‘কথায় আছে চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ো ধরা!’ আর এই চুরি বিদ্যাতেই একেবারে সিদ্ধহস্ত ছিলেন এমনই একজন ভারতীয়। লোক ঠকিয়ে ইতিমধ্যেই তিনি তিন-তিনবার বিক্রি করে ফেলেছিলেন তাজমহল পর্যন্ত। তাই এমনি এমনিই তাকে ভারতের অন্যতম বড় কানম্যান বলা হয় না। কথা হচ্ছে কুখ্যাত প্রতারক নটবরলালকে নিয়ে। যদিও তার মৃত্যু আজও রহস্যই থেকে গিয়েছে। যার জট খোলা সম্ভব হয়নি আজও।
তবে গোটা দুনিয়ার কাছে তিনি নটোবরলাল নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম ছিল মিথিলেশ যাদব ব্রিটিশ শাসনকালে ১৯১২ সালে বিহারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। মিথিলেশ থেকে তাঁর নটোবরলাল হয়ে ওঠার কাহিনী কোন সিনেমার চিত্রনাটের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তাই তাকে নিয়ে বলিউডেও দু’দুটি সিনেমা তৈরি হয়েছে।
একেবারে ছোটবেলাতেই একটা চুরির পরেই লোক ঠকানোর কাজে পটু হয়ে ওঠে নটবরলাল। সেসময় এক প্রতিবেশী তাঁর কাছে ব্যাঙ্কের একটি ড্রাফ্ট জমা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েই প্রতিবেশীর সই জাল করে ওই ড্রাফ্ট ভাঙিয়ে হাজার টাকা তুলেছিল তখনকার মিথিলেশ। যদিও বিষয়টা ওই প্রতিবেশীর নজরে আসতে বেশি দিন সময় লাগেনি। জানাজানি হতেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি।
নটবরলালের বাবা ছিলেন স্টেশনমাস্টার। তার নিজেরও শিক্ষাগত যোগ্যতা কিছু কম ছিল না। বাণিজ্যের ছাত্র নটবরলাল কাজ করেছিলেন স্টক ব্রোকার হিসাবেও। তাই ব্যাঙ্কের নিয়মকানুন সম্পর্কেও ভালোই জ্ঞান ছিল তাঁর। সেই বিদ্যাকেই কাজে লাগিয়েছিলেন জালিয়াতির কারবারে। তাই পরবর্তীতে খুব সহজেই বিভিন্ন নথি, সই জাল করার কাজে পটু হয়ে উঠেছিলেন নটবরলাল।একসময় বিহার থেকে পালিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন শাড়ির ব্যবসা করতে। কিন্তু চেষ্টা সফল হয়নি।
তবে তাকে নিয়ে প্রথমবার চর্চা শুরু হয় ১৯৩৭ সালে। সেসময় ৯ টন লোহা চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। শোনা যায়, সেই অপরাধে ৬ মাসের কারাদণ্ড হয়েছিল তাঁর। জেল থেকে বেরিয়ে নতুন কারবার শুরু করেন নটবরলাল। রোজ যৌনপল্লিতে গিয়ে মহিলাদের মদ খাইয়ে বেহুঁশ করে তাঁদের কাছ থেকে টাকা, সোনা চুরি করতেন নটবরলাল। তবে তিনি ধরা পড়লেও যে যৌনকর্মী তাকে চিহ্নিত করেছিল তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তাই ছাড়া পেয়ে যান নটবরলাল।
কিন্তু এরপর তিনি আবার মানুষ ঠকানোর কাজে মন দেন। গোটা জীবনে বহু মানুষকে ঠকিয়েছেন তিনি। এমনকি সরকারি আধিকারিক সেজে বিদেশি পর্যটককে ঠকিয়ে তাজমহল পর্যন্ত ‘বিক্রি’ করে দিয়েছিলেন তিনি। তাও আবার তিন তিনবার। সকলের চোখে ধুলো দিয়ে একই কায়দায় বিক্রি করেছিলেন লালকেল্লা, এবং রাষ্ট্রপতি ভবনও। যা জেনে সেই সময় তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।
মিথিলেশ থেকে নটরবলাল হওয়ার ঘটনাও কম আশ্চর্যের নয়। আসলে মিথিলেশের নটবরলাল বলে এক গুজরাতি শাগরেদ ছিলেন। জালিয়াতি কারবার করতে গিয়ে একবার তারা দুজনেই ধরা পড়ে গিয়েছিলেন পুলিশের কাছে। কিন্তু আসল নটবরলাল পালিয়ে গেলেও মিথিলেশকেই নটবরলাল ভেবে ধরে নেয় পুলিশ। সেই থেকেই মিথিলেশ হয়ে যান নটবরলাল।
কিন্তু গ্রামের মানুষদের কাছে মসিহা ছিলেন তিনি। একাধিক জালিয়াতির অভিযোগে দোষী নটবরলালের ১১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ২০ বছর জেলে খেটেছেন তিনি। কারণ, বুদ্ধির জোরেই বারবার জেল থেকে পালিয়ে যেতেন নটবরলাল। ১৯৯৬ সালে শেষবার গ্রেফতার করা হয়েছিল নটবরলালকে। সেসসময় ৮৪ বছর বয়সেও হুইলচেয়ারে চেপে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
তার আইনজীবী দাবি করেন ২০০৯ সালের ২৫ জুলাই মৃত্যু হয়েছে নটবরলালের। যদিও নটবরলালের ভাই দাবি করেছিলেন যে, ১৯৯৬ সালেই মৃত্যু হয়েছে তার। তাই তার মৃত্যু নিয়ে রয়েছে ব্যাপক ধোঁয়াশা। নটবরলালের দুই স্ত্রী আর এক কন্যাসন্তানও রয়েছে।
Leave a Reply