আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষেরই দামি সোনা- গয়না থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রাখার জন্য একমাত্র ভরসার জায়গা হল ব্যাংকের লকার। মূল্যবান জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখার জন্য অনেকে ব্যাংকের লকারের ওপরেই ভরসা করেন। যদিও তার জন্য দিতে হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ বার্ষিক মূল্য। সাধারণত গ্রাহকদের লকারের আকারের ওপরে এই টাকার অংক নির্ভর করে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যাংকের আলাদা নিয়ম রয়েছে।
আগেই ব্যাংকের লকার নিয়ে নতুন নিয়ম চালু করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। আরবিআই-এর সংশোধিত নির্দেশিকা অনুসারে, লকার হোল্ডারদের একটি সংশোধিত লকার চুক্তিতে সই করতে হবে। সেই চুক্তি অনুসারে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই ১০০ শতাংশ গ্রাহককে দিয়ে নতুন চুক্তিতে সই করাতে হবে।
ব্যাঙ্ক লকারে কী রাখা যায়?
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে,গ্রাহকরা ব্যাংকের লকার শুধুমাত্র বৈধ উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করতে পারবেন। তাই শুধুমাত্র মূল্যবান গয়না, আর নথিপত্র লকারে রাখা যায়। তবে হস্তান্তর করা যাবে না লকার। গ্রাহকরা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত কাজেই এই লকার ব্যবহার করতে পারবেন। এই নতুন চুক্তিতে নতুন লকার নিলে স্ট্যাম্প পেপারের খরচ দিতে হবে গ্রাহককে। চুক্তি নবীকরণে স্ট্যাম্প পেপারের খরচ দেবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
ব্যাঙ্ক লকারে কী কী রাখা যায় না?
SBI-এর ওয়েবসাইট অনুসারে, কোনও লকারে নগদ টাকা বা মুদ্রা রাখা যাবে না। এ ছাড়া অস্ত্র, বিস্ফোরক, কিংবা মাদকের মতো জিনিসও ব্যাঙ্কের লকারে রাখার অনুমতি নেই। কোনও পচনশীল জিনিস থাকলে তাও লকারে রাখা যাবে না। তাছাড়াও কোনও তেজস্ক্রিয় পদার্থ বা কোনও বেআইনি জিনিস ব্যাঙ্ক লকারে রাখা যাবে না। এককথায় ব্যাঙ্ক লকারে এমন কোনও জিনিসই রাখা যাবে না, যা ব্যাঙ্ক বা এর কোনও গ্রাহকের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।
ব্যাঙ্ক লকারের নিয়ম কী?
ব্যাঙ্ক লকারের নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকের অবহেলার কারণে কিংবা বৃষ্টি, বন্যা, ভূমিকম্প, বজ্রপাত, দাঙ্গা, সন্ত্রাসবাদী হামলা বা লকারের ক্ষতির মতো কোনও দুর্যোগের জন্য ব্যাঙ্ক দায়ী থাকবে না। অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ড, চুরি, ডাকাতি, ভবন ধ্বস, কিংবা ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের জালিয়াতির মতো ঘটনার জন্য ব্যাঙ্ককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তবে লকারের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ব্যাঙ্কের।
তাছাড়া নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাঙ্কের লকারের সমস্ত তথ্য অর্থাৎ খালি লকারের তালিকা এবং ওয়েটিং লিস্ট নিয়মিত আপডেট করে গ্রাহকদের জানাতে হবে। ব্যাঙ্কের লকারের সমস্ত তথ্য বাইরের ডিসপ্লে বোর্ডে স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে। লকারের নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া এবার থেকে ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকের থেকে তিনবছরের বেশি লকারের ভাড়া নিতে পারবে না।
কিন্তু প্রশ্ন হল লকারের চাবি হারিয়ে গেলে কী করণীয়?
এখানে বলে রাখি ব্যাঙ্কের লকার খুলতে দুটি চাবি লাগে। যার মধ্যে একটি চাবি গ্রাহকের কাছে এবং অন্যটি থাকে ব্যাঙ্কের কাছে। ব্যাঙ্কের লকার খুলতে এই দুটি চাবিই লাগে। তাই ব্যাঙ্কের লকারের চাবি হারিয়ে গেলে প্রথমেই লকারের বিশদ বিবরণ দিয়ে একটি আবেদনপত্র জমা দিতে হবে ব্যাংকে। সেইসাথে থানায় রিপোর্ট করে সেই অভিযোগের ফটোকপিও জমা দিতে হবে ব্যাঙ্ককে।
এর পর নতুন চাবির পাওয়ার জন্য ব্যাঙ্ককে টাকা দিতে হবে। এরপরই ব্যাংকের তরফেই জানানো হবে কখন, কোথায় গিয়ে নতুন চাবি সংগ্রহ করতে হবে। তবে ডুপ্লিকেট চাবিতে লকার খারাপ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে গ্রাহক চাইলে প্রথম লকারটি সম্পূর্ণ ভেঙে সেখান থেকে সমস্ত মূল্যবান গয়না আর নথি দ্বিতীয় লকারে স্থানান্তরিত করতে পারেন। কিন্তু এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার খরচ বহন করতে হবে গ্রাহককেই। নিয়ম অনুযায়ী লকার খোলার জন্য এবং হারানো লকারের চাবি প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যাঙ্ককে ১০০০ টাকা দিতে হয়।
Leave a Reply