জয়ললিতা

একটা সময় এমন ছিল যখন ভারতীয় সিনেমায় নায়িকারা ছিলেন নায়কদের সঙ্গ দেওয়ার অংশ মাত্র, যাকে বলে ‘ফিলার’। তাই তখনকার দিনের নায়ক তথা সুপারস্টারদের টেক্কা দেওয়া তো দূরের কথা তাদের সমান পারিশ্রমিকের ধারে কাছেও যেতেন না কোনো অভিনেত্রী। একটা সময় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মুখ্য চরিত্র বা অভিনেত্রী প্রধান সিনেমা তৈরি হতো হাতে গোনা। যদিও নব্বইয়ের দশক থেকেই ধীরে ধীরে  ছবিটা বদলে যেতে শুরু করে।

বলিউডের ‘ হাওয়া হাওয়াই গার্ল’ শ্রীদেবীই সে সময় একমাত্র প্রতি সিনেমা পিছু এক কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিতে শুরু করেছিলেন। যা তখনকার দিনে ছিল ভাবনারও অতীত। সেসময় শ্রীদেবীই  ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা সুপারস্টার। এখন যদিও আমাদের দেশের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক প্রাপ্ত কিংবা সবচেয়ে ধনী অভিনেত্রী অথবা সর্বোচ্চ আয় করা অভিনেত্রীদের কথা উঠলে বলিউড থেকে শুরু করে সাউথের একাধিক নায়িকার নাম উঠে আসে।

কিন্তু একটা সময় ছিল যখন একজন ভারতীয় অভিনেত্রীর পারিশ্রমিকের অংক যে একজন নায়কের সমান হতে পারে সেটাই কেউ ভাবতে পারতেন না। তবে এখনও পর্যন্ত ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে তাবড় অভিনেত্রীরাও  টেক্কা দিতে পারেননি একজন তামিল অভিনেত্রীকে। তাঁর আকাশচুম্বি পারিশ্রমিকের ধারে কাছে আজও পৌঁছাতে পারেনি কেউ। এই তামিল অভিনেত্রীর  সারা জীবনের পারিশ্রমিকের অংক জানলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য যে কারও।

১৯৬০ এর দশকের এই মহিলা সুপারস্টার আর কেউ নন তিনি হলেন জয়রাম জয়ললিতা। আয়, অর্জিত সম্পদ, মালিকানাধীন সম্পত্তি সংখ্যার নিরিখে বিবেচনা করলে ঐশ্বর্য রায়, দীপিকা পাড়ুকোন কিংবা শ্রীদেবীর মোট সম্পত্তির মূল্য জয়ললিতার তুলনায় অনেক কম। তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এককালের দাপুটে অভিনেত্রী জয়ললিতা ছিলেন প্রজন্মের অন্যতম সফল অভিনেত্রী। অভিনয় জীবন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কর্মজীবনে তাঁর উপার্জন হিসাব করতে বসলে লজ্জা পাবেন এখনকার দিনের যে কোনো সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত অভিনেত্রীও।

যদিও পরবর্তীতে জয়ললিতাকে দেশ চিনেছে অন্য পরিচয়ে। ১৯৮০ সালে মাত্র ৩১ বছর বয়সে সিনেমা জগতকে চিরতরে বিদায় জানিয়ে জয়ললিতা পুরোপুরি প্রবেশ করেছিলেন রাজনীতিতে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে পাঁচবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড করেছিলেন জয়ললিতা। এমনকি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে যখন তিনি মৃত্যু শয্যায় তখনও তিনি ছিলেন সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

সালটা ছিল ১৯৯৭। তখন  রাজনৈতিক জীবনে সাফল্যের শিখরে ছিলেন আমাদের দেশের এই মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় চেন্নাইতে জয়ললিতার পোয়েস গার্ডেনের বাসভবনে অভিযান চালিয়ে দেখা যায় জয়ললিতার বাড়ি যেন টাকার পাহাড়।  এককালের বিখ্যাত অভিনেত্রী যিনি পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তাঁর বাড়িতে পাওয়া বিশাল সম্পদের মধ্যে ছিল। ১০, ৫০০ টি শাড়ি, ৭৫০ জোড়া জুতো, ৯১ টি ঘড়ি এবং ৮০০ কেজি রুপো। আর ২৮ কেজি সোনা।

পরবর্তীতে ২০১৬ সালে জয়ললিতার সম্পত্তির সূত্র খুঁজতে আরো একটি তদন্ত করা হয়। যা থেকে জানা যায় জয়ললিতার বাড়ি থেকে ১২৫০ কেজি রুপো এবং ২১ কেজি সোনা পাওয়া যায়। অভিনেত্রী তথা রাজনীতিবিদ জয়ললিতার আইনি অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য ছিল ৪২ কোটি টাকা। ছিল ৮টি গাড়িও।  যদিও সেই সময়কার বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট বলছে জয়ললিতার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৯০০ কোটি টাকা। আর জয়ললিতা  নিজে ঘোষণা করেছিলেন তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১৮৮ কোটি টাকা। অথচ যা বাস্তবে ছিল ঢের ঢের বেশি।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *