প্রাণবায়ু অক্সিজেন ছাড়া মানুষ তথা গোটা প্রাণীজগৎ এক কথায় অচল। অক্সিজেন ছাড়া নিমেষের মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে পারে গোটা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড। গোটা প্রাণীজগতের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন। যার জন্য পৃথিবীতে জীবিত রয়েছে গোটা প্রাণী এবং উদ্ভিদ জগৎ। আমরা সারা দিনে প্রায় ২৩ হাজার বার নিঃশ্বাস নিই। যা আমাদের মস্তিষ্ক আর দেহকোষে অক্সিজেনে সরবরাহ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
আমাদের পৃথিবী ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন ২১ শতাংশ অক্সিজেন এবং ০.৮ শতাংশ অর্গান জাতীয় গ্যাস দ্বারা পরিবেষ্টিত। তবে এই গ্যাস গুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় হলো অক্সিজেন। বায়ুমণ্ডলে মাত্র ২১ ভাগ অক্সিজেন থাকলেও বেঁচে থাকার জন্য সকলেরই প্রয়োজন এই গ্যাস। মানবদেহের প্রায় ৯০ শতাংশ শক্তি আসে অক্সিজেন থেকে। বাকি মাত্র ১০ শতাংশের জন্য আমরা খাদ্য ও পানীয়ের ওপর নির্ভরশীল। শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন আবশ্যক।
কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন হঠাৎ করেই যদি বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায় তাহলে কি হতে পারে? প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে, অর্থাৎ প্রাগৈতিহাসিক যুগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল আজকের মতো ছিল না। তখন বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০ শতাংশ। সেসময় আমাদের চারপাশের পোকামাকড়গুলি আক্ষরিক অর্থেই ছিল দৈত্যাকার।
অতীতে ড্রাগন-ফ্লাই বা ফড়িংয়ের আকার ছিল প্রায় বাজপাখির সমান! শুনতে অবাক লাগলেও একেকটা মাকড়শা হতো ছোটখাটো পাখির সমান। এই পর্যন্ত শুনে আপনি নিশ্চই ভাবছেন, এটা কি করে সম্ভব? অক্সিজেনের সঙ্গে পোকামাকড় বড় হওয়ার সম্পর্ক কোথায়? বিজ্ঞানীদের দাবী পোকামাকড়রা ট্রাকিয়া নামের যে ক্ষুদ্র নলের মাধ্যমে শ্বাস নেয় সেই নলে অক্সিজেন বেশি ঢুকলেই নাকি দেহের কোষের গঠন দ্রুত হবে এবং তারা আকারে আরও বড়ো হবে।
মানবদেহে কি প্রভাব পড়বে ?
তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই এরফলে শুধু পোকামাকড়দেরই নয় শক্তি বৃদ্ধি পাবে মানুষেরও। কারণটা খুবই সহজ, বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ দ্বিগুণ হলে মানুষের শরীরে অক্সিজেনও প্রবেশ করবে বেশী পরিমাণে। যার ফলে রক্ত সঞ্চালনও আরও উন্নত হবে. এইভাবে এনার্জি বাড়ার পাশাপাশি মস্তিষ্কও বেশী কাজ করবে। কমে যাবে রোগবালাই। রক্তে নিউট্রোফিল নামের বিশেষ ধরনের শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ঠান্ডা লাগার সমস্যা কমে যাবে।
তবে সেইসাথে দেখা দিতে পারে বেশ কিছু জটিল স্বাস্থ্য সমস্যাও। শরীরে পরিমাণের তুলনায় অক্সিজেন বেশী ঢুকলে দেখা দেয় অক্সিজেন টক্সিসিটি। যার ফলে ক্ষতি হতে পারে ফুসফুসের, দৃষ্টিশক্তি কমে আসার পাশাপাশি মৃত্যু হতে পারে দেহের কোষগুলির। বাতাসে অক্সিজেন দ্বিগুণ হলে তা শরীরের বিপাক ক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করবে। এরফলে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলি অতিরিক্ত পরিশ্রম করবে যা শরীরের জন্য ক্লান্তি এবং মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে। এরফলে অসুস্থতায় নয় বরং ক্লান্তিতেই মৃত্যু হবে বেশি।
প্রকৃতিতে কি পরিবর্তন আসবে!
অক্সিজেনের অতিরিক্ত উপস্থিতিতে খুব অল্প সময়েই আগুন লেগে যেতে পারে, যা সহজে নেভানো যাবে না।
অক্সিজেনের ঘনত্ব লিথোস্ফিয়ারকে বায়ুমণ্ডলের চেয়ে ভারী করে তুলবে। এর ফলে জলের ফোঁটাও পরিবর্তিত হবে হাইড্রোজেন পারক্সাইডে।
বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড কমে যাওয়ায়, গাছপালা আগের তুলনায় কম সালোকসংশ্লেষ করবে।
উচু পাহাড়ে উঠতে কষ্ট কম হবে।
পাখিরা অনেক উঁচু থেকে উড়বে।
সবমিলিয়ে পরিশেষে বলাই যায় বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা দ্বিগুণ হলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি, এমনকি নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে গোটা প্রাণী জগৎ। তাই সুস্থভাবে বাঁচার জন্য আমাদের অক্সিজেন বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। যতটুকু আছে, ততটুকু বিশুদ্ধ রাখতে পারলেই যথেষ্ট।
Leave a Reply