আমাদের দেশ ভারতবর্ষ মানেই বৈচিত্রের মধ্যে সমাহার! ভারতীয় সংস্কৃতিতে হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে পূজা পাঠ করা মানুষের দৈনিক অভ্যাস। অনেকে ছুটে যান বিভিন্ন জাগ্রত মন্দিরে। ঈশ্বরের কৃপাদৃষ্টি লাভের জন্য অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন ভীড় জমান ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য মন্দিরে।
সাধারণত মন্দিরে ঠাকুরের পূজোর নৈবদ্যয় ফুল, ফল কিংবা মিষ্টি দিয়ে থাকেন ভক্তরা। মন্দিরে প্রবেশের আগে জুতো বাইরে খুলে রাখাও একটা অভ্যাস। ছোট থেকে এই দৃশ্য দেখেই অভ্যস্ত কম বেশি আমরা সকলেই। কিন্তু জানলে অবাক হবেন ভারতেই রয়েছে এমন একটি মন্দির যেখানে পুজোর নৈবেদ্য হিসেবে ফুল ফল কিংবা মিষ্টি নয় দেওয়া হয় জুতো। এই মন্দিরে ভক্তরা দেবতাকে ‘চপ্পলের’ মালা অর্পণ করেন।
জানেন ভারতের কোথায় রয়েছে সেই মন্দির? মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী কর্ণাটকের গুলবার্গ জেলা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে আলন্দ তহসিলের গোলা গ্রামে লাক্কাম্মা দেবীর একটি মন্দির রয়েছে। দীপাবলির পর, ‘পঞ্চমী’ তিথিতে, এই গ্রামে মেলা বসে। ওই বিশেষ দিনেই মন্দিরে বিপুল ভক্ত সমাগম হয়।
স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস পুজোর নৈবেদ্যে দেওয়া এই জুতো পরেতেই মন্দির থেকে নেমে আসেন স্বয়ং দেবী। বহুদূর দূরান্ত থেকে ভক্তরাও নিজেদের মনের বাসনা পূরণের জন্য মন্দিরের বাইরে থাকা একটি গাছের গায়ে বেঁধে দিয়ে যন জুতোর মালা।
কথিত আছে, মেলার দিন রাতেই নকি দেবী স্বয়ং ওই মন্দির থেকে বেরিয়ে এসে ভক্তদের দান করা জুতো পরে ঘুরে বেড়ান। মানুষের বিশ্বাস দেবী ভক্তদের দেওয়া জুতো পরলে তাদের পায়ের সমস্ত ব্যথা যন্ত্রণা দূর হয়। সেই সাথে পূরণ হয় তাঁদের অন্যান্য মনস্কামনাও। তাছাড়া গ্রামবাসীদের বিশ্বাস তারা দেবতাকে ‘চপ্পল’ নিবেদন করার সাথে সাথে তিনি তাদের অশুভ আত্মা থেকে রক্ষা করেন। প্রচলিত এই বিশ্বাস থেকেই শুধু হিন্দু নয়, মুসলিমরাও যান এই মন্দিরে।
গ্রামবাসীদের মতে, দেবী একবার পাহাড়ের উপর দিয়ে চলাফেরা করছিলেন তখন পার্শ্ববর্তী দত্তগাঁও গ্রামের দেবতা তাকে দেখতে পান। এরপর তাকে তাড়া করতে থাকে। তাকে তার হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে সে তার মাথা মাটিতে পুঁতে দেয়। কথিত আছে যে দেবতার মূর্তিটি সেই স্থানেই স্থাপন করা হয়েছে যেখানে তিনি তাকে কবর দিয়েছিলেন। আজও মানুষ তার পিঠের পূজা করে।
এই মন্দিরের দেবতার পুজোয় ‘চপ্পল’ নিবেদনের প্রথার সূচনা সম্পর্কে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। আগেকার দিনে মাজারে মহিষ বলি দেওয়া হতো। পরে সরকার এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে দেবতা ক্ষুব্ধ হন। তাকে শান্ত করার জন্য একজন সাধু ধ্যানে বসেছিলেন। তারপরে, ভক্তরা দেবতাকে ‘চপ্পল’ নিবেদন করতে শুরু করে। তারপর থেকেই চপ্পল নিবেদন একটি প্রথায় পরিণত হয়েছে
Leave a Reply