ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে প্রত্যেকের জন্যই আরামদায়ক পোশাকের কথা উঠলে প্রথমেই আসে টি-শার্টের নাম। বিশেষ করে তাড়াহুড়ো করে যখনই কোথাও বেরনোর থাকে সকালেরই প্রথম পছন্দ টি-শার্ট। প্রচন্ড গরমের হাত থেকে রেহাই পেতেও টি-শার্ট অত্যন্ত আরামদায়ক একটা পোশাক। একটা সময় শার্ট বলতে সাধারণত ছেলেদের পোশাককেই বোঝানো হতো। তবে এখন মেয়েদের কাছেও এই পোশাকেরব ব্যাপক চাহিদা।
তবে অনেকেই নিশ্চই খেয়াল করেছেন শার্টের সাথে টি-শার্টের রয়েছে বেশ কিছু পার্থক্য। টি-শার্ট তৈরির আসল কারণটাও কিন্তু বেশ মজার। সাধারণত যেকোনো শার্টেই কলার আর সামনে বোতাম থাকে, কিন্তু টি-শার্টে কলার কিংবা বোতাম থাকে না। নরম গেঞ্জির কাপড়ের তৈরি গোল গলার এই পোশাক মাথা দিয়ে গলিয়েই পরা যায়। দামেও খুবই সহজলভ্য। ছোট বড় নির্বিশেষে যে কোনো বয়সের মানুষের জন্যই দারুন আরামদায়ক এই পোশাক।
প্রসঙ্গত টি শার্ট তৈরির ইতিহাসও কিন্তু বেশ মজার। শুনতে অবাক লাগলেও এই পোশাক নাকি তৈরি হয়েছিল সিঙ্গেল ব্যাচেলরদের কথা ভেবে।সব থেকে মজার বিষয় হল সে সময় মনে করা হতো সিঙ্গেল ব্যাচেলরদের জামার বোতাম ছিঁড়ে গেলে তা সেলাই করে দেওয়ার কেউ নেই। তাই সেই সমস্যা সমাধানের জন্যই নাকি এই অভিনব পোশাক তৈরির ভাবনা এসেছিল। এই ভাবনাকে কাজে লাগিয়েই সেসময় একটি বিখ্যাত মার্কিন পত্রিকায় টি শার্টের বিজ্ঞাপনে লেখা হয়েছিল ‘যে সমস্ত যুবক অবিবাহিত এবং সিঙ্গেল। যারা জামার বোতাম ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে নিতে পারবেন না, এ জামা তাদের জন্যই’। অভিনব এই বিজ্ঞাপন সে সময় ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। যার ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই টি-শার্ট ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তাই সূত্রপাত মার্কিন দেশে হলেও অল্পদিনের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে।
১৯০৪ সাল নাগাদ কুপার নামের একটি বিখ্যাত অন্তর্বাস প্রস্তুতকারী সংস্থা এই বিশেষ ধরনের জামা তৈরি করেছিল। ১৯২০ সালে প্রকাশিত দিস সাইড অব প্যারাডাইস-এ প্রথম এই বিশেষ ধরনের পোশাককে টি-শার্ট বলে উল্লেখ করেছিলেন মার্কিন লেখক ফ্রান্সিস স্কট কি ফিৎসগেরাল্ড। যদিও অনেকেই দাবি করেন শুধু সিঙ্গেলদের কথা ভেবেই এই টি শার্ট তৈরি হয়নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মার মার্কিন নৌবাহিনীর জন্যই এই টি-শার্ট তৈরি করা হয়েছিল।এই তথ্যের স্বপক্ষে বেশ কিছু প্রমাণও রয়েছে।
কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না টি-শার্টের সাথে কেন সর্বক্ষণ ‘টি’ জুড়ে থাকে? টি-শার্টের এই ‘টি’-এর অর্থ কি? এর পিছনেও লুকিয়ে রয়েছে দুটি অজানা কারণ। যার মধ্যে প্রথম কারণটি খুবই সাধারণ। একটি টিশার্ট যদি কেউ হাতে নিয়ে সোজাভাবে তুলে ধরেন অথবা বিছানার ওপরে বিছিয়ে দেন তাহলে তা ইংরেজি টি অক্ষরের মতো দেখতে লাগে। মূলত এই কারণেই একে টি -শার্ট বলা হয়।
এছাড়াও টি-শার্টের ‘টি’ নিয়ে রয়েছে আরও একটি অজানা কারণ। অনেকেই দাবি করেন একসময় সৈন্যদের পোশাক ছিল এই টিশার্ট। তৎকালীন সময়ে সংবাদপত্রের কয়েকটি প্রতিবেদনেও বলা হয়েছিল কোন কোন দেশের সৈন্যরা প্রশিক্ষণের জন্য এই টি-শার্ট। সেই সময় প্রত্যেক সৈন্যদের ইউনিফর্মের নিচে টি-শার্ট পরার রীতি ছিল। পাশাপাশি এই টি-শার্ট পরেই শারীরিক প্রশিক্ষণ নিতেন তাঁরা। এই কারণেই এই পোশাককে ট্রেনিং-শার্ট বা টি-শার্ট বলা হত। জানা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌ বাহিনী ১৯১৩ সালের দিকে সৈন্যদের জন্য এই টি-শার্ট প্রথম তৈরি করা করা হয়েছিল।
Leave a Reply