পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি যিনি লোহার ফুসফুস নিয়ে
বেঁচে আছেন টানা ৭০ বছর
পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি
যিনি লোহার ফুসফুস নিয়ে
বেঁচে আছেন
বাকি ৫ টা মানুষের মতন
তার নিজের কোনো ফুসফুস নেই!
টানা ৭০ বছর ধরে তিনি
লোহার ফুসফুস বুকে বেঁধে রেখেছেন!
এলিয়েনের থেকেও অদ্ভুত এই মানুষটি!
কি নাম এই ব্যক্তির?
কিভাবে তিনি লোহার ফুসফুস
ব্যবহার করছেন?
কেনই বা তার এই পরিণতি হল?
কথায় বলে, ‘ নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস দুই ভাই একটি বন্ধ হলে বাঁচার উপায় নাই’। আর এই নিঃশ্বাস -প্রশ্বাস চলে ফুসফুসের মাধ্যমে। কিন্তু ভাবুন তো কোন ব্যক্তির যদি ফুসফুসই না থাকে তাহলে কি হবে? স্বাভাবিকভাবেই উত্তরটা হবে মৃত্যু। কিন্তু এমন ব্যক্তিও রয়েছে যিনি ফুসফুস ছাড়াই বেঁচে রয়েছে ৭০ বছর। ভাবছেন গল্প! না এটা বাস্তব। তবে এই বাস্তব হার মানাবে যে কোন রূপকথার গল্পকেও। ফুসফুসহীন এই মানুষটি পরিচিত ‘পোলিও পল’ নামে।
সালটা ছিল ১৯৫২, গোটা আমেরিকা তখন পোলিওর সঙ্গে লড়ছে। রোজ হাজার হাজার শিশু আক্রান্ত হচ্ছে এই রোগে। দুর্ভাগ্যবশত সেই সময় সেই শিশুদের তালিকায় ছিল ‘পলের’। পুরো নাম আলেকজান্ডার পল। মাত্র ছয় বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হন তিনি। এদিকে জীবনদায়ী ভ্যাকসিন আসে ১৯৫৫ সালে। তাই সেই সময় পলের বাঁচা হয়ে উঠেছিল প্রায় অসম্ভব। এই পোলিও স্পাইনাল কর্ডের মোটর নিউমরণকে আক্রমণ করে, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং পেশির মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত করে। এর ফলস্বরূপ একজন ব্যক্তি শ্বাস নিতে পারে না।
পলের ক্ষেত্রেও খানিকটা তাই হয়েছিল। শ্বাস নিতে পারছিল না পল। মুখের রং নীল হয়ে আসছিল। বাঁচার আশা ক্রমশই কমছিল। সেই সময়, পলকে বাঁচাতে জরুরী কালীন ভিত্তিতে ‘ট্রাকিয়োটমি’ অপারেশন করা হয়েছিল। ফুসফুসে জমে থাকা ফ্লুইড বের করে আনবার জন্য। কিন্তু ততক্ষণে বিকল হয়ে পড়েছিল পলের ফুসফুস। তাকে বাঁচাতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল সিলিন্ডার আকৃতির প্রকাণ্ড এক মেশিনের ভেতর। যেটি কাজ করে কৃত্রিম ফুসফুসের। এই যন্ত্র কে বলা হয় আয়রন লাং বা লোহার ফুসফুস। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ সাত দশক। সেদিনের শিশু পল পরিণত হয়েছে বৃদ্ধ পলে। আজ পোলিও মুক্ত আমেরিকা। বদল এসেছে চিকিৎসা শাস্ত্রেও। তবে বদলায়নি সে এবং তার লোহার ফুসফুস। তিনি নিজের এই লোহর ফুসফুস বদলাতে নারাজ।
এত বাঁধা সত্বেও পল একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। পড়েছেন উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে কলেজ স্নাতক। শেষে আইনের ডিগ্রিও অর্জন করেন। এরপর বহু বছর অনুশীলন করেন আইন নিয়ে। তার গল্প সত্যিই এক অনুপ্রেরণা।
নিজের আত্মকথায় পল বলছেন – ” এই সবই সম্ভব হয়েছে লোহার ফুসফুসের জন্য। আমি কখনই হাল ছাড়িনি এবং এখনো ছাড়বো না”।
এভাবেই বেঁচে থাকুক পলের মতন মানুষরা। অনুপ্রেরণা দিতে থাকুক হাজার হাজার ভেঙে পড়া মানুষকে। অমর হোক তাদের জীবন অমর হোক তাদের যুদ্ধ। তার এই জীবন যুদ্ধকে কুর্নিশ জানায় বাংলা হান্ট।
Leave a Reply