আগস্ট বিদায় নিয়ে ইতিমধ্যেই নতুন ইনিংস শুরু করেছে সেপ্টেম্বর মাস। অর্থাৎ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গত হয়েছে ভারতের দ্বিতীয় বৃষ্টিপাতের মাস। তবে এবছরের আগস্ট মাসে বেশ খারাপ পার্ফম্যান্স বৃষ্টির। যা রীতিমত চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়াবিদদের কপালে। বৃষ্টির ঘাটতির কারণে চলতি বছরের আগস্ট ছিল সবচেয়ে শুষ্কতম মাস। আগস্টে বৃষ্টির ঘাটতির পরিমাণ ৩০ শতাংশ অতিক্রম করে ফেলেছে। ১৯০১ সালের পর গত ১২২ বছরের ইতিহাসে যা দ্বিতীয়বার।
প্রত্যেক বছরের আগস্ট মাসে সারা দেশে প্রায় ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। যা বার্ষিক ১,১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রায় ২২ শতাংশ। কিন্তু, ভারতের আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্য়ান অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট মাসের প্রথম ২১ দিনে ১১৫.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা ২০০৫ সালের ১৯০.১ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। গত মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় ১৩ শতাংশ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি হয়েছে। আগস্টে বৃষ্টিপাতের এই ঘাটতির জন্য দায়ী এল নিনোর বিরূপ প্রভাব। যা মৌসুমি বৃষ্টিপাত ছাপিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এপ্রসঙ্গে ভূ বিজ্ঞান মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব এম রাজীবন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘এল নিনোর প্রভাব এখনও পর্যন্ত খুব স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। আমরা ভাগ্যবান যে জুলাই মাসে ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছিল। অন্যথায় আমরা খুব কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তাম।’
প্রসঙ্গত বৃষ্টির এই ঘাটটির পরিমাণের রেকর্ড কিন্তু এই প্রথম নয় এর আগেও এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছিল ভারতবর্ষ। ১৯০১ সালে সালের পর ২০০৫ সালে সব থেকে শুষ্কতম বর্ষা ছিল আগস্ট মাসে। জানা যাচ্ছে গত মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৩ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছিল। সারা দেশে আগস্ট মাসে ২৫৪.৯ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে যা বর্ষাকালে মোট বৃষ্টির পরিমাণে ৩০ শতাংশ। তাই পুরনো সমস্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯০১ সালের পর এটাই সব থেকে শুষ্কতম আগস্ট। এরপর ২০০৫ সালের আগস্টে ২৫ শতাংশ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ঘটেছিল, ১৯৬৫ সালে তা ছিল ২৪.৬ শতাংশ। ১৯২০ সালে ছিলে ২৪.৪ শতাংশ। ২০০৯ সালে ছিল ২৪.১ শতাংশ আর ১৯১৩ সালে ঘাটতি ছিল ২৪ শতাংশ। এর আগে ২০০২ সালের জুলাই মাসে তাৎপর্যপূর্ণভাবে কম ছিল বৃষ্টির ঘাটতি যা ছিল খুব উদ্বেগজনক।
ফসলের ক্ষতি
বৃষ্টির এই ঘাটতি কৃষি, ফলন এবং মাটির অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যার জেরে গ্রীষ্মে বপন করা ফসলের ফলন নষ্ট হতে পারে। ধান থেকে সয়াবিনের ফলনও মার খেতে পারে। ৩ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির জন্য বর্ষা অত্যাবশ্যক। ভারতে জলাধারগুলি ভর্তি করার জন্য প্রয়োজনীয় ৭০ শতাংশ বৃষ্টি সরবরাহ করে এই বর্ষা।
কেন এই বৃষ্টির ঘাটতি?
আইএমডি প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন আগস্টে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টির একমাত্র কারণ হলো এল নিনো। এখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক কি এই এল নিনো? প্রসঙ্গত এল নিনো হচ্ছে এমন একটি প্রাকৃতিক অবস্থা যাতে দক্ষিণ আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরে জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে জলের প্রচলন কমায় এল নিনো। এটি একটি পালস বা তরঙ্গের মতো যা প্রায় ৩০ থেকে ৬০ দিন স্থায়ী হয়।
অনিয়মিত বর্ষা:
মূলত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে বর্ষার মরশুম। ভারতে কমপক্ষে ৮ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। এক শতাব্দীর বেশি সময় পর। সবচেয়ে শুষ্ক আগস্ট দেখলেন ভারতবাসী। এবারের বর্ষা ছিল ব্যাপক অনিয়মিত। জুনের বৃষ্টিপাত ছিল গড়ের চেয়ে ৯ শতাংশ কম।
হৃষিকেশে এত বৃষ্টি কেন?
প্রসঙ্গত শুধু শুষ্ক বর্ষা হিসেবেই নয় চলতি বছরের আগস্ট মাসে তৈরি হয়েছে আরো একটি রেকর্ড। সাধারণত চেরাপুঞ্জি এবং মৌসিনরাম ভারতের সবচেয়ে আর্দ্রস্থান। কিন্তু এই আগস্ট মাসে দেশের সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের তকমা ছিনিয়ে নিয়েছে উত্তরখণ্ডের হৃষিকেশ। আগস্ট মাসের ১ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত হৃষিকেশে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১ হাজার ৯০১ মিলিমিটার। অন্যদিকে চেরাপুঞ্জি এবং মৌসিনরামে অগাস্টে বৃষ্টিপাত হয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৮৭৩ মিলিমিটার এবং ১ হাজার ৪৬৪ মিলিমিটার।
Leave a Reply