রাতের তারায় ভরা আকাশে থাকা চাঁদের দিকে তাকালে আজও নিজের অজান্তেই আমাদের মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় মায়ের মুখে শোনা ঘুম পাড়ানি ছড়া ‘আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা,চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা।’! তাই বয়স ৮ হোক ৮০ আমাদের সকলের কাছেই চাঁদ আজও ‘মামা’ নামেই পরিচিত। কিন্তু চাঁদ আসলে কে? যে চাঁদকে প্রেমিকরা তাঁদের প্রেয়সীর সুন্দর চেহারার সাথে তুলনা করে থাকেন তাকে কেনই বা আমরা মামা বলে ডাকি?
আসলে চাঁদকে মামা বলে ডাকার পিছনেও রয়েছে বিশেষ কারণ। যার সাথে যোগসূত্র রয়েছে ভাগবত পুরাণ, কিংবা বিষ্ণু পুরাণের মতো বেশ হিন্দু পুরাণ ও মহাভারতের। অমৃৃত তথা অমরত্ব লাভের জন্য দেবতা এবং অসুরদের সমুদ্রমন্থনের কাহিনী কমবেশি আমাদের সকলেরই জানা।
এই সমুদ্রমন্থনের সময় ক্ষীর সাগর থেকে বিভিন্ন রত্ন ছাড়াও উঠে এসেছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীরা। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দেবী লক্ষী। এছাড়াও উঠে এসেছিল চন্দ্র,ঐরাবত,কামধেনু,পারিজাত, অপ্সরা, বারুণী, প্রভৃতি। হিন্দু পুরান মতে সমুদ্রমন্থন থেকে উঠে আসা দেবী লক্ষীকে ‘মা’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়। তাই এই সম্পর্কের সূত্র ধরেই সমুদ্রমন্থনে মা লক্ষ্মীর পর বেরিয়ে আসা অন্যান্য সমস্ত রত্ন এবং দেব দেবীকে মা লক্ষ্মীর ছোট ভাই বা বোন হিসাবে সম্বোধন করা শুরু হয়।
এই কারণেই দেবী লক্ষীর পরেই যেহেতু চাঁদের উত্থান হয়েছিল তাই চাঁদকে মা লক্ষ্মীর ছোট ভাই বলা হয়ে থাকে। সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে চাঁদ সমগ্র পৃথিবীবাসীর মামা বলেই বিবেচিত হয়। তাই চাঁদকে আমরা সবাই মামা বলেই ডাকি।
এছাড়াও রয়েছে আরও একটি বিশেষ কারণ। আমরা সকলেই জানি পৃথিবী থেকে ৩৮৫,০০০ কিমি দূরে অবস্থিত চাঁদই হল পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। পৃথিবীর দিন রাত্রির পরিবর্তনের ক্ষেত্রে চাঁদ আর পৃথিবীর মধ্যে রয়েছে অনবদ্য সম্পর্ক। দেখতে গেলে চাঁদ সারাক্ষণ একেবারে ভাইয়ের মতোই সারাক্ষণ রক্ষা করে চলেছে পৃথিবীকে। আর পৃথিবী যেহেতু আমাদের সকলের কাছেই মায়ের মতো তাই সেদিক দিয়ে পৃথিবীর ভাই চাঁদও সকলের কাছে মামা। তাই মনে করা হয় এই দুই বিশেষ কারণেই চাঁদকে মামা বলে ডাকেন পৃথিবীবাসী।
Leave a Reply