হিন্দু ধর্ম রীতি

কথা’তেই আছে ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর’। হিন্দু ধর্মে বহুযুগ ধরে প্রচলিত রয়েছে এমনই বেশ কিছু নিয়মরীতি। নমস্কার করা থেকে মাথায় টিকি কিংবা মন্দিরে ঘণ্টা বাজানো থেকে নদীর জলে কয়েন ফেলা যা আপাতদৃষ্টিতে কুসংস্কার বলেই উড়িয়ে দেয় অনেকে। কিন্তু আপনারা কী জানেন হিন্দু ধর্মের এই সমস্ত পুরনো প্রথার সাথে রীতিমতো যোগ রয়েছে বিজ্ঞানের। আর সেই প্রাচীনকাল থেকেই পালিত হচ্ছে এই সমস্ত নিয়ম-রীতি। আসুন জানা যাক এই প্রথাগুলির পিছনে থাকা আসল বৈজ্ঞানিক কারণগুলি কি কি?

হাতজোড় করে নমস্কার: ঠাকুর দেবতাকে প্রণাম করার পাশাপাশি কাউকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্যও হাতজোড় করে নমস্কার করা হয়। এইভাবে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণ। হাতজোড় করার সময় দুই হাতের পাঁচটি আঙুলের ডগা পরস্পরের সঙ্গে মিলে গেলে আমাদের চোখ, কান এবং মস্তিষ্কের প্রেশার পয়েন্টে চাপ পড়ে। এই চাপই নাকি ওই ব্যক্তিকে মনে রাখার জন্য আমাদের সাহায্য করে।

মন্দিরে ঘণ্টা বাজাই কেন? হিন্দুশাস্ত্র মতে, মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি অশুভ শক্তিকে দূরে রাখে। তবে বিজ্ঞান বলছে, ঘণ্টাধ্বনি আমাদের মস্তিষ্ক পরিষ্কার করে। টানা ৭ সেকেন্ড ধরে ইকো মোডে ঘণ্টাধ্বনি বজায় থাকে। এই সাত সেকেন্ডে শরীরের সাতটি আরোগ্য কেন্দ্র সক্রিয় হয়। যার ফলে মস্তিষ্কের সমস্ত নেগেটিভ চিন্তাধারা চলে যায়।

মাথায় টিকি রাখা: শুশ্রুত ঋষি মাথায় মুখ্য স্পর্শকাতর অংশটিকে অধিপতি মর্ম হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। যা সমস্ত স্নায়ুর যোগসূত্র। শিখা বা টিকি মাথার ওই অংশকে নিরাপত্তা দেয়। শরীরের নিম্নাংশ থেকে মস্তিষ্কের নীচে, ব্রহ্মরন্ধ্রে সুশুম্না স্নায়ু পৌঁছয়। এটি জ্ঞানের কেন্দ্র।

নদীতে কয়েন ফেলা: নদীতে কয়েন ফেলার সাথে যোগ রয়েছে ভাগ্য পরিবর্তনের। এর পিছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণও। অতীতে তামার মুদ্রা প্রচলিত ছিল। আর তামা আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারি ধাতু। অতীতে নদীই ছিল পানীয় জলের একমাত্র উত্‍‌স। তাই আমাদের শরীরে জলের মাধ্যমেই যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে তামা যায় সেই জন্যই পূর্বপুরুষরা এই প্রথা চালু করেছিলেন।

তুলসি পুজো কেন করি? হিন্দু ধর্মে তুলসিকে মা মনে করা হয়। ঈশ্বরসম তুলসি মানবজাতির জন্য সঞ্জিবনী। এই গাছের রয়েছে একাধিক ঔষধি গুণ। অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে পরিচিত  তুলসি অনাক্রম্যতা কিংবা আয়ু বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষকে আরও একাধিক রোগমুক্ত করে। বাড়িতে তুলসি গাছ রাখলে, তা কীটপতঙ্গ বা মশা ঘরে ঢুকতে পারে না।

তিলক করা: দুই ভুরুর মাঝখানের অংশেই রয়েছে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু। তাই অংশে তিলক পরলে তা শক্তি অপচয় রোধ করে। লাল রঙের কুমকুম মানবদেহে শক্তি বজায় রাখার পাশাপাশি মনোযোগের বিভিন্ন স্তর নিয়ন্ত্রণ করে। কপালে কুমকুম পরার সময় তা দুই ভুরুর মাঝে এবং আদ্য-চক্রে চাপ ফেলে। এতে মুখের পেশিতে রক্ত চলাচল ভালোভাবে হয়।

বছরে দু’বার নবরাত্রি কেন ? সারা বছরে এই ২ মাসেই  ঋতু পরিবর্তন হয়। মানুষ যাতে পরিবর্তিত ঋতুর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে তাই এই নবরাত্রির ৯ দিন উপোস করে সবাই।  এই ক’দিন নুন বা চিনি খায় খাওয়া কমে যায় সকলের। যা মানুষের শরীর পরিষ্কার করে দেয় আর তার জন্য মানবদেহে মানুষের পজিটিভ এনার্জি, এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

অশ্বত্থ গাছের পুজো কেন করি? ছায়া দেওয়া ছাড়া অশ্বত্থ গাছের কোনও উপকারিতা নেই। কিন্তু এটিই একমাত্র গাছ যা রাত্রিবেলাতেও অক্সিজেন উত্‍‌পন্ন করে। তাই সম্ভবত এই গাছ বাঁচানোর জন্যই আমাদের পূর্বপুরুষরা  এর পুজো করা চালু করেছিলেন।

পায়ের আঙুলে আংটি পড়া: প্রচলিত নিয়ম মেনে বিবাহিত হিন্দু মহিলারা পায়ের দ্বিতীয় আঙুলে আংটি পরেন। এর পিছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। আসলে ওই দ্বিতীয় আঙুলের একটি স্নায়ু জরায়ু হয়ে হৃদযন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাই এই আঙুলে আংটি পড়লে, তা জরায়ুকে সুস্থ রাখে। যার ফলে রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয় এবং নিয়মিত মাসিক হয়।

মেহেন্দি কেন লাগানো হয়: বিয়ের সময় চাপ এবং চিন্তা অনেক বেশি থাকে। যা থেকে মাথাব্যথা, এমনকি জ্বর  হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঔষধি গুণ সম্পন্ন মেহেন্দি শরীর ঠান্ডা রাখে এবং স্নায়ুকে চিন্তামুক্ত রাখে। তাই হাতে এবং পায়ে মেহেন্দি লাগানোর প্রথা বহুদিনের।

ঝাল দিয়ে খাওয়া শুরু, মিষ্টি দিয়ে শেষ: ছোটবেলা থেকেই খাওয়ার পাতে সবসময় মশলাদার বা ঝাল খাওয়ার আগে খেয়ে শেষে মিষ্টি খাওয়া হয়। কারণ মশলাদার বা ঝাল খাবার সহজে হজম হলেও মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেট হজম হজম করতে সময় লাগে। তাই খাবারের শেষ পেতেই মিষ্টি খাওয়া হয় ।

দীপাবলির আগে ঘর পরিষ্কার: দীপাবলির আগেই শেষ হয় বর্ষাকাল। বৃষ্টির জন্য অনেকের ঘর-বাড়িই সারাই এবং পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয়। তাই এইসময়  ঘরদোর পরিষ্কার পরিছন্ন করে সাজিয়ে তোলা হয়।

মাটিতে বসে খাদ্যগ্রহণ: মাটিতে বসে খাবার খাওয়ার চল বহুদিনের। এই সময় সবাই সুখাসনে বসেন। আর সুখাসনে বসে খাবার খেলে তা হজমশক্তি বাড়িয়ে দেয়।। যা চেয়ারে বসে বা দাঁড়িয়ে খেলে হয় না।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *