পছন্দের হোক কিংবা দরকারি জিনিস একবার হারিয়ে গেলেই ব্যাস আমাদের দেশে তা ফিরে পাওয়ার আশা নেই বললেই চলে। কিন্তু চোরে ভরা এই দুনিয়ায় সবাইকে নতুন করে পথ দেখাচ্ছে বিশ্বের একমাত্র চোর মুক্ত দেশ। এই দেশে কোন জিনিস হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া যায় সহজেই। এমনকি কোন জিনিস হারিয়ে গেলেও তা ফিরিয়ে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন আজকের দুনিয়াতেও রয়েছে এমনই এক চোর মুক্ত দেশ। যেখানে গিয়ে কেউ কোন কিছু হারিয়ে ফেললেও তা ফিরে পেয়ে যান সহজেই। বিশ্ব বিখ্যাত এই দেশটি হলো জাপান।
আমাদের দেশে এখনও ট্রেনে বাসে চাপলে চোখে পড়ে ‘পকেটমার হইতে সাবধান’ কিংবা, ‘নিজের জিনিস নিজের দায়িত্বে রাখুন’-এর মতো সাবধান বাণী। কলকাতা কিংবা তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের রাস্তাঘাটে দিনে দুপুরে চুরির ঘটনা খুবই সাধারণ একটা বিষয়। ভারতবর্ষে এখানে কোনো জিনিস চুরি যাওয়া মানে মানুষ ধরেই নেন তা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। কিন্তু জাপানে এমনটা হয়না একেবারেই। যার পুরো কৃতিত্বই দেওয়া হয় এখানকার পুলিশ প্রশাসন এবং উন্নত মানের প্রযুক্তিকে।
তার মানে কিন্তু এই নয় যে জাপানে কোন জিনিস কখনও চুরি হয় না। এখানকার সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী জাপানে প্রতিবছর ১২.৬ কোটি মানুষ কিছু না কিছু জিনিস হারায়। তবে তা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ১০০ শতাংশ। তাই জাপানের মানুষজন তাদের হারানো জিনিস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফিরে পান।
জাপানের প্রশাসনিক ব্যবস্থা:
জাপানকে চোর মুক্ত করে তোলা সম্ভব হয় এখানকার আইন কানুন এবং সংস্কৃতিগত বিষয়গুলির কারণে। জাপানের প্রশাসন এতটাই দক্ষতার সাথে কাজ করে যা জানলে কুর্নিশ করবেন আপনিও। জাপানে হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় স্থানীয় কোবান থেকে। এটি আসলে জাপানের দুই পক্ষের একটি পুলিশ কেবিন। গোটা জাপান জুড়ে রয়েছে ৬৩০০ টি কোবান বা ছোট পুলিশ স্টেশন। যেগুলি কৌশলগত ভাবে স্থাপন করা হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ যাতে সহজেই পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছে এই কোবান।
তিন মাস ধরে চলে মালিকের খোঁজ
সেদেশের কর্তব্যরত আধিকারিকরা খুঁজে পাওয়া জিনিসগুলো প্রথমেই রাখেন ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ সেন্টারে। এরপর তদন্ত করে মালিকের খোঁজ শুরু হয়। এছাড়াও রয়েছে কেন্দ্রের একটি লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইট থেকেই তালিকা দেখে সাধারণ মানুষ তাদের হারানো জিনিস খুঁজতে পারেন। সেদেশের নিয়ম অনুযায়ী হারিয়ে যাওয়া জিনিসের সঠিক মালিককে তিন মাসের মধ্যে খুঁজে না পেলে, সেটি যিনি খুঁজে পেঁয়েছেন তাঁর কাছে অথবা পৌর সরকারকে দিয়ে দেওয়া হয়।
জাপানের ব্যস্ত রেলওয়ে স্টেশন:
জাপানের মতো দেশের রেলওয়ে স্টেশনগুলি খুব ব্যস্ত, এই রেলওয়ে স্টেশনগুলিতে হারিয়ে যাওয়া জিনিসগুলি পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও জাপানকে চোর মুক্ত করতে এই দেশের সংস্কৃতিরও বিরাট অবদান রয়েছে। ছোট থেকেই এখানকার স্কুলের বাচ্চাদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয়।
Leave a Reply