বিস্কুট

চেন্নাইয়ের বাসিন্দা পি দিল্লিবাবু। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে হিমাচলের মানালির একটি দোকান থেকে পথকুকুরদের খাওয়ানোর জন্য ওই সংস্থার অন্যতম ব্র্যান্ড ‘সানফিস্ট মেরি লাইট’-এর বিস্কুট কেনেন তিনি। বিস্কুটের প্যাকেটে লেখা ছিল তাতে ১৬টি করে বিস্কুট আছে। কিন্তু প্যাকেট খোলার পর দিল্লিবাবু গুনে দেখেন, প্যাকেটে রয়েছে ১৫টি করে বিস্কুট। একটি বিস্কুট কম। দিল্লিবাবু যে দোকান থেকে বিস্কুটগুলি কিনেছিলেন সেখানে গিয়ে অভিযোগ করেন। আইটিসি সংস্থাকেও অভিযোগ জানিয়ে বিষয়টির ব্যাখ্যা চান। কিন্তু জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি দিল্লিবাবু।

বিস্কুটের প্যাকেটে মাত্র একটি বিস্কুট কম ছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই ২ বছরের আইনি লড়াই শেষে   ক্ষতিপূরণ বাবদ পেলেন এক লক্ষ টাকা। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। আর এই অসম্ভবকেই এবার সম্ভব করে তুলেছেন চেন্নাইয়ের বাসিন্দা পি দিল্লীবাবু নামে এক ব্যক্তি। ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছিল আজ থেকে দু’বছর আগে অর্থাৎ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে।

সে সময় চেন্নাইয়ের বাসিন্দা পি দিল্লি বাবু যাচ্ছিলেন মানালি। সেসময় পথকুকুরদের খাওয়ানোর জন্য এক মুদির দোকান থেকেই দুই ডজন ‘সানফিস্ট মেরি লাইট’ বিস্কুট কেনেন তিনি। কিন্তু প্যাকেট খুলেই খুলতেই মাথায় হাত দিল্লি বাবুর।  সাধারণত এক একটি বিস্কুটের প্যাকেটে ১৬টি করে বিস্কুট থাকে। অথচ দিল্লি বাবু প্যাকেট খুলে দেখেন সেখানে আছে ১৫ টি বিস্কুট। কিন্তু আস্ত একটা বিস্কুটই বা কেন কম থাকবে?

উত্তর জানতে তিনি প্রথমে  গিয়েছিলেন সেই দোকানেই। কিন্তু কোনো সদুত্তর  না পেয়েই তিনি একেবারে সোজা চলে যান আইটিসির কাছে। যথারীতি সেখানেও তিনি উপযুক্ত জবাব পাননি। তাই দিল্লি বাবু বাধ্য হয়েই যান ক্রেতা উপভোক্তা আদালতে। সেখানেই সমস্ত তথ্য সহ দিল্লি বাবু জানান আইটিসির প্রতিটি বিস্কুটের দাম পড়ছে ৭৫ পয়সা করে। অভিযোগে তিনি আরো জানান আইটিসি সংস্থার তরফের দিনে প্রায় ৫০ লক্ষ প্যাকেট বিস্কুট তৈরি করা হয়।

বিস্কুটের মোড়কের  পিছনে থাকা হিসেব বলছে  এই সংস্থা প্রতিদিন সাধারণ মানুষের সাথে প্রায় ২৯ লক্ষ টাকার প্রতারণা করে। যদিও পাল্টা যুক্তি দিয়ে আইটিসির তরফে দাবি করা হয় প্যাকেটে ভিতরে থাকা বিস্কুটের সংখ্যার ভিত্তিতে নয় ওই নির্দিষ্ট পণ্যটি  তার ওজনের ভিত্তিতে বিক্রি করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে সানফ্রিজ মেরিলাইট বিজ্ঞাপিত ওই পণ্যের ওজন ছিল মোট  ৭৬ গ্রাম।

যদিও আদালতের তরফে যাচাই করে দেখা হয় ১৫ টি বিস্কুটের প্যাকেটের ওজন হচ্ছে ৭৪ গ্রাম।  এরপর আইটিসি তরফে ২০১১ সালের ‘লিগাল মেট্রোলজি রুলস’-এর কথা উল্লেখ করে উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা রয়েছে প্রি প্যাকেজ পণ্যগুলির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ গ্রাম ওজন এদিক-ওদিক হতে পারে। কিন্তু বিচারক সেই দাবি নস্যাৎ  করে দ্বিমত পোষণ করে বলেন ‘ওই সাড়ে চার গ্রামের বিষয়টি শুধুমাত্র ভঙ্গুর পণ্যের ক্ষেত্রেই  প্রযোজ্য’।

তাই অভাবনীয় রায় দিয়ে গত ২৯ আগস্ট আদালত আইটিসিকে অনৈতিক ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করে। সেইসাথে বিস্কুটের ওই নির্দিষ্ট ব্যাচ বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দেয় আদালত। বিচারক আইটিসিকে দিল্লী বাবুকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক লক্ষ টাকার দেওয়ার নির্দেশ দেয়। মাত্র একটি বিস্কুট কম থাকার অভিযোগে লড়াই করে এদিন এক লক্ষ টাকা পেলেন দিল্লি বাবু ।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *