বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলির তালিকায় একেবারে শুরুর দিকে রয়েছে চীন। আমেরিকার বহুজাতিক ব্রোকারেজ় সংস্থা ‘বার্নস্টাইন’-এর দাবি অর্থনৈতিকভাবে চীনের থেকে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে ভারত। তবে ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই পাঁচ বছরে একটি ক্ষেত্রে চিনকে টপকে গিয়েছে ভারত। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে বিশ্বখ্যাত পরামর্শদাতা সংস্থা ‘বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ’ (বিএসজি)। এই রিপোর্ট অনুযায়ী আমেরিকায় রফতানির যুদ্ধে চীনকে একেবারে গো-হারা হারিয়ে দিয়েছে ভারত।
‘বিএসজি’র ওই রিপোর্টটির নাম ‘হারেনসিং টেকটনিক শিফ্ট ইন গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং’। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮-২২ সালের মধ্যে ভারতে শিল্পোৎপাদন ৪৪ শতাংশ অর্থাৎ ২,৩০০ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএসজি-র রিপোর্ট অনুযায়ী ওই কয়েক বছরের মধ্যে আমেরিকায় রফতানিতে চীনের পতন হয়েছে ১০ শতাংশ। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে চীনের মতো শক্তিধর দেশকে আমদানির ক্ষেত্রে কী ভাবে টেক্কা দিল ভারত? ‘বিএসজি’র রিপোর্ট বলছে চীনের তুলনায় ভারতে রফতানিযোগ্য সামগ্রী এ দেশের কারখানায় তৈরি করতে তুলনামূলক ভাবে কম মজুরি লাগে। তাই সমস্ত সামগ্রী আমেরিকায় রফতানি করা হলে চীনের তুলনায় সেগুলির গড় মূল্যও কম হয় ।
শুধু তাই নয় ভারতীয় পণ্য সামগ্রীর উৎপাদনশীলতা, লজিস্টিক্স, দাম বা সেগুলি তৈরি করতে যে বিদ্যুৎ খরচ হয় তা চীনের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম হয়। ‘বিএসজি’র দাবি আমেরিকায় রফতানিযোগ্য চীনের সামগ্রীর দামে মাত্র ৪ শতাংশের সুবিধা পাওয়া যায়। তবে ওই একই সামগ্রী আমেরিকায় তৈরি করা হলে, তা ২১ শতাংশ বেশি দামি হয়।
এছাড়াও আরও কয়েকটি কারণে লক্ষ্মী লাভ হচ্ছে ভারতের। বিশ্ব জুড়ে অতিমারি, বাণিজ্যক্ষেত্রে মতপার্থক্য, আমেরিকা-চীনের বিশ্ববাণিজ্য যুদ্ধ বা সরবরাহের ক্ষেত্রে নানা বাধাবিপত্তিতে গত কয়েক বছরে বেশ সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে ভারত।
ভারতের কারখানায় তৈরি শিল্পসামগ্রীর মজুরি চীনের তুলনায় অনেক সস্তা হয়। যদিও উৎপাদনশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৮-২২ সালে শ্রমিকের মজুরিতে ভারতের খরচ বেড়েছে। হ্যদিও তারপরেও ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ মেক্সিকো বা চিনের তুলনায় ভারতে সেটি কম। বিগত পাঁচ বছরে বেশ কয়েকটি সামগ্রী আমেরিকায় রপ্তানিতে বিরাট সাফল্য পেয়েছে ভারত। ওই আমেরিকায় সেমিকন্ডাক্টর এবং ওই ধরনের জিনিস রপ্তানিতে ১৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। অন্য দিকে, এক্ষেত্রে চীনে তৈরি ওই সমস্ত জিনিস রপ্তানির হার হয়েছে ২৯ শতাংশ নিম্নমুখী ।
গাড়ির যন্ত্রাংশ রপ্তানিতে ভারতের লাভ হয়েছে ৬৫ শতাংশ। অন্যদিকে মেকানিক্যাল যন্ত্রাংশ রপ্তানিতে তা ৭০ শতাংশ বলে দাবি বিএসজি’র। চীনের সঙ্গে রপ্তানির ‘যুদ্ধে’ ভারত এগিয়ে গেলেও ‘বার্নস্টাইন’-এর রিপোর্টের দাবি, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চীনের তুলনায় ২০ বছর পিছিয়ে ভারত।
Leave a Reply