ভিনগ্রহীদের আদৌ কেউ কখনও খালি দেখেছেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর মোট পার্থক্য। তার থেকেও বড় প্রশ্ন ওঠে ভিনগ্রহীদের অস্তিত্ব নিয়ে। তাই বাস্তবে এই বিষয় নিয়ে যতই তর্ক বিতর্ক থাকুক না কেন রুপালি পর্দায় ভিনগ্রহের বাসিন্দাদের দেখে কিন্তু চুটিয়ে উপভোগ করেন আট থেকে আশি সকলেই। সবটাই আসলে ভিএফএক্স কিংবা গ্রাফিক্সের কামাল।
বিশেষ করে ভিনগ্রহীদের নিয়ে তৈরী হলিউড মুভি গুলি বারবার মন জয় করে নিয়েছে গোটা বিশ্বের সিনেমাপ্রেমীদের। যদিও এই ভিনগ্রহীদের নিয়ে বলিউডেও তৈরী হয়েছে বেশ কিছু সিনেমা। ২০০৩ সালে ‘কোয়ি মিল গয়া’র জাদুর হাত ধরে প্রথম এক ভিনগ্রহীর সাথে ভারতীয়দের পরিচয় করিয়েছিলেন পরিচালক রাকেশ রোশন।
সিনেমাটি মুক্তির পর সাফল্যের হাত ধরেই এসেছিল বিতর্ক। অনেকেই দাবি করেছিলেন রাকেশ রোশনের এই সিনেমাটি স্পিলবার্গের বিখ্যাত ছবি ‘ই টি— দ্য এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল’ সিনেমার হিন্দি সংস্করণ। তবে সমস্ত বিতর্ককে ছাপিয়ে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিল নীল রংয়ের ভিন গ্রহের ওই প্রাণীটি। তাই বড় বড় চোখে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে থাকা ভিনগ্রহী জাদুকে আজ ভুলতে পারেননি দর্শক।
এই সিনেমায় হৃত্বিক রোশন, প্রীতি জিন্টা কিংবা রেখা জির মত বড় বড় তারকাদের ভিড়েও নিজের জন্য আলাদা করেই জায়গা করে নিয়েছিল ওই ভিনগ্রহী জাদু। যার সংলাপ থেকে, চলাফেরা কিংবা ‘জা-দু….জা-দু… বলা মিষ্টি সুর আজও কানে বাজে দর্শকদের। কিন্তু জাদুর ওই পোশাকের পিছনে যে জলজ্যান্ত একজন অভিনেতা ছিলেন তাঁকে চিনে উঠতেই বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে দর্শকদের। আর তার জন্য দায়ী একজনই তিনি হলেন এই সিনেমার পরিচালক স্বয়ং রাকেশ রোশন।
তাঁর জন্যই বহু বছর প্রচারের আড়ালেই থেকে গিয়েছেন ‘জাদু’ অভিনেতা ইন্দ্রবর্ধন জে পুরোহিত। পাননি যোগ্য সম্মান। তাই সকলেই জানতে চান ইন্দ্রবর্ধনের সাথে এই অবিচার কেন করেছিলেন পরিচালক। এর পিছনে ছিল একটি বিশেষ কারণ। আসলে পরিচালক রাকেশ রোশন চাননি জাদুকে ঘিরে গোটা সিনেমাজুড়ে যে রহস্য,রোমাঞ্চ তৈরী হয়েছে, তা তার পিছনে থাকা অভিনেতার আসল চেহারা সামনে এনে নষ্ট করে দিতে। রাকেশ রোশনের মনে হয়েছিল এরফলে জাদু চরিত্রটিকে নিয়ে মানুষের কৌতূহল কমে যাবে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর খর্বকায় এই অভিনেতাকে জাদু চরিত্রে নেওয়ার আগে চল্লিশ-পঞ্চাশ জন অভিনেতার অডিশন নিয়েছিলেন পরিচালক। দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বিনোদন জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইন্দ্রবর্ধন। ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি ‘ছোটু দাদা’ নামেই বেশি পরিচিত।
এই জাদু চরিত্রে নিজেকে নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য বেশ কয়েক কিলো ওজন ঝরিয়ে ফেলেছিলেন ইন্দ্রবর্ধন। জাদু সিনেমার জন্য তাঁর ওই পোশাকটা ডিজাইন করেছিলেন জেমস কালনার ও লারা নামে এক অস্ট্রেলিয়ান দম্পতি। জানা যায় সেই পোশাক এতটাই ভারী হতো যে প্রত্যেকবার শুটিং শেষে তিনি তার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হতো। তাই প্রতিবার কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন নিতে হত অভিনেতাকে। জানা যায় এক একটা দৃশ্যের শুটিং করতে অভিনেতার প্রায় চার থেকে ছয় ঘন্টা সময় লাগতো। তবে এই চরিত্রের জন্য পরবর্তীতে তিনি স্বীকৃতি পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু দুঃখের বিষয় তখন তিনি নিজেই আর পৃথিবীতে ছিলেন না। ২০১৪-র ২৮ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন ‘জাদু’ অভিনেতা ইন্দ্রবর্ধন।
Leave a Reply