দেবী দুর্গা এবং তার সন্তানদের বাহন

গোটা বাংলা জুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। মা দুর্গার আগমনের আনন্দে মেতে উঠেছেন রাজ্যবাসী। প্রত্যেক বছর দেবী পক্ষের সূচনা লগ্নে গোটা পরিবার নিয়ে মর্ত্যে  আগমন হয় সিংহবাহিনী দেবী দুর্গার। সঙ্গে থাকে তাঁর চার সন্তান এবং তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বাহন। পুরাণ মতে দেবী দুর্গা এবং তার সন্তানদের প্রত্যেকের বাহনের সাথে যুক্ত রয়েছে কোন না কোন কাহিনী। আসুন জানা যাক  বিস্তারিত।

মা দুর্গার বাহন কেন সিংহ?

পুরাণ মতে মহাদেবকে স্বামী হিসাবে পাওয়ার জন্য টানা হাজার বছর ধরে তপস্যা করেছিলেন দেবী পার্বতী। সেসময় তিনি অন্ধকারে মিশে যাওয়ায় বিয়ের একদিন পরেই তাঁকে ‘কালী’ বলে সম্বোধন করেছিলেন মহাদেব। তখন কৈলাস ত্যাগ করে আবার ধ্যানমগ্ন হয়ে যান দেবী। তখনই এক ক্ষুধার্ত সিংহ দেবী পার্বতীকে শিকার করতে আসে। কিন্তু দেবীকে তপস্যারত দেখে সে অপেক্ষা করে। এভাবেই কেটে যায় বহু বছর। তপস্যা শেষে তিনি পার্বতীকে গৌরবর্ণ বলে বর্ণনা করেন। এরপর যে সিংহটি তাঁকে শিকার করতে এসেছিল, তাকেই বাহন হিসেবে গ্রহণ করেন দেবী। তবে শিবপুরাণ মতে, ব্রহ্মা দুর্গাকে বাহন হিসাবে সিংহ দান করেছিলেন,আবার শ্রীশ্রীচণ্ডীতে উল্লেখ আছে গিরিরাজ হিমালয় দেবীকে সিংহ দান করেছিলেন। কালিকাপুরাণ অনুযায়ী, শ্রীহরি দেবীকে বহন করছেন। এই হরি শব্দের এক অর্থ সিংহ। সিংহ প্রচণ্ড শক্তি, পরাক্রম, শৌর্য এবং রাজকীয় আচরণের প্রতীক। তাই  সিংহ ছাড়া অন্য কোনও প্রাণীকে দেবী দুর্গার বাহন হিসেবে মানায় না।

গণেশের বাহন ইঁদুর কেন?

স্বর্গে দেবলোকের সভায় গান গেয়ে সকলের মনোরঞ্জন করতেন ক্রঞ্চ নামে এক গন্ধর্ব। ঋষি বামদেব ক্রঞ্চকে  ইঁদুরে পরিণত করে  অভিশাপ দিয়েছিলেন তিনি  আর কোনও গান গাইতে পারবেন না। ভুল স্বীকার করে ক্রঞ্চ ক্ষমা চাইলে মুনি বলেছিলেন, কোনোদিন যদি গণেশ তাঁকে বাহন করেন, তা হলেই মুক্তি মিলবে। মর্ত্যলোকে পরাশর মুনির কুটিরে খাদ্য সন্ধান করছিলেন ক্রঞ্চ ইঁদুর। সেখানেই  এক দিন গণেশ আসেন। তখন ক্রঞ্চ তাঁকে নিজের পরিচয় দিয়ে সব কথা বলেন। একথা শুনে ইঁদুরকেই নিজের বাহন করে নিয়েছিলেন গণেশ।

মা লক্ষ্মীর বাহন প্যাঁচা কেন?

পৌরাণিক কাহিনী মতে প্রাণীজগৎ সৃষ্টির পর দেব-দেবীরা মর্ত্যে আসলে পশু ও পাখিরা তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে শুরু করেন।কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারা বলেছিল, ‘আপনারা যেহেতু আমাদের তৈরি করেছেন তাই আপনাদের বাহন হয়েই আমরা পৃথিবীতে থাকব।’ সেই সময় নিজের বাহন পছন্দ করার সময়  দেবী লক্ষ্মী বলেন ‘আমি যেহেতু রাতে পৃথিবীতে আসি, তাই রাতে যে প্রাণী দেখতে পায় সেই হবে আমার বাহন।’ সেই  থেকেই প্যাঁচা হয়ে ওঠে দেবী লক্ষ্মীর বাহন। আবার অনেকে বলেন দেবী লক্ষ্মী ধানের দেবী। আর ইঁদুর ধান খেয়ে ফেলে। এই কারণেও লক্ষ্মীর বাহন প্যাঁচা হতে পারে।

সরস্বতীর বাহন কেন হাঁস ?

মা সরস্বতী হলেন জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী। সর্বত্র বিরাজমান থাকেন তিনি। তাই তাঁর বাহনও এমনই হওয়া চাই। হাঁস হল এমনই এক প্রাণী যে  জল, স্থল, এবং অন্তরীক্ষ তিন জায়গায় থাকতে পারে। তাই নিজের বাহন হিসেবে হাঁসকেই বেছে নিয়েছেন মা সরস্বতী।

ময়ূর কেন কার্তিকের বাহন ?

কথিত আছে কার্তিকের বাহন,আসলে তারকাসুর। পুরাণ মতে তারকাসুরকে বধ করেছিলেন  কার্তিক। যুদ্ধের সময় তারকাসুর ময়ূরের ছদ্মবেশ নিয়ে আক্রমণ করেছিল কার্তিককে। মৃত্যুর আগে তারকাসুর কার্তিকের বাহন হয়েই থাকতে চেয়েছিলেন।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *