ভারতীয়দের কাছে ‘অতিথি দেব ভব’, অর্থাৎ অতিথি ভগবানের সমান। তাই ভারতীয় পরম্পরা মেনে অতিথিদের যত্ন-আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি রাখেন না কেউই। গত ৯-১০ সেপ্টেম্বর দুদিন ব্যাপী প্রথমবার ভারতে আসর বসেছিল টি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনের। এই আসরে গোটা বিশ্বের নজর ছিল ভারতীয়দের দিকেই। এই টি-টোয়েন্টি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বের ১৯ টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা।
তালিকায় ছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ, ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি,জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা,জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের মতো রাষ্ট্রনেতারা। নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপম কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত হয়েছিল এই জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন।
অতিথিদের স্বাগত জানাতে নতুন রূপে সেজে উঠেছিল রাজধানী দিল্লিও। জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে হাজির অতিথিদের আতিথেয়তার দিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি তাদের খাওয়া দাওয়া-র দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছিল ভারত সরকার। ‘ভারত’ শব্দটিকে গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক এই সমস্ত রাষ্ট্র নেতাদের খাবারের তালিকায় ছিল একাধিক ভারতীয় খাবার দাবার। তবে তবে এদিন বিদেশ থেকে আসা সমস্ত অতিথিদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল নিরামিষ খাবারের। যেখানে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় খাবার মিলেট।
প্রসঙ্গত চলতি বছরটিকে মিলেট বর্ষ হিসেবে পালন করছে ভারত। যা ইতিমধ্যেই গৃহীত হয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সম্মেলনে।ভারতের এই প্রস্তাবে সম্মত হয়ে ২০২৩ সালকে আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই ভারতে আয়োজিত জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে অতিথিদের খাবারের তালিকায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে মিলেট তথা বাজড়ার নানা পদ।
অতিথিদের জন্য সকালের খাবারে ছিল রাগির ইডলি, মিলেট প্যানকেক। দুপুর আর রাতের মেনুতে ছিল ল্যাম্ব অ্যাট লিটল মিলেট স্যুপ সঙ্গে পাল্ম হার্ট, চেরি টোম্যাটোস, পার্ল মিলেট অ্যান্ড মিক্স মেসক্লুন। এ ছাড়াও ছিল মুর্গ বাদাম অ্যান্ড অমরনাথ কোর্মা, মিলেট নার্গিসি কোফতা। শুধু এখানেই শেষ নয়, অতিথিদের মুখ মিষ্টি করাতেও হাজির ছিল এলাচের স্বাদগন্ধ মেশানো মিলেটের পুডিং, ওয়াইল্ড রাইস অ্যান্ড পার্ল মিলেট মুস, অরেঞ্জ কিনুয়া অ্যান্ড লিট্ল মিলেট ক্ষীর থাকছে স্পেশাল মেনুতে।
ডিনারের মেনুতে ছিল ‘পাত্রম’ নামের বিরল এক পদ। মশলাদার চাটনি , দইয়ের টপিং সঙ্গে মুচমুচে মিলেট পাতার কুচি। দুর্দান্ত স্বাদের এই স্টার্টার নজর কেড়েছে অতিথিদের। এছাড়া মেন কোর্সে ছিল ‘বনবরণমে’র মতো এক দারুণ পদ। যা আসলে কাঁঠালের জেলাটে। সঙ্গে ছিল ফরেস্ট মাশরুম, মিলেট ক্রিসপ, কারি পাতা। যা কেরলের লাল ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়েছিল।
এছাড়া ভারতীয় স্ট্রিট ফুডের মধ্যে ছিল ভারতীয় পাউরুটি অর্থাৎ মুম্বইয়ের পাও। এছাড়াও ছিল ছোট এলাচের স্বাদ-গন্ধ মাখা এক বিশেষ ধরনের পাউরুটি বাকরখানিও। এছাড়াও ছিল বেভারেজ আর কাশ্মীরের কাওয়া, এবং দার্জিলিংয়ের চা।
তবে মিলেটের খাবার ছাড়াও ভারতের নানা প্রান্তের বিখ্যাত খাবারের স্বাদও চেখে দেখছেন জো বাইডেন, ঋষি সুনাকরা। তাই তাঁদের জন্য ছিল রাজস্থানের ডাল বাটি চুরমা, দক্ষিণ ভারতের বিশেষ মশালা ধোসা, বিহারের লিট্টি চোখা সহ বাংলার রসগোল্লাও। এছাড়াও ছিল ফুচকা, চাট, দহি ভাল্লা, সিঙ্গাড়ার মতো মুখরোচক খাবারও।
Leave a Reply