আমাদের দেশে যেকোনো ভারতীয় নোটই অচল জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ছবি ছাড়া। কিন্তু একটা সময় এমন ছিল যখন ভারতীয় নোটে গান্ধীজীর ছবি ছাপা হতো না। তাই লাখ টাকার প্রশ্ন হল মহাত্মা গান্ধীর আগে ভারতীয় নোটে কার ছবি ছিল? এখানে বলে রাখি স্বাধীনতা লাভের পরেই কিন্তু ভারতীয় নোটে মহাত্মা গান্ধীর ছবি ছাপানো শুরু হয়নি। ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট স্বাধীন ভারতে যে টাকা চালু হয়েছিল সেখানে মূলত অশোক স্তম্ভের ছবি ছিল। সেই সঙ্গে ছিল আরও কিছু জাতীয় চিহ্নের ছাপ।
অনেকেই হয়তো জানেন না দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও, আরবিআই ভারতে যে নোট চালু করেছিল তার উপরে রাজা চতুর্থ জর্জের ছবি ছাপা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৪৯ সালে ভারত সরকার প্রথমবারের মতো এক টাকার নোট চালু করেছিল। এই নোটে, রাজা জর্জকে সরিয়ে তার জায়গায় সারনাথের অশোক স্তম্ভ প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।
আরবিআই মিউজিয়ামের ওয়েবসাইট অনুসারে, স্বাধীন ভারতের নোটের জন্য প্রাথমিকভাবে চতুর্থ জর্জের প্রতিকৃতি মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতি দিয়ে প্রতিস্থাপন করার কথা ভাবা হয়েছিল। এর জন্য নকশাও তৈরী করা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সর্বসম্মতিক্রমে মহাত্মা গান্ধীর ছবির পরিবর্তে সারনাথের অশোক স্তম্ভকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এইভাবেই ভারতীয় নোটে পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নেয় অশোক স্তম্ভ। তবে নোটের নতুন ডিজাইন আগের মতোই ছিল।
কিন্তু সেই সব নোট নাকি সহজেই জাল করা যেত। তাই এই সমস্যা মেটাতেই তড়িঘড়ি নোট বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাংক। নোটে অশোক স্তম্ভের পরিবর্তে গান্ধীজীর ছবি আনার স্বপক্ষে সে সময় যুক্তি ছিল জড় বস্তুর তুলনায় জীবন্ত কারও ছবি নকল করা কঠিন।
এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৬৯ সালে প্রথম বার ভারতীয় নোটে মহাত্মা গান্ধীর ছবি ছাপা হয়েছিল। জাতীয় আবেদনের কারণে ভারতীয় নোটের একটি স্থায়ী অংশ করা হয়েছিল গান্ধীজিকে। এর পিছনে একটা কারণও ছিল। আসলে ১৯৬৯ সালের দস্যরা অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর ১০০ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছিল এই দিনেই প্রথমবারের মতো একটি নোট চালু করা হয়েছিল করা হয় সেখানে জ্বলজ্বল করছিল সেবাগ্রাম আশ্রমের ছবিসহ মহাত্মা গান্ধীর ছবি। সেইসাথে ছিল তৎকালীন গভর্নর এল কে ঝা-র স্বাক্ষর।
তবে বর্তমানে ভারতীয় নোটে গান্ধীজীর হাসিমুখের যে ছবিটি দেখা যায় তা ভারতীয় নোটে প্রথম ছেপেছিল ১৯৮৭ সালে। সেবার প্রথম ভারতীয় ৫০০ টাকার নোটে গান্ধীজীর ছবি ছাপানো হয়েছিল। তারপর থেকে ভারতীয় নোটে গান্ধীজীর ছবি ছাপানোটা নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়।
Leave a Reply