ডিম

ডিম মানেই এমন একটি খাদ্য যার ‘একই অঙ্গে নানা রূপ’। যা গুনে শেষ করা যাবে না।  আট  থেকে আশি সকলের কাছেই ডিম অত্যন্ত পছন্দের একটি খাবার। রোজকার খাবারের তালিকায় মাছ মাংস যাই থাকুক না কেন অনেকের কাছেই ডিম একটি  ইমোশন। তাই মাছ মাংস খেতে না চাইলেও ডিমের তৈরি কোনো একটা পদ করে দিলেই শেষ হয়ে যায় এক থালা ভাত। পুষ্টিগুণেও মাছ মাংসের সাথে সমানতালে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে  ডিম।  যা ওজন কমানোর পাশাপাশি বাড়াতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। তাই পুষ্টিগুণের দিক দিয়েও খাদ্য হিসেবে ডিমের জুড়ি মেলা ভার।

ডিমে রয়েছে ভিটামিন ৬, ভিটামিন ১২, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, থিয়ামিন, আয়রন, জিঙ্ক, ভিটামিন ডি-সহ নানা প্রয়োজনীয় উপাদান। শরীরের ভেতরের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে ডিম।  তবে ডিম খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় না থাকলেও পুষ্টিবিদরা মনে করেন সকালের দিকে ডিম খেলেই বেশি উপকার পাওয়া যায়। আসুন জানা যাক সকালের জল খাবারে ডিম খাওয়ার সুফল গুলি কি কি? পাশাপাশি  অনেকেই জানতে চান ডিমের  কুসুমের রঙের পার্থক্যের  আসল কারণ কি? লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কোন  ডিমের কুসুম সাদাটে আবার কোন ডিমের কুসুম হয় গাঢ় হলুদ বা কমলা। অনেকে দাবি করেন যে ডিমের কুসুমের রং যত গাঢ়  হয় সেই ডিম তত বেশি স্বাস্থ্যকর। এই কথাটা কি ঠিক?  কিম্বা ডিম প্রেমীদের এই দাবি কতটা বিজ্ঞানসম্মত? আসুন জানা যাক  বিস্তারিত।

আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, একটি ৫০ গ্রাম ওজনের ডিমে ৭২ ক্যালরি ও ৪.৭৫ গ্রাম ফ্যাট থাকে।বিজ্ঞানীদের দাবি মূলত দু’টি কারণে কুসুমের রং গাঢ় হতে পারে। প্রথমত, মুরগিটি যদি খোলা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায় এবং প্রাকৃতিক খাবার থেকে পুষ্টি পায় তাহলে এবং দ্বিতীয়ত মুরগির খাবারে যদি ক্যারোটিনয়েড নামের বিশেষ ধরনের রাসায়নিক থাকে তাহলে।

গবেষণা বলছে, খামার বা পোলট্রির মুরগির চেয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে পুষ্টিকর খাবার খুঁজে খাওয়া মুরগির ডিমে ভিটামিন ই, ভিটামিন এ আর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই সেই ডিমের রংও বেশী গাঢ় হয়।

কিন্তু প্রশ্ন ওঠে রঙের জন্য ডিমের পুষ্টিগুণে কি কোনো পার্থক্য হয়? এখানে বলে রাখি ডিমের কুসুমের রঙের পার্থক্যের কারণে কিন্তু পুষ্টিগুণের খুব একটা পার্থক্য হয় না। সাদা ও লাল দুই ধরনের ডিমেই পুষ্টিগুণের পরিমাণ প্রায় এক।

এবার জানা যাক সকালের জলখাবারে ডিম খাওয়ার সুফলগুলি কী কী?

ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে

এখনকার দিনে ডায়াবিটিসি, উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি বাড়ছে কোলেস্টেরলের সমস্যা। রোজ ডিম খেলে শরীরে ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএলের মাত্রা বা়ড়ে। ফলে কোলেস্টেরলের ঝুঁকিও কমে যায়।

হার্ট ভাল রাখতে

সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সপ্তাতে ৪-৭টি ডিম খেলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি ৭৫ শতাংশ কমে যায়। তবে হার্টের রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকরাই ডিম খেতে বারণ করেন। তাই হার্টের সমস্যা এড়াতে আগে থেকেই ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

রোগ প্রতিরোধ করতে ডিম দারুন উপকারী।  প্রোটিন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ ডিম রোগের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি জোগায়।  ভিতর থেকেও শরীর সুস্থ  রাখতে ডিমের জুড়ি মেলা ভার।  ডিমের সমস্ত উপাদান যাতে  শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রবেশ করতে পারে তাই ডিম্ সকালে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হলে  ওজন বাড়তে থাকে। তাই ওজন কমানোর জন্য ডায়েটে প্রোটিনে সমৃদ্ধ খাবার হিসাবে ডিম রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। তাই ডায়েট করলেও ডিম খাওয়া বন্ধ করা যাবে না।

চোখের জন্য

ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, লুটেইন, জিঙ্কের মতো পুষ্টিগুণ। চোখ ভাল রাখতে এই উপাদানগুলির গুরুত্ব অপরিসীম। চোখের দৃষ্টিশক্তি থেকে শুরু করে কর্নিয়া ভাল রাখায় ডিমের জুড়ি মেলা ভার।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *