অন্ধবিশ্বাস

ভারতীয়রা ছোট থেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত ধ্যানধারণার মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। বিনা বাক্যে বাড়ির বড়দের বলা কথা মেনে চলাই এদেশের ছেলেমেয়েদের পূর্ণ অভ্যাস। যা  আপাত দৃষ্টিতে অনেকের কাছেই কেবলমাত্র অন্ধবিশ্বাস বলে মনে হলেও তার পিছনে রয়েছে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। জানলে অবাক হয়ে যাবেন যা এতদিন আপনি অন্ধবিশ্বাস বলে উড়িয়ে দিয়ে এসেছেন তার পিছনেও বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাই এই ধরনের কিছু প্রচলিত অভ্যাসের  বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানা দরকার।

ছোট থেকেই আমরা সকলেই কম বেশি শুনে আসছি ঘুমানোর সময়

উত্তর দিকে মাথা দিয়ে শুতে নেই! এর পিছনে আসলে কি কারণ রয়েছে? জানতে চাইলে হয়তো শোনানো  হয়েছে গণেশের শিরচ্ছেদের পৌরাণি কাহিনী। কিন্তু এর পিছনেও রয়েছে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। পড়ার বইতে আমরা সকলেই পড়েছি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা।  বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুসারে মানুষের মাথা উত্তর আর পা-এর দিকটা দক্ষিণমেরু হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই উত্তরদিকে মাথা দিয়ে শুলে মাথার ওপর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব পড়ে। যার ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। তাই শরীর-স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই অতীতে পুরাণের গল্প দিয়ে এই তত্ত্বই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

মৃত ব্যক্তির শব্দ করে বাড়ি এসে স্নান করতে হয়

ছোট থেকেই আমরা শুনে এসেছি শ্মশানযাত্রায় গিয়ে শবদাহ করে বাড়ি ফিরে আসার পর বাইরের জামাকাপড় ছেড়ে ভালো করে ধুয়ে কেচে, স্নান করেই তবে ঘরে উঠতে হয়। কারণ জানতে চাইলে অনেকের বাড়ির লোকই হয়তো মঙ্গল-অমঙ্গলের যুক্তি দিয়েছেন।  কিন্তু বিজ্ঞান বলছে মৃতদেহের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করার ক্ষমতা থাকে না। তাই দেহে পচন ধরতেই তা ব্যাকটেরিয়ায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এইসময় যে বা যারা মৃত ব্যাক্তির সংস্পর্শে আসে তারাও ব্যাকটেরিয়ার  দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই কারণেই শ্মশানযাত্রায় থেকে ফিরেই  স্নান করার কথা বলা হয়।

সূর্য গ্রহণের সময় বাড়ি থেকে না বেরোনোর কারণ:

সূর্যগ্রহণ  নিয়ে বহুদিন ধরেই মানুষের মধ্যে একাধিক প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস রয়েছে। এই যেমন সূর্যগ্রহণের সময় এখনও অনেকেই বাড়ির বাইরে বেরোয় না। বহুদিন ধরে প্রচলিত এমনই বেশ কিছু নিয়মকে কুসংস্কার করে বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন অন্য কথা। সূর্য গ্রহণের দিন সূর্য থেকে অতিবেগুনি  রশ্মি নির্গত হয়। যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। ক্ষতিগ্রস্থ হয় চোখের রেটিনাও।  এছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও এই রশ্মি অত্যন্ত ক্ষতিকর। যার প্রভাব পড়ে তার সন্তানের  ওপরেও। তাই খানিকটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই এই ভ্রান্ত ধারণা তৈরী করা হয়েছে।

দোকানের বাইরের লেবু লঙ্কা ঝুলিয়ে রাখ

রাস্তাঘাটে বেরোলে বেশিরভাগ দোকানের বাইরে লেবু লঙ্কা ঝুলতে দেখা যায় যা দেখে অনেকেই মনে করেন  কু-নজর এড়াতেই  দোকানের সামনে সবাই এই লেবু লঙ্কা ঝুলিয়ে রাখে। কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত ভাবেও এর একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। আসলে   মশা-মাছি ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতেই  নতুন লেবু লঙ্কা বাড়ির দরজা বা দোকানের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়। লেবু ও লঙ্কা মানেই  ভিটামিন-সি এর ভালো উৎস। এছাড়াও লেবুতে যে আসিড থাকে তা  পোকামাকড়কে বাধা দেয়।

ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখতে নেই

ছোট থেকেই কমবেশি সকলেই এই প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাসের  সাথে পরিচিত। অনেকেই বলেন ভাঙা আয়নায় মুখ দেখলে আগামী ৭ বছর তাকে দুর্ভাগ্য তাড়া করে। এটাও ইচ্ছাকৃত ভাবে তৈরী করা একটা ধারণা। আসলে অতীতে আয়না এখনকার মতো এত কম দামে পাওয়া যেত  না। আগে কোন মেশিন ছিল না, হাতেই কাঁচ তৈরি করতে হতো। তাই খরচ কমাতেই পূর্বপুরুষরা আয়না ভাঙার সাথে পরিবারের অমঙ্গলের ভ্রান্ত ধারণার প্রচলন করেছিলেন।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *