দেবী দুর্গার দশ হাতে দশ অস্ত্র

দশভুজা দেবী দুর্গার দশ হাতে দশ অস্ত্র সজ্জিত থাকে। অশুভক্তির সংহার করতেই প্রত্যেক বছর মর্ত্যে আগমন ঘটে দেবীর। পুরান মতে মহিষাসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যখন দেবতাগণ স্বর্গলোক ত্যাগ করতে বাধ্য হন, তখন এই বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সমস্ত দেবতারা শরণাপন্ন হয়েছিলেন দেবী দুর্গার। ব্রহ্মার বরে কেবলমাত্র নারী শক্তি হাতেই অসুরের মৃত্যু লেখা ছিল।

তখন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের মিলিত তেজে সৃষ্টি হয় মহামায়া দুর্গার। সমস্ত দেবতারা সেসময় নিজেদের অস্ত্র দিয়ে একে একে সুসজ্জিত করে তুলেছিলেন সৃষ্টির সংহাররূপী দেবী দুর্গাকে। দেবীর দশ হাতের এই অস্ত্রের সাথে জড়িত রয়েছে বিশেষ মাহাত্ম্য। আসুন দেখে নিন অশুভ শক্তির নাশ  করতে কোন দেবতারা কোন অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন দেবী দুর্গার হাতে।

ত্রিশূল: স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব নিজের প্রিয় অস্ত্র  ত্রিশূল তুলে দিয়েছিলেন দেবী দুর্গার হাতে। ত্রিশূলের তিনটি ফলা আসলে মানুষের  ‘ত্রিগুণ’ অর্থাৎ সত্য, তমঃ, রজঃ -এর প্রতীক। প্রত্যেক জীবের মধ্যেই  থাকে এই ত্রিগুণ। সত্ত্ব অর্থাৎ  ধর্ম জ্ঞান, রজঃ মানে অহঙ্কার এবং তমঃ মানে অন্ধকার। এই ত্রিশূল দিয়েই মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন দেবী দশভুজা।

সুদর্শন চক্র: ভগবান শ্রীবিষ্ণু মহিষাসুরকে বধ করার জন্য দেবী দুর্গাকে দিয়েছিলেন তাঁর সুদর্শন চক্র। দেবীর হাতের এই অস্ত্র দৃঢ়তা এবং সংহতির প্রতীক। যা বোঝায়  গোটা  বিশ্ব ব্রহ্মান্ড নিয়ন্ত্রিত হয় দেবী দুর্গার দ্বারা। অর্থাৎ  সমস্ত সৃষ্টির কেন্দ্রে অবস্থান করছেন তিনি।

পদ্ম: অশুভ শক্তির সংহার করতে দেবীর হাতে পদ্ম  তুলে দিয়েছিলেন ভগবান ব্রহ্মা। যা পরম ব্রহ্ম বা জ্ঞানের প্রতীক। দেবীর আশীর্বাদে অন্ধকার সরে গিয়ে আলো আসে। তাই প্রত্যেক দুর্গাপুজোয়  শুভশক্তির বার্তা নিয়ে আসে পদ্মফুল। অর্ধস্ফুট পদ্ম মানুষের মনে  আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সঞ্চার করে।

তির এবং ধনুক: অসুর বধের আগে পবনদেব ও সূর্যদেব দেবীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন তির ও ধনুক। তির ও ধনুক হল প্রাণশক্তির প্রতীক। তির গতিময়তাকে নির্দেশ করে আর ধনুক সম্ভাব্য ক্ষমতাকে নির্দেশ করে।  একইসঙ্গে তির ও ধনুক দ্বারা বোঝানো হয় যে মা দুর্গা ব্রহ্মাণ্ডের সকল শক্তির উৎস। অসুর দমনের যুদ্ধে এই তীর ধনুক ব্যবহার করেছিলেন দেবী ভবানী।

বজ্র: দেবরাজ ইন্দ্র দেবী দুর্গার হাতে বজ্র তুলে  দিয়েছিলেন। সেই বজ্রটি ইন্দ্রদেবের নিজের বজ্রের থেকেও বেশী শক্তিশালী ছিল। যা আসলে দৃঢ়তা আর  আত্মশক্তির প্রতীক।  মেঘের ঘর্ষণে যেমন  বজ্রশক্তি উৎপন্ন হয় তেমনই আত্মশক্তি তৈরি হয় কর্ম থেকেই।

সাপ: শেষনাগ অস্ত্র হিসাবে মা দুর্গাকে দিয়েছিলেন নাগপাশ৷ এই সাপ হল শুদ্ধ চেতনার প্রতীক। দেবী দশভুজার হাতের এই  সাপ বোঝায় সাধনার মাধ্যমেই চেতনার নিম্ন স্তর থেকে উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছনো যায়।

কুঠার: দেব সেনাপতি বিশ্বকর্মা দেবীকে কুঠার প্রদান করেছিলেন। অশুভের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক কুঠার। একই সঙ্গে যে কোনও পরিস্থিতি মনে সাহস যোগায় কুঠার।

শঙ্খ: বরুণ দেব মা দুর্গার হাতে তুলে  দিয়েছিলেন শঙ্খ। মঙ্গলময় শঙ্খধ্বনির শব্দে স্বর্গ, মর্ত্য ও নরক জুড়ে থাকা সব অশুভ শক্তির  ভীত দুর্বল হয়ে পড়ে।

গদা: মহামায়ার হাতে  গদা তুলে দিয়েছিলেন যমরাজ ৷ যা কালদণ্ড নামেও পরিচিত। এটি শক্তি, আনুগত্য, ভালোবাসা এবং ভক্তির প্রতীক।

বর্শা: অশুভ শক্তির নাশ করতে দেবী দুর্গার হাতে বর্শা তুলে দিয়েছিলেন অগ্নিদেব।এই অস্ত্র পবিত্রতা এবং ভুল ও ঠিকের প্রতীক।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *