‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর!’ সনাতন হিন্দুধর্মের বিশ্বাসীদের মনেও এমন কিছু প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে যা যুগ যুগ ধরে ধ্রুব সত্য বলে মেনে চলেছেন ভক্তরা। ‘অশ্বত্থামা বলির ব্যাসঃ হনুমন্থরঃ বিভীষণঃ। কৃবা পরশুরাম চ সপ্তৈতেয় চিরঞ্জীবীনঃ।’ হিন্দু পুরাণের এই মন্ত্রে এমন সাত জনের নাম উল্লেখ রয়েছে, যাঁরা অমর। শাস্ত্রমতে তাঁরা পৃথিবীর অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত জীবিত থাকবন। তাই বহু মানুষের বিশ্বাস আজও জীবিত রয়েছেন তাঁরা। এমনকি যে ব্যক্তি এঁদের নাম স্মরণ করেন তিনি ভাগ্যবান হন। এছাড়াও তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করেন।আসুন দেখে নেওয়া যাক ঈশ্বরের আশীর্বাদে যাঁরা অমর হয়েছিলেন তাঁদের তালিকা।
ভগবান হনুমান:
রামায়ণের কাহিনী থেকে জানা যায়, মাতা সীতার থেকেই অজর-অমর হওয়ার বরদান পেয়েছিলেন ভগবান হনুমান। অর্থাত্ বয়স কোনোদিন ছুঁতে পারবে না তাঁকে। শুধু তাই নয় জানা যায় হনুমানের ভক্তি ও উৎসর্গ দেখে তাকে অমরত্বের আশীর্বাদ করেছিলেন দেবী সীতা। হনুমানকে কলিযুগের জাগ্রত দেবতাও বলা হয়। জানা যায় রামায়ণের সমস্ত চরিত্র মোক্ষ লাভ করলেও, হনুমান চেয়েছিলেন যত দিন মানুষের হৃদয়ে রাম জীবিত আছেন, তত দিন তিনি পৃথিবীতেই থাকবেন।
অশ্বত্থামা:
মহাভারতে বর্ণিত কৌরব ও পাণ্ডবদের গুরু দ্রোণাচার্যের পুত্র ছিলেন অশ্বত্থামা। তিনি
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে, অশ্বত্থামা কৌরবদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। পিতা দ্রোণাচার্যের হত্যার প্রতিশোধ নিতে তিনি দ্রৌপদীর ঘুমন্ত ছেলেদের হত্যা করেছিলেন। তখন ভগবান স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ অশ্বত্থামাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন পৃথিবী অন্তিম লগ্ন পর্যন্ত তিনি এখানেই ঘুরে বেড়াবেন। মনে করা হয় এই অভিশাপের কারণেই এই মহান যোদ্ধা এখনও জীবিত রয়েছেন।রাজা বলি
ত্রিলোক জয়ী অসুর সম্রাট মহাবলীও অমরত্বের বরদান পেয়েছিলেন। তাকে প্রহ্লাদের বংশধর বলে মনে করা হয়। ভগবান বিষ্ণু যখন রাজা বালিকে বামন অবতারে পরীক্ষা করেছিলেন, তখন তাঁর আনুগত্য দেখে ভগবান বিষ্ণু তাঁকে অমরত্বের বরদান করেছিলেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী রাজা মহাবলী বছরে একবার নিজের প্রজার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এই উত্সবকেই ‘ওণম’ রূপে পালন করা হয়।
বিভীষণ
লঙ্কার রাজা রাবণের ছোট ভাই বিভীষণ। তিনি ধর্মের পক্ষ নিয়ে ভগবান শ্রী রামকে সমর্থন করেছিলেন। সেইসাথে লঙ্কায় ধর্ম এবং সত্যের প্রচার করেছিলেন তিনি। তিনি দাদা রাবণকেও বুঝিয়েছিলেন তিনি শ্রীরামের স্মরণে আসার জন্য। সব মিলিয়ে বিভীষণের ভক্তিতে খুশি হয়ে ভগবান রাম বিভীষণকে অমরত্ব দান করেছিলেন। তাই মনে করা হয়, আজও বিভীষণ পৃথিবীতে জীবিত আছেন।
পরশুরাম
এই তালিকায় রয়েছেন ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামও। সমস্ত অস্ত্র-সস্ত্রের জ্ঞাতা তিনি। পরশুরামের তপস্যায় খুশি হয়ে স্বয়ং মহাদেব তাঁকে একটি কুঠার এবং অমরত্বের বর দিয়েছিলেন। মনে করা হয় পরশুরাম এখনও সেখানেই আছেন।
বেদ ব্যাস
চিরঞ্জীবিদের এই তালিকায় রয়েছেন স্বয়ং বেদের রচয়িতা মহর্ষি বেদব্যাসও। তিনি মহাকাব্য মহাভারতও রচনা করেছিলেন। তাঁকে পাণ্ডিত্য এবং জ্ঞানের প্রতীক বলে মনে করা হয়। তিনিও অমরত্ব পেয়েছিলেন।বেদব্যাস ছিলেন ঋষি পরাশরের পুত্র এবং ঋষি বশিষ্ঠের পৌত্র।
Leave a Reply