পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ ৮৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। যাকে ছাড়া এককথায় অসম্পূর্ণ গোটা পৃথিবী। পৃথিবী থেকে ওই মায়া ভরা চাঁদের সৌন্দর্য্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় যে কারও। তবে চাঁদের সৌন্দর্য্য যেমন মানুষকে মুগ্ধ করে তেমনই তার অজানা রহস্য মানুষের মনে তৈরি করে একাধিক প্রশ্ন। বিশেষ করে ইসরোর পাঠানো তৃতীয় চন্দ্রযান চাঁদের মাটিতে অবতরণ করার পর থেকেই চাঁদ নিয়ে মানুষের মনে কৌতুহল গিয়েছে কয়েক গুণ বেড়ে। সেই কৌতূহল থেকেই মানুষের মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে নানান ধরনের প্রশ্ন। কেউ জানতে চাইছেন চাঁদের জন্ম কীভাবে হয়েছিল তো কারও প্রশ্ন চাঁদ না থাকলে কী হতো পৃথিবীর?
পৃথিবীর অস্তিত্ব বজায় রাখতে প্রতিনিয়ত নানান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে চাঁদ। একসময় মনে করা হতো চাঁদ এবং পৃথিবী উভয়ের জন্ম একই সময় হয়েছিল। কিন্তু পরে জানা যায় চাঁদিয়ে দেখতে গেলে চাঁদ পৃথিবীর ছোট ভাইয়ের মতো।
চাঁদের জন্ম কীভাবে হয়েছিল? এ বিষয়ে নানান গবেষণা করে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে এক বিস্ময়কর মহাজাগতিক ঘটনা ঘটেছিল। যার ফলে সেই সময় মঙ্গল গ্রহের মত আকৃতি বিশিষ্ট থিয়া নামক বস্তুর সাথে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল পৃথিবীর। আর সেই ভয়াবহ সংঘর্ষের ফলেই পৃথিবী থেকে খসে পড়া টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় মহাকাশে। তবে পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে তা বেশিদূর যেতে পারেনি। এই টুকরো গুলোই পরবর্তীতে একত্রিত হয়ে গোল আকৃতির একটি ছোট্ট উপগ্রহে পরিণত হয়। যা বর্তমানে আমাদের কাছে চাঁদ নামে পরিচিত। জানা যায় সেই সংঘর্ষের সময় পৃথিবীর বয়স ছিল ১০ কোটি বছর।
জানা যায় চাঁদের জন্মলগ্নে পৃথিবী ছিল সাদা বরফে ঢাকা। চাঁদ সৃষ্টির আগে পৃথিবীতে কোন প্রাণের অস্তিত্বও ছিল না। তাই মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ধারণা চাঁদ সৃষ্টি না হলে পৃথিবীতে কোনো জীবের আবির্ভাবই ঘটত না। কিন্তু বারবার প্রশ্ন ওঠে যদি মহাকাশে চাঁদের কোনো অস্তিত্বই না থাকতো তাহলে পৃথিবীর কি অবস্থা হতো ?
চাঁদ না থাকলে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে পৃথিবীর রাতের ওপর। রাতের বেলা চাঁদ সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে আমাদের পৃথিবীকে আলোকিত করে। তাই চাঁদ না থাকলে রাতের আকাশে থাকবে নিকষ কালো অন্ধকার। যার ফলে পরিবর্তন আসবে নিশাচর প্রাণীদের জীবনযাত্রাতেও।
প্রসঙ্গত পৃথিবীর বুকে চাঁদ এবং সূর্য উভয়ের মহাকর্ষ বলেই প্রতিদিন জোয়ার ভাটা হয়। তবে পৃথিবীর ওপর সূর্যের চেয়ে চাঁদের মহাকর্ষ টান বেশি। কিন্তু চাঁদ না থাকলে,পৃথিবীর ওপর শুধু সূর্যের মহর্ষ বল কাজ করবে।
প্রসঙ্গত জোয়ার-ভাটা ছাড়াও চাঁদের মহাকর্ষ বলনিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি। চাঁদ না থাকলে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি বেড়ে যাবে। যার ফলে কমে যাবে দিনরাতের দৈর্ঘ্য। চাঁদ না থাকলে ঘটবে না সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ।
সবশেষে বলা যায় চাঁদ না থাকলেও হয়তো পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব থাকবে ঠিকই, কিন্তু জীবনটা পুরোপুরি অন্যরকম হবে। মজার বিষয় হলো চাঁদ না থাকলে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা চন্দ্রবিজয়ই করতে পারতেন না।
Leave a Reply