চাঁদ

চাঁদ হলো পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। যা একই সাথে রহস্যময়ী এবং সুন্দরী। এহেন চাঁদকে ঘিরে কৌতূহলের অন্ত নেই সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মহাকাশ বিজ্ঞানী সকলেরই। পৃথিবী থেকে প্রায় ৪ লক্ষ কিমি দূরে অবস্থিত চাঁদের নানান অজানা দিক সম্পর্কে জানার কৌতূহল রয়েছে সীমাহীন।  যদিও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করছে পৃথিবীর সাথে চাঁদের দূরত্ব। যা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়। যদিও চাঁদের থেকে পৃথিবীর সরে যাওয়ার এই গতি এতটাই কম যে তা  আপাতদৃষ্টিতে চোখে পড়ে না পৃথিবীবাসীর। তবে সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে, বিজ্ঞানীদের করা এক ভবিষ্যদ্বাণী। যা থেকে জানা যাচ্ছে,বেশ কিছু বছর পর পৃথিবী থেকে চাঁদকে আর দেখার নাও যেতে পারে।  তাহলে কি অদূর ভবিষ্যতে মহাশূন্যের গর্ভে চিরকালের জন্য হারিয়ে যাবে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ?

নিঁখুত ভাবে পর্যবেক্ষণের পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা চাঁদের এই সরণ সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো অভিযানে নাসার মহাকাশচারীরা চাঁদে যে প্রতিফলক প্যানেল বসিয়েছিলেন তাতেই প্রথম ধরা পড়ে চাঁদের সরণ। হিসাব কষে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বছরে ৩.৮ সেন্টিমিটার করে পৃথিবীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে চাঁদের।

 

কিন্তু চাঁদের সরণ কেন এতো ভাবছে বিজ্ঞানীদের? পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ কেন তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে? চাঁদের সঙ্গে পৃথিবীর দূরত্ব বাড়লে কি হবে অদূর ভবিষ্যতে?

 

 

খুঁটিনাটি একাধিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীদের অনুমান চাঁদের সরণের নেপথ্যে রয়েছে পৃথিবীর মিলানকোভিচ চক্র। পৃথিবীতে আবহাওয়া জনিত অস্বাভাবিক পরিবর্তনের জন্যও দায়ী করা হয় এই চক্রকে। মিলানকোভিচ চক্রের কারণেই পৃথিবীর কক্ষপথ এবং অক্ষের অবস্থানেও মাঝেমধ্যে তারতম্য ঘটে। যা প্রভাব ফেলে পৃথিবীতে সূর্যরশ্মির বিকিরণের উপরেও। পৃথিবীর কোন অংশে সূর্যের আলোর তারতম্য ঘটলেও আবহাওয়ায় বড়সড় পরিবর্তন ঘটে।

 

বিজ্ঞানীদের দাবি পৃথিবীর মিলানকোভিচ চক্র প্রতি চার লক্ষ, এক লক্ষ, ৪১ হাজার এবং ২১ হাজার বছর অন্তর পরিবর্তিত হতে থাকে। এই সময়ের ব্যবধানের সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে চাঁদের দূরত্বের৷ কারণ, এই সময়ের ব্যবধানেই পৃথিবীর কক্ষপথের আকারেও বদল ঘটে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন বর্তমানে মিলানকোভিচ চক্রের ২১ হাজার বছরের পর্ব চলছে। এই ব্যবধান আগে আরও কম ছিল। তাই চাঁদের সাথে পৃথিবীর দূরত্বও আগের থেকে আরও কম ছিল। বিজ্ঞানীদের অনুমান, চাঁদের উৎপত্তির সময় তা পৃথিবীর অনেক কাছে ছিল। প্রায় ২৪৬ কোটি বছর আগের কথা, সেসময় পৃথিবী এবং চাঁদের মধ্যে ব্যবধান ছিল বর্তমান ব্যবধানের চেয়ে ৬০ হাজার কিলোমিটার কম। সেই সময় চাঁদ পৃথিবীকে ১০ গুণ বেশি বেগে প্রদক্ষিণও করত।

 

শুধু তাই নয় এই মিলানকোভিচ চক্রের জেরে গড়মিল হয়েছে পৃথিবীর দিনরাতের হিসাবেও। চাঁদের দূরত্বের নিরিখে ২৪৬ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য ২৪ ঘণ্টা ছিল না। তখন ১৭ ঘণ্টাতেই এক দিন সম্পন্ন হত। সবাইকে চমকে দিয়ে বিজ্ঞানীদের একাংশের অনুমান, ইদানিং  অন্য এক গ্রহ চাঁদকে আকর্ষণ করছে। সেই গ্রহের আকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর তুলনায় বেশি হওয়ায় প্রতি বছর একটু একটু করে তা পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।  এর ফলে চাঁদে উল্কাবর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটছে। তবে চাঁদের এই সরণ এবং পৃথিবীর কক্ষপথ, অক্ষের বিবর্তন সহ একাধিক বিষয়ে আরও  স্পষ্ট ভাবে বুঝতে হলে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন বলেই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *