগবানের নাম, অর্থাৎ রাম নামই তাঁর সঙ্গে যায়। বলা হয় যে সবার প্রথমে এই কথার উল্লেখ মহাভারতে পাণ্ডবদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ভাই ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির।
যক্ষ যখন যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করেন যে এই পৃথিবীতে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় কী? তখন জবাবে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন শ্মশানেই সবথেকে বেশি আশ্চর্যজনক। যুধিষ্ঠিরের বলা সেই শ্লোকটি ছিল ‘অহন্য়হনি ভূতানি গচ্ছতি যমমমন্দিরম্। শেষা বিভূতিমিচ্ছতি কিমাশ্চর্য মতঃ পরম্।’ অর্থাৎ, মৃতদেহকে শ্মাশানে নিয়ে যাওয়ার সময় সবাই ‘রাম নাম সত্য হ্যায়’ বলেন কিন্তু মৃতদেহ পোড়ানোর পর বাড়ি ফেরার সময় সবাই এই রাম নাম ভুলে আবার মায়া-মোহতে পড়ে যান। তাই মৃতের বাড়ির লোকেরাই তাঁর সম্পত্তি নিয়ে একে-অপরের সাথে লড়াই-ঝগড়া করেন। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির এটাও বলেছেন, ‘নিত্য প্রাণীর মৃত্যু হয়, কিন্তু শেষে তাঁর পরিজনেরা তাঁর সম্পত্তিকেই চায় এর থেকে বড় আশ্চর্য আর কি আছে।’
রামই সত্য, বাকি সবের কোনও মূল্য নেই। হিন্দু শাস্ত্র মতে ‘রাম নাম সত্য হ্যায়’ এমন একটি বীজমন্ত্র যা জপ করে মানুষ তার খারাপ কাজ থেকে মুক্তি পায়। অনেকের বিশ্বাস এই মন্ত্র জপ করলে মৃতের পরিবারের সদস্যরা মানসিক শান্তি পায়।
Leave a Reply