গোটা পৃথিবীতে ভারতবর্ষের মতো বৈচিত্র আর কোন দেশে নেই। আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক অজানা তথ্য। গোটা বিশ্বের মানচিত্রে ভারতবর্ষ মানেই ধর্মীয় সংস্কৃতির পীঠস্থান। ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য দেব দেবীর মন্দির। তবে বেশিরভাগ মন্দিরগুলিতেই দেখা যায় প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হচ্ছে ফল, ফুল কিংবা মিষ্টির মতো প্রসাদ।
কিন্তু জানলে অবাক হবেন ভারতবর্ষে এমনও একটি মন্দির রয়েছে যেখানে প্রসাদ হিসাবে ফল,ফুল কিংবা মিষ্টি পাওয়ার আশায় গেলে আশাহত হতে হবে ভক্তদের। কারণ এই মন্দিরে প্রসাদ হিসাবে বিতরণ করা হয় জ্ঞান। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন ভারতের বুকেই অবস্থিত স্বয়ং দেবাধিদেব মহাদেবের এই বিখ্যাত মন্দিরে প্রসাদ হিসাবে ফল,ফুল লাড্ডু কিংবা মিষ্টি নয় ভক্তদের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে বই।
বলা হয় বিদ্যা এমনই একটি জিনিস যা বিতরণ করলে বাড়ে বই কমেনা। বিদ্যা দানের সেই ধর্ম মেনেই ভারতের এই শিব মন্দিরটিতে প্রচলিত রয়েছে এক সুন্দর রীতি। কেরলের ত্রিশূর জেলার এই শিব মন্দিরে শুধু প্রসাদ হিসেবেই বই বিতরণ করা হয় না। সেইসাথে ভক্তরাও দেবতার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য হিসেবে নিয়ে আসেন একটি করে বই। কারণ এখানকার মানুষের বিশ্বাস এই মন্দিরের দেবতা কোন ফল-ফুল কিংবা মিষ্টিতে নয় তুষ্ট হন জ্ঞানে।
তাই পড়াশোনার জিনিসই এই মন্দিরে পুজোয় নৈবেদ্য হিসেবে চড়ানো হয়। এই মন্দিরের পুরোহিতরা মন্দিরে জমতে থাকা পড়াশোনার সমস্ত সামগ্রী পুজোর পর বিলিয়ে দেন ভক্তদের মধ্যেই। তাই ত্রিশূর গ্রামের এই মন্দিরে আসা ভক্তরা প্রসাদ হিসেবে কেউ পান পাঠ্যবই তো কেউ পেয়ে যান লেখার সামগ্রী। এমনকি কারও কারও হাতে আসে জ্ঞানসমৃদ্ধ বিভিন্ন ব্রোশিওর কিম্বা সিডি এবং ডিভিডি।
প্রসঙ্গত সুবিধাভোগী কিছু মানুষ যুগে যুগে অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারকে ধর্মের সাথে জুড়ে দিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটে এসেছেন। বলা বই একমাত্র শিক্ষা আর জ্ঞানের আলোই পারে সমস্ত অন্ধকার ঘুচিয়ে দিতে। সেদিক দিয়ে ত্রিশূরের এই গ্রামীণ মন্দিরটি নিঃসন্দেহে এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে গোটা দেশবাসীকে। প্রত্যেক বছর বিজয়া দশমীতে এই মন্দিরে বিরাট ভক্ত সমাগম হয়।
যেসব শিশুদের সবে অক্ষরজ্ঞান হয়েছে তাদের নিয়েই এই গ্রামের এই মন্দিরের জড়ো হন আশেপাশের সমস্ত গ্রামের মানুষ। স্থানীয়দের বিশ্বাস এতে করে ওই শিশুদের পড়াশোনায় মন বসবে। প্রচারের আলো আসার পর ইদানিং এই মন্দিরে বাড়ছে বিদেশী পর্যটকদের ভিড়। ন্যাশনাল হেরিটেজ সেন্টারের ক্যাম্পাসের মধ্যেই রয়েছে এই মন্দির। যার রক্ষণাবেক্ষণের ভার রয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্টিফিক হেরিটেজ-এর উপর।
Leave a Reply