উজালা

উজালা নামটা শুনলেই কানে বাজে নব্বইয়ের  দশকের বিজ্ঞাপনেরসেই বিখ্যাত জিঙ্গল ‘আয়া ন্যায়া উজালা চার বুন্দো বালা।’ জ্যোতি ল্যাবটরিজের তৈরী এই উজালা এখন পৌঁছে গিয়েছে প্রত্যেকের ঘরে। বছরের পর বছর ধরেই উজালার এই নীল ব্যবহার করে চলেছেন বহু মানুষ।  সাদা জামাকাপড়ের প্রতি অবসেশন থেকেই উজালা আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা এম পি রামচন্দ্রন। এমপি রামচন্দ্রন স্নাতকোত্তর করার পর হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

ব্যবসা শুরুর আগে কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা আর মাত্র ৫ হাজার তাকাই ছিল তাঁর সম্বল। ভাইয়ের থেকে ঋণ নেওয়া ৫ হাজার টাকা দিয়ে যে ব্যবসা শুরু করেছিলেন তা আজ একটি  মাল্টি ব্র্যান্ড কোম্পানি। বর্তমানে মোট  ১৪,০০০ কোটি টাকার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য রয়েছে তাঁর। জ্যোতি ল্যাবরেটরিজের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য, উজালা লিকুইড ক্লথ হোয়াইটনার এবং ম্যাক্সো মশা নিরোধক বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও রয়েছে এই কোম্পানির এক্সো আর প্রিল কিচেনের জন্য, হেনকো জামাকাপড় ধোয়ার জন্য, মার্গো সাবান, টি শাইন এবং  টয়লেট ক্লিনার।

 

কথায়  আছে ‘Carity begins at home’.  তাই জামাকাপড়ের  হোয়াইটনার তৈরির জন্য তিনি প্রথম পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন বাড়ির রান্নাঘরেই।কিন্তু প্রথমেই তিনি সাফল্য পান নি। সেসময় একটি ম্যাগাজিন থেকে তিনি জানতে পারেন  বেগুনি রং ব্যবহার করেই  সাদার একাধিক শেড তৈরী  করা যেতে পারে। এর পর, রামচন্দ্রন টানা এক বছর ধরে বেগুনি রঙ নিয়ে একাধিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন।  ১৯৮৩ সাল নাগাদ ত্রিশূরে পারিবারিক জমি নিয়ে একটি অস্থায়ী কারখানা স্থাপন করেছিলেন তিনি।

মেয়ে জ্যোতির নামানুসারে কোম্পানির নাম রাখেন জ্যোতি ল্যাবরেটরিজ। জামাকাপড়  উজ্জ্বল এবং সাদা রাখার জন্যই উজালা সুপ্রিম লিকুইড ফ্যাব্রিক হোয়াইটনার তৈরি করা হয়। শুরুতে ৬ জন মহিলার একটি দল বাড়ি বাড়ি পণ্য বিক্রি করতেন। প্রথম বছর মোট ৪০ হাজার টাকার উজালা বিক্রি হয়েছিল। সেইসময় উজেলার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল রবিন ব্লু। দক্ষিণ ভারতে ধীরে ধীরে জ্যোতি ল্যাবরেটরিজের বাজার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ১৯৮৬ সালে সংবাদপত্রে প্রথম উজালার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালের মধ্যে বাংলাতেও এই উজেলার ভালো বাজার তৈরী হয়।

কিন্তু ইংরেজদের পছন্দের রবিন ব্লু তখনও কড়া টক্কর দিচ্ছিল উজালাকে। তখনই  টিভি এবং রেডিওতেও উজালার বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা মাথায় আসে এম পি রামচন্দ্রনেয়।  এরপরেই আসে উজেলার বিজ্ঞাপনের সেই বিখ্যাত জিঙ্গল ‘আয়া ন্যায়া উজালা চার বুন্দোবালা।’ কিন্ত চার ফোঁটাই কেন? আসলে এর পিছনেও রয়েছে এক অজানা গল্প। সেসময় উজেলার প্রতিদ্বন্দ্বী রবিন ড্যাজলিং নিজেদের লিক্যুইড ব্লুউর প্রচারের জন্য বলেছিল উজালার তুলনায় তাদের লিকুইড নাকি কম পরিমাণে লাগে। তাই এই ভ্রান্ত ধারণা ভাঙতেই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই মানুষের গেঁথে দেওয়া হয়েছিল মাত্র চার ফোঁটা উজালা ব্যবহার করেই জামাকাপড়ের উজ্জ্বল রঙ ধরে রাখা সম্ভব। এরপর  ১৯৯৭ সাল নাগাদ উজালা  সারা দেশে বিখ্যাত হয়ে ওঠে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *