দারিদ্রতাকে হারিয়ে তেলেঙ্গানার এক ছোট্ট শহরের দলিত পরিবারের সন্তাশন ডোংরে রেভাইয়াহ আজ একজন সফল আইএএস অফিসার। তাঁর জীবনের সাফল্যের কাহিনী আজকের তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রতাকে নিত্য সঙ্গী করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে দেখেছিলেন ডোংরে। বছরের-পর বছরের পরীক্ষা দিয়েও বহু মেধাবী ছাত্র ছাত্রী সাফল্য পান না ইউপিএসসিতে।
ভারতের তথা পৃথিবীর অন্যতম কঠিন সেই পরীক্ষায় প্রথমবারেই অভাবনীয় রেজাল্ট করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ডোংরে। প্রতিবার এই পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্থাৎ ইউ পি এস সি। এই কেন্দ্রীয় সংস্থার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সফল হওয়ার মোটেই সহজ নয়। এই পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ অধ্যাবসায়।
তেলেঙ্গানার দরিদ্র পরিবারের সন্তান ডোংরের ছোটবেলাটা আর পাঁচজনের থেকে ছিল একেবারেই আলাদা। খুব অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়ে এক নড়েবড়ে ভবিষ্যৎ আর দারিদ্রতার মধ্যেই বড় হয়েছিলেন ডোংর। কিন্তু কখনওই মনের জোরের কমতি ছিল না তাঁর। তার ছেলেকে পড়াশোনায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের সমস্তটা উজাড় করে দিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন ডোংরের মা। তাই স্বামীর মৃত্যুর পর মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়লেও ছেলের মুখের দিকে তাকিয়েই দুবেলা পেটের ভাত জোটাতে আর অর্থ উপার্জনের জন্য তেলেঙ্গানার একটি স্কুলে মিড ডে মিলের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি।
চরম দারিদ্রতার মধ্যেও ছেলের পড়াশোনা কোনো বাধা আসতে দেননি ডোংরের মা। মেধাবী ডোংরেও ছোট থেকেই খুব বুঝদার ছিলেন। পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়াই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। খুব ছোটবেলা থেকে আইটিআইটি এন্ট্রান্স পাশ করেন তিনি। তারপর ভর্তি হয়েছিলেন আইআইটি মাদ্রাজে। কিন্তু পড়াশোনার খরচ ছিল আকাশ ছোঁয়া। যদিও সেসময় তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসন।
এরপর আইআইটি গ্রাজুয়েট হয়ে দেশের মধ্যে অন্যতম কঠিন পরীক্ষা গেট পাশ করেন ডোংরে। তারপর তিনি যোগ দিয়েছিলেন হায়দ্রাবাদের একটি মোটা মাইনের চাকরিতে। কিন্তু কর্মজীবন শুরু হওয়ার পরেও স্বপ্ন দেখা থামাননি ডোংরে। তাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার। এরপর ২০২২ সালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সারা ভারতের মধ্যে ৪১০ ব়্যাঙ্ক করে তাক লাগিয়ে দেন ডোংরে।
Leave a Reply