বিয়ে ঘোড়া

বিয়ে মানে অত্যন্ত পবিত্র একটি বন্ধন। যার মধ্যে দিয়ে শুধু দুটি মানুষের সম্পর্কই নয় মজবুত হয় দুই পরিবারের সম্পর্কও। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিয়ে নিয়ে প্রচলিত রয়েছে বেশ কিছু  রীতিনীতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাস। সনাতন হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী মানুষদের বিয়েতে যে সমস্ত রীতিনীতি প্রচলিত রয়েছে তা শুধু তাঁদের মনের বিশ্বাস নয় তার সাথে গভীরভাবে যুক্ত রয়েছে জ্যোতিষ শাস্ত্র এবং ধর্মীয় তাৎপর্যও।

সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ের গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম। সপ্তপদী, মাল্যদান, গাঁটবন্ধন, সিঁদুরদান  কিংবা কন্যা সম্প্রদান বিয়ের এমনই বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানগুলি আসলে জীবনের বিভিন্ন দিক ও দায়িত্বের প্রতীক। আসলে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ দুজন মানুষের সম্পর্ক মজবুত করতেই এসব রীতিনীতি পালন করা হয়। যা একেঅপরের প্রতি তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে মনে করিয়ে দেয়।

তাই হিন্দু বিয়ে এবং তার সাথে যুক্ত রীতিনীতি শুধুমাত্র সনাতন সম্প্রদায়ের অনুসারী নয় বরং জীবনের মৌলিক অধিকার ও মূল্যবোধেরও  পরিচয় বহন করে। তেমনি বেশিরভাগ হিন্দু পরিবারে দেখা যায় বিয়ে করার আগে হবু বর ঘোড়ায় চেপে বিয়ে করতে আসে। হিন্দু বিয়েতে বরের ঘোড়ায় চড়ে কনের বাড়িতে যাওয়ার সাথে যুক্ত রয়েছে জ্যোতিষশাস্ত্রীয় তাৎপর্যও। বহু মানুষের বিশ্বাস এই প্রথার মাধ্যমে বর তাঁর সমস্ত ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে পারেন। সেইসাথে তাঁর ওপর পড়ে সন্ধ্যা ও শনিদেবের কৃপা দৃষ্টিও। এই রীতির মাধ্যমে নবদম্পতির জীবনে আসে ব্যাপক সুখ-সমৃদ্ধিও।

সূর্য দেবতার গল্প- হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী বহু মানুষের আরাধ্য  সূর্য দেব। এই সূর্য দেবতার রয়েছে সাতটি ঘোড়া, যা আসলে আমাদের সাতটি ইন্দ্রিয়ের প্রতীক। প্রসঙ্গত সূর্য দেবতার স্ত্রী ছিলেন দেবী সন্ধ্যা। তিনি এই ঘোড়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। আর প্রথা মেনে নতুন বর যখন ঘোড়ায় চেপে বিয়ে করতে যান তখন তিনিও তাঁর সমস্ত ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে।

সন্ধ্যা দেবীকে নিয়ে প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনি-  বহু প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনি মতে, সূর্য দেবের পত্নী সন্ধ্যা দেবী একসময় ঘোড়ার অবতার গ্রহণ করেছিলেন। সেইসময়  তাঁর একটি পুত্র হয়েছিল। তাই তাঁকে ঘোড়ার রানি বলা হয়। তাই যে সমস্ত বর ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যায়  সে এই সন্ধ্যা  রানির আশীর্বাদ লাভ করে। যার মাধ্যমে হবু বর  তার ইন্দ্রিয়ের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করে।

শনি দেবের গল্প- অনেকেই  ঘোড়াকে শনিদেবের বাহন বলে বিবেচনা করেন। তাই  বিয়ের এই রীতি মেনে  হবু বর যখন ঘোড়ায় চড়ে, তখন তিনি শনিদেবের দৃষ্টি দ্বারা সুরক্ষিত হন। শনিদেবের আশীর্বাদেই সদ্য বিবাহিত নবদম্পতি তাঁদের ভবিষ্যতের জীবনে সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধি লাভ করেন।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *