যুদ্ধ

যুদ্ধ মানেই ধ্বংস লীলা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই  মূল্যবান সম্পত্তি কিংবা  জমি জায়গা দখলের জন্যই দু’ পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে থাকে।  কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে এমনও কিছু যুদ্ধ রয়েছে যার কারণ অতি তুচ্ছ! কখনও  একটি বালতি দখলের জন্য যুদ্ধ আবার কখনও একটি বিপথ গামী কুকুরের জন্য হয়েছে এক ভয়ানক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। শুধু তাই নয়  মদ্যপানের জন্যও রক্তক্ষয়ী  যুদ্ধের সাক্ষী থেকেছে  ইতিহাস। আসুন দেখে নেওয়া যাক পৃথিবীর ইতিহাসে এমনই সব অদ্ভুত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের তালিকা।

১) জেনকিন্সের কানের যুদ্ধ (১৭৩৯–১৭৪৮): একটি কান কাটা-কে কেন্দ্র করে ব্রিটেন এবং স্পেনের মধ্যে ৯ বছর ধরে এই যুদ্ধ চলেছিল। এই যুদ্ধে প্রায় ৪০ হাজার সৈন্য প্রাণ হারিয়েছিল। ১৭৩১ সালে স্প্যানিশ সৈন্যরা ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন রবার্ট জেনকিন্সের কান কেটে নিয়েছিল কারণ তিনি তার জাহাজে স্প্যানিশ সৈন্যদের উঠতে বাধা দিয়েছিলেন।

২) বিপথগামী একটি কুকুরের কারণে যুদ্ধ (১৯২৫):  ১৯২৫ সালে গ্রীস এবং বুলগেরিয়ার মধ্যে WWI এর খেলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু খেলা শুরুর একটু পরেই একটি কুকুরকে বুলগেরিয়ান সৈনিক গুলি করে হত্যা করে। এরফলে মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয়ে যায় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। গ্রীকরা বুলগেরিয়ার পেট্রিচ শহর দখল করতে গেলে এক ভয়ানক যুদ্ধ হয়। যার ফলে প্রায় ৩০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়।

৩) ফুটবল যুদ্ধ (১৯৬৯): ফুটবল ছিল হন্ডুরাস এবং এল সালভাদরের মধ্যে সংগঠিত ১৯৬৯ সালের যুদ্ধের একটি অনুঘটক মাত্র।১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দেশ। ম্যাচ এল সালভাদর জেতায় তা মানতে পারেননি  হন্ডুরাস সমর্থকরা।  ১৯৬৯ সালে ১৪ জুলাই এল সালভাদর হন্ডুরাস আক্রমণ করতেই  শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এই যুদ্ধে  সব মিলিয়ে ২ হাজার জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।

৪) ইমু পাখি যুদ্ধ (১৯৩২): ইমু পাখি কৃষকদের ফসল ধ্বংস করায় অস্ট্রেলিয়ান নেতারা ১৯৩২ সালে তাদের মারার জন্য মেশিনগান সহ সৈন্য পাঠায়। যদিও উড়ন্ত পাখি মারা সহজ ছিল না। তাই  দ্রুত তাদের মারার জন্য রসদ এবং গোলাবারুদ দিয়ে সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হয়। শেষে অস্ট্রেলিয়ান সেনাবাহিনীরা হার মেনে নিয়েছিল। কারণ এক সপ্তাহ লড়াই করে  মোট ২০ হাজার ইমুর মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৫০০ টি ইমুকে হত্যা করতে পেরেছিলেন তারা।

৫) শূকর নিয়ে যুদ্ধ (১৮৫৯): বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য একে অপরের ঘনিষ্ঠ রাষ্ট্র।  যদিও আগে তাদের সম্পর্ক এত ভালো ছিল না। ১৮৫৯ সালে একটি শূকর কে কেন্দ্র করে দুটি দেশের মধ্যে শত্রুতা  চরমে  পৌঁছেছিল। ব্রিটিশরা একটি বিপথগামী শূকরকে গুলি করে আমেরিকানরা তা ভালভাবে নেয়নি। ফলে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন গুলি চলেনি। তবে এই  স্ট্যান্ডঅফ চার মাস স্থায়ী হয়েছিল।

৬)  বালতি নিয়ে যুদ্ধ (১৩২৫): ১৩২৫ সালে  মধ্যযুগীয় ইতালীর দুটি রাজ্যের মধ্যে একটি বালতি চুরির ঘটনা থেকে শুরু হয়েছিল এই যুদ্ধের। যা ইতিহাসের  পাতায় ‘দ্য ওয়ার অফ দ্য ওকেন বাকেট’ নামে পরিচিত।  জানা যায় ইতালীয় রাজ্য মোডেনার সৈন্যরা আরেক রাজ্য বোলোগনা শহরের কূপ থেকে একটি বালতি চুরি করেছিল। বালতিটি আজও মোডেনা শহরে সংরক্ষিত আছে। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে  উভয় পক্ষের ২ হাজার জন লোক মারা গিয়েছিল।

৭) সিসিলিয়ান ভেসপারদের যুদ্ধ (১২৮২–১৩০২):  ফরাসি অধিকৃত সিসিলিতে ১২৮২ সালে শুরু হয়েছিল সিসিলিয়ান ভেসপারদের যুদ্ধ। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চলেছিল এই  যুদ্ধ। একটি গুজব থেকেই সূচনা হয়েছিল এই যুদ্ধের। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিসিলিয়ানরা পরবর্তী ছয় সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ৪ হাজার ফরাসীকে হত্যা করেছিলেন। তারপরেও বিভিন্ন কূটনৈতিক ভুল আরও দুই দশক ধরে দু’দেশের মধ্যে শত্রুতা জিইয়ে রেখেছিল।

৮) কারানসেবেসের যুদ্ধ (১৭৮৮): ১৭৮৮ সালে  একদল অস্ট্রিয় সৈন্যর সাথে তুরস্কের  যাত্রীদের বচসা হয়। পরে তুরস্কের লোকেরা তাদের মদ খাইয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছিল। অস্ট্রীয় সৈন্যরাও তা মেনে নেয়। পরে তারাই আরেক দল অস্ট্রিয়ান সৈন্যদেরদের সাথে অ্যালকোহল ভাগাভাগী করতে রাজি হয়নি। যা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়। অস্ট্রিয়ান সৈন্যদের বিরুদ্ধে  গুলি চালানোর অভিযোগও ওঠে। এই  যুদ্ধে নাকি প্রায় ১ হাজার অস্ট্রিয়ান সৈন্য নিহত হয়েছিল।

৯) চিনচা দ্বীপপুঞ্জ যুদ্ধ (১৮৬৪–১৮৬৬): ১৮৬৪ সালে স্পেন পেরুর চিনচা দ্বীপপুঞ্জ দখল করলে শুরু হয় স্প্যানিশ-দক্ষিণ আমেরিকান যুদ্ধ। এই চিনচা দ্বীপপুঞ্জটি  দেশিয় প্রজাতির পাখি গুয়ানাই করমোরেন্টের বিষ্ঠার জন্য বিখ্যাত। এই  দ্বীপপুঞ্জর বদলেই অবসান ঘটে দীর্ঘদিনের স্পেন-পেরু যুদ্ধের।  স্পেন থেকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি লাভ করে পেরু।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *