সিঁদুর

বিয়ের পর প্রত্যেক ভারতীয় হিন্দু মহিলাই  স্বামীর মঙ্গল-কামনায় সিঁথিতে সিঁদুর পড়ে থাকেন। যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে এই নিয়ম। যা ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক। হিন্দু ধর্ম মেনে স্বামীর দীর্ঘ জীবনের কামনা করে সিঁথিতে চওড়া করে সিঁদুর পড়েন মহিলারা।  প্রত্যেক বিবাহিত স্ত্রীর কাছেই এক চুটকি সিঁদুর অত্যন্ত মূল্যবান। বিয়ের দিনেও  সিঁদুর পরার  পরেই  প্রত্যেক মেয়ের বিয়ের সাজ সম্পন্ন হয়। পন্ডিতরাও বলে আসছেন সিঁদুরের লাল রং নারী শক্তির প্রতীক। তাছাড়া লাল রং-ই হল  শক্তি ও ভালবাসার প্রতীক।

সিঁদুর নিয়ে জ্যোতিষ শাস্ত্রেও রয়েছে একাধিক মতবাদ। অনেকের বিশ্বাস  শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেবতা বিরাজ করেন। স্বয়ং ব্রহ্মা অধিষ্ঠান করেন কপালে। তাঁকে  সম্মান জানাতে এবং তুষ্ট রাখতেই বিবাহিত মহিলারা কপালে সিঁদুর পরেন। কিন্তু শুধুই কি তাই? জানলে অবাক হবেন স্বামীর মঙ্গলকামনা ছাড়াও সিঁদুরের রয়েছে  বিশেষ স্বাস্থ্যগুণও। সিঁদুর শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।

সিঁদুর কিভাবে তৈরী করা হয়?

সিঁদুর তৈরী করা হয় হলুদ, চুন, চন্দন এবং খুব অল্প পরিমাণ পারদ দিয়ে। মূলত, লাল রংকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে পারদ। আয়ুর্বেদ  শাস্ত্র মতে  বিভিন্ন ওষুধ তৈরির কাজে হলুদ অব্যর্থ  বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, মানসিক চাপ কমাতে, উদ্বেগ কমাতে, অবসাদ কমাতে হলুদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অন্য দিকে চন্দন তার শীতল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এর সুবাস মন শান্ত  করে।

কেন সিঁদুর পরা স্বাস্থ্যকর?

মহিলারা মাথার যে মাঝের অংশে সিঁদুর পরেন সেখানেই থাকে গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু। তাই সিঁদুর পরার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কের ওপর। সিঁদুর স্ট্রেস কমানোরও কাজ করে। স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে সিঁদুর। ঋষিরা মনসংযোগ বাড়াতেই সিঁদুরের তিলক কেটে ধ্যানে বসতেন। স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে সিঁদুর। সিঁদুরে থাকা চন্দন মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। তাই সিঁদুর মন ও শরীর উভয়ের জন্য খুবই কার্যকরী। কেউ কেউ বলেন যৌন চাহিদা বৃদ্ধি করতেও সিঁদুরের বিশেষ ভূমিকা আছে।

রাসায়নিক মিশ্রিত সিঁদুরের ক্ষতিকারক প্রভাব

তবে তা অবশ্যই বাজারের রাসায়নিক মিশ্রিত ‘কমার্শিয়াল’ সিঁদুর নয়। এই সব সিঁদুরে থাকা মারকিউরি সালফেট ত্বকের ব্যাপক  ক্ষতি করে।  চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া কিংবা ডেকে আনতে পারে  ক্যানসারের মতো মারণ রোগও।  এইসব সিঁদুরের জন্য  চুল পড়ার কিংবা খুসকির মতো সমস্যা দেখা যায়। এই সিঁদুর খাবারের সাথে মিশে পেটে গেলে হতে পারে পিটার সমস্যাও। তাই উচ্চ মানের ভেষজ সিঁদুর না পরলে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *