ধনী মন্দির

হিন্দু ধর্ম-সংস্কৃতির পীঠস্থান ভারতবর্ষ মানেই মন্দিরের দেশ। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী আসমুদ্রহিমাচল ভারতের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য মন্দির। আর প্রত্যেক মন্দিরের সাথেই  জড়িয়ে রয়েছে তাদের নিজস্ব ইতিহাস। প্রত্যেক বছর ভারতে তীর্থযাত্রা করতে ভীড় জমান দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক। ভারতীয় ঠাকুর দেবতাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে অনেকেই টাকা পয়সা সহ সোনা কিংবা হীরের মত বহু মূল্যবান রত্ন দান ধ্যান করে থাকেন। যার ফলে বছর ফুলে ফেঁপে উঠছে  ওই মন্দিরগুলি। অনেকেই হয়তো জানেন না আমাদের দেশেই রয়েছে এমনই পাঁচটি মন্দির যা বিশেষ সবচেয়ে ধনী মন্দির হিসেবে পরিচিত। আসুন বিস্তারিত  জেনে নেওয়া যাক ভারতের এই ধনী মন্দির গুলির সম্পর্কে।

শ্রী পদ্ভনাভ স্বামী মন্দির : আমাদের দেশের সবচেয়ে ধনী মন্দির রয়েছে কেরালার তিরুবনন্তপুরমে। এখানকার শ্রী পদ্ভনাভ স্বামী মন্দিরটি বিশ্ববিখ্যাত। যা দর্শন করতে বছর বছর ছুটে আসেন গোটা পৃথিবীর নানান প্রান্তের মানুষ। এই মন্দিরের ভুগর্ভেই একসময় বহু মূল্যবান গুপ্তধনের সন্ধান মিলেছিল। জানলে অবাক হবেন সেসময় এই মন্দির থেকেই উদ্ধার হয়েছিল প্রায় হাজার কোটি টাকার মূল্যবান হিরের বস্তা। সেই থেকেই এই মন্দিরটি ভারতের সবচেয়ে ধনী মন্দির বলে পরিচিত। সোনা-হীরে মিলিয়ে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের বহু মূল্যবান গুপ্তধন রয়েছে এই মন্দিরে। এই মন্দিরের সোনার তৈরি মূর্তিটির আনুমানিক মূল্য ৫০০ কোটি টাকা।

তিরুমালা তিরুপতি ভেঙ্কটেশ্বর মন্দির : পৌরাণিক মতে অন্ধ্রপ্রদেশের এই বিখ্যাত মন্দিরেই একসময় বিরাজমান ছিলেন ভগবান বালাজি। কথিত আছে তিনি ঈশ্বরের কোষাধ্যক্ষ কুবেরকে বিশাল ঋণ দিতে হয়েছিল। সেই ঋণ নাকি এখনও পরিশোধ করে চলেছেন। এই মন্দির এবং  বিগ্রহ দর্শন করলেই নাকি ভক্তদের মনের সব ইচ্ছা পূরণ হয়। এই মন্দির দর্শনে এসে ভক্তরাও বিপুল অর্থ  আর মূল্যবান জিনিস দান করেন। প্রতিবছর নাকি এই মন্দিরে ৬৫০ কোটি টাকা দান করেন ভক্তরা। জানলে অবাক হবেন এই মন্দিরে রয়েছে ৯ টন সোনা এবং ১৪ হাজার কোটি টাকার এফডি। বহু মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, এই মন্দিরের আরাধ্য দেবতা ভগবান বিষ্ণু। ভগবান শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর এবং তার সহধর্মিনী পদ্মাবতীর বাস এই মন্দিরে।

শিরডি সাই বাবা মন্দির: এরপরেই রয়েছে শিরডিতে অবস্থিত শিরডি সাই বাবা মন্দির। যা দেশের তৃতীয় ধনী মন্দির বলে পরিচিত। দারিদ্র্যের সবচেয়ে বড় বিচারক হিসেবে শ্রী সাইবাবাকে উত্‍সর্গ করা হয়েছে এই মন্দির। ভক্তরা জানেন নিজের প্রথম জীবনে সাইবাবা ফকির হিসেবে জীবনযাপন করেছিলেন। সেসময় ভিক্ষাবৃত্তি করেই  দিন কাটতো তাঁর। বর্তমানে তাঁর এই মন্দিরের বার্ষিক আয় ৯০০ কোটি টাকা। এই মন্দিরের ব্যাংকে জমা রয়েছে ২৫০০ কোটি টাকা,শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এটাই সত্যি।

সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির : ভারতের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মন্দির হল মুম্বাইয়ের  সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির। ভগবান গণেশকে উত্‍সর্গ করে তৈরী বিখ্যাত এই  হিন্দু মন্দিরে প্রতিনিয়ত ব্যাপক ভক্ত সমাগম হয়। দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন বিঘ্নহর্তার কাছে তাঁদের মনের সুখ-দুঃখের কথা জানাতে। সারা দিন এই মন্দিরে চলতে থাকে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ভক্তদের মনে বিস্ময় জাগে এই মন্দিরের সোনার দেওয়াল দেখে। যা তৈরী হয়েছে  ৩. ৭ কেজি সোনার পাত দিয়ে। সিদ্ধিদাতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশ,বিদেশের বহু ভক্ত বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস দান করে যান এই মন্দিরে। যা থেকে প্রতিবছর ১২৫ কোটি টাকা আয় হয় এই মন্দিরের।

বৈষ্ণো দেবী মন্দির : ভারতের বিখ্যাত তীর্থস্থান গুলির মধ্যে অন্যতম হল জম্মু-কাশ্মীরের মাতা বৈষ্ণোদেবীর মন্দির। উপত্যকার ত্রিকূট পর্বতের উপর অবস্থিত এক মিলিয়ন বছরের পুরনো গুহার ভিতরে অবস্থিত এই বিখ্যাত মন্দিরটি হল এদেশের দুর্গম তীর্থস্থানগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। যা ৫,২০০ ফুট উচ্চতায় এবং কাটরা থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রত্যেক বছর ১০ মিলিয়নেরও বেশি তীর্থযাত্রী এই মন্দির দর্শনে আসেন। তিরুপতির পর এটিই নাকি দ্বিতীয় সর্বাধিক দর্শনীয় মন্দির। জানলে অবাক হবেন প্রতি বছর মন্দিরটি অনুদান হিসাবে ৫০০ কোটি টাকা পায় এবং এই মন্দিরের সংরহে রয়েছে ১.২ টন সোনা।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *