ভারত মাতার বীর সন্তানরা আছেন বলেই রাতে দু’চোখের পাতা শান্তিতে এক করতে পরেন প্রত্যেক ভারতবাসী। কখনও গড়ুড় রূপে তো কখনও কোবরা হয়ে আবার কখনও মার্কোসরূপে স্থলপথ,জলপথ এবং আকাশ পথে সারাক্ষণ শত্রু দমনে ভারতের বীর সেনাদের জুড়ি মেলা ভার। এককথায় তাঁরাই হলেন আমাদের দেশের ‘রক্ষা কবচ’। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্যই বারবার রক্ষা পেয়েছে আমাদের জাতীয় পতাকার গৌরব। আসুন দেখে নেওয়া যাক ভারতীয় সেনাবাহিনীর এমনই বেশ কিছু শক্তিশালী ফোর্স-দের ক্রিয়াকলাপ।
জাতীয় নিরাপত্তারক্ষী: সন্ত্রাসবিরোধী ভারতের প্রধান সৈন্যদল এঁরা। দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধ করার কাজে এঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এঁদের এন এস জি ব্ল্যাক ক্যাট কামান্ডোও বলা হয়। সকল রকমের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র চালনায় পারদর্শী এই ভারতীয় সেনারা শারিরীক ও মানসিকভাবে দক্ষ ও নির্ভীক হয়ে থাকেন। পরিবারের সদস্যদের কাছেও এঁদের পরিচয় গোপন রাখতে হয়।
ঘাতক ফোর্স : ব্যাটেলিয়নের সামনে থেকে বর্শাঘাত করার জন্য বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দেয় এই ঘাতক ফোর্স। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যেক পদাতিক ব্যাটালিয়নে একটি প্লাটুন থাকে। শুধুমাত্র শারীরিকভাবে ফিট এবং অনুপ্রাণিত সৈন্যরাই ঘটক প্লাটুনের দিকে যায়। এই ঘাতক সৈন্যরা যে কোনো সময়, যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সক্ষম।
কোবরা : এই বাহিনীর পুরো নাম কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ফর রেজোলিউট অ্যাকশন। এরা আসলে সিআরপিএফ (সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স) এর একটি বিশেষ ইউনিট৷ আভ্যন্তরীন সমস্যা অর্থাৎ নকশালদের দমন করার জন্য ২০০৮ সালে এই বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ভারতে মাওবাদী দমনে এঁরা গুরুত্বপূর্ণ পালন করে চলেছে। গরিলা যুদ্ধের জন্য এঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই বাহিনীর স্নাইপার দল খুবই দক্ষ হয়। ল্যান্ডমাইন পাততে ও নিষ্ক্রিয় করার বিশেষ দক্ষতা ছাড়াও এই বাহিনী বিভিন্ন প্রকার ইশারা ও বন্য প্রাণীর ডাক ডাকতে সক্ষম।
গড়ুড় কমান্ডো ফোর্স: ২০০৪ সালে গঠিত গড়ুড় কমান্ডো ফোর্স হল ভারতীয় বায়ু সেনা বাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট। ভারতীয় এই সেনাবাহিনীতে প্রায় ২০০০-এর বেশি সৈন্য আছেন। একজন প্রশিক্ষণার্থীর সম্পূর্ণরূপে গড়ুড় হয়ে উঠতে প্রায় তিন বছর সময় লাগে। তাই অন্যান্য সমস্ত প্রশিক্ষণ গুলির তুলনায় গড়ুড় হওয়ার প্রশিক্ষণটি সবচেয়ে দীর্ঘতম হয়ে থাকে। পাহাড় ,পর্বত, বন জঙ্গল সব জায়গাতেই এঁরা সমানভাবে কাজ করতে পারেন। রাতের অন্ধকারেও এঁরা নিখুঁত ভাবে কাজ করেন। বায়ুসেনার বিশেষ বিশেষ ঘাঁটির সুরক্ষা, সার্জিক্যাল আক্রমণ ইত্যাদি কাজেও এঁদের ব্যবহার করা হয়।
মার্কোস : এই ভারতীয় সেনাবাহিনী মেরিন কমান্ডো নামেও পরিচিত। ১৯৮৭ সালে ভারতীয় নৌবাহিনী সরাসরি সন্ত্রাস দমনের পাশাপাশি উভচর যুদ্ধ, কর্ম, এবং বিশেষ পুনর্নবীকরণের জন্য উত্থাপিত হয়েছিল। গোটা বিশ্বে মার্কোসের প্রশিক্ষণ সবচেয়ে কঠোর হয়ে থাকে। ছদ্মবেশ ধারণের জন্য এঁরা ‘দাড়িওয়ালা ফৌজ’ নামেও পরিচিত। বিশেষত সমুদ্র অভিযানে পারদর্শী হলেও এঁরা যেকোনো ধরনের ভূখণ্ডে অপারেশন চালাতে পারেন।
এস পি জি : এই সৈনদের প্রধান কাজ হল প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য নেতা মন্ত্রীদের মতো হেভিওয়েটদের নিরাপত্তা দেওয়া। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই ভারতীয় সৈন্যরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের যেকোনো অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিদের দেহরক্ষী হিসাবে কাজ করেন। এঁরা খুব দ্রুত শত্রু দমন করতে সক্ষম। এক কথায় সব্যসাচীর মতোই দুই হাতেই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র চালাতে পারেন এই ভারতীয় সৈন্যরা। নিজের পরিবারের কাছেও এঁদের পরিচয় গোপন রাখতেব হয়।
ফোর্স ওয়ান: ২০০৮ সালে মুম্বইয়ের ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর ২০১০ সালে এই ফোর্স ওয়ান গঠন করা হয়েছিল। যে কোনো সন্ত্রাসবাদী হামলা থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করাই এই ফোর্সের প্রধান কাজ। এই সৈন দলের মূল ইউএসপি হল এরা ভিড়ের মধ্যেও আক্রমণ প্রতিহত করতে পারেন। মাত্র ১৫ মিনিটেরও কম সময়ে সন্ত্রাস দমন করতে সক্ষম এই বাহিনী৷ ইজরায়েলের বিশেষ সৈন দ্বারা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এঁদের। এঁরা সকল প্রকার অস্ত্র চালানোয় সক্ষম।
স্পেশাল ফ্রান্টিয়ার ফোর্স: ভারত চীন যুদ্ধের পর এই বিশেষ সৈনদের তৈরি করা হয়। চীনকে যোগ্য জবাব দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তখন এই বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। কনকনে ঠান্ডার মধ্যেও এঁরা যুদ্ধ করতে পারেন। এই সেনাবাহিনী গুপ্তচরবৃত্তি শেখানর জন্য ’র’এর কাছে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয়। এরা শারীরিক ভাবে কঠোর পরিশ্রমী হয়ে থাকেন।
Leave a Reply