ভারতীয় নোট মাত্রই জ্বলজ্বল করে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ছবি। তাও আবার একটা নয় দু-দুটো। যার মধ্যে একটা স্পষ্টভাবে উপর থেকেই বোঝা যায় আর একটা জলছবি। যা নোট শনাক্তকরণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই গান্ধীজীর ছবি ছাড়া যে কোন ভারতীয় নোট শুধুমাত্র কাগজের টুকরো বলেই বিবেচিত হয়। কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে কেন ভারতীয় নোটে শুধুমাত্র মহাত্মা গান্ধীরই ছবি থাকে? এর সঠিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে না পারলেও অনেকে দাবি করেন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে গান্ধীজীর অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। গান্ধীজীর সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার কথা মাথায় রেখেই স্বাধীনতার বহু আগেই তিনি দেশবাসীর কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন জাতির জনক হিসেবে।
তাঁকে চেনেন না এমন ভারতীয় খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু এক্ষেত্রে বারবার প্রশ্ন ওঠে ভারত স্বাধীন করা শুধুমাত্র গান্ধীজীর একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাঁর সাথে জড়িত রয়েছে ভারত মাতার অসংখ্য বীর সন্তানের আত্মত্যাগ আর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামও। তাহলে কেন শুধুমাত্র মহাত্মা গান্ধীর ছবিই ভারতীয় নোটে ছাপা হয়? কারও কারও মতে মহাত্মা গান্ধীর একার চেষ্টায় ভারত স্বাধীন হয়নি ঠিকই, কিন্তু তাঁর অহিংসা নীতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে। যা পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের জাতীয় নীতি হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
এখানে বলে রাখি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই কিন্তু ভারতীয় নোটের মহাত্মা গান্ধীর ছবি ছাপানো শুরু হয়নি। তাই ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে যে টাকা চালু হয়েছিল সেখানে মূলত অশোক স্তম্ভের ছবি ছিল। সেই সঙ্গে ছিল আরও কিছু জাতীয় চিহ্নের ছাপ। কিন্তু সেই সব নোট নাকি সহজেই জাল করা যেত। তাই এই সমস্যা মেটাতেই তড়িঘড়ি নোট বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাংক। নোটে অশোক স্তম্ভের পরিবর্তে গান্ধীজীর ছবি আনার স্বপক্ষে সে সময় যুক্তি ছিল জড় বস্তুর তুলনায় জীবন্ত কারও ছবি নকল করা কঠিন।
তবে সে সময় সব নোটেই গান্ধীজীর ছবি ছিল না। ১৯৬৯ সালে আরবিআই শুধুমাত্র ভারতীয় ১০০ টাকার নোটে মহাত্মা গান্ধীর ছবি ছাপিয়ে ছিল। তবে বর্তমানে ভারতীয় নোটে গান্ধীজীর হাসিমুখের যে ছবিটি দেখা যায় তা ভারতীয় নোটে প্রথম ছেপেছিল ১৯৮৭ সালে। সেবার প্রথম ভারতীয় ৫০০ টাকার নোটে গান্ধীজীর ছবি ছাপানো হয়েছিল। তারপর থেকে ভারতীয় নোটে গান্ধীজীর ছবি ছাপানোটা নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়।
পরবর্তীতে ভারতীয় নোটের ধরণ থেকে নকশা বদল এসেছে একাধিক ক্ষেত্রে। কিন্তু একই আছে গান্ধীজির ছবি। প্রথম থেকেই টাকায় মহাত্মার একটি বিশেষ ছবিই ব্যবহার করা হয়। ১৯৪৬ সালে গান্ধীজি ভাইসরয় হাউসে মায়ানমার ও ভারতের তৎকালীন ব্রিটিশ স্টেট সেক্রেটারি ফ্রেডরিক পেথিক লরেন্সের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন তখনই নাকি এই ছবি তোলা হয়েছিল ।
Leave a Reply