লোকসভা নির্বাচন

লোকসভা নির্বাচনের আগে, কেন্দ্রীয় সরকারের মূল মন্ত্র হতে চলেছে ‘এক দেশ, এক ভোট’ নীতি। কিন্তু প্রশ্ন হল কি এই এক দেশ এক ভোট নীতি?  হঠাৎ করে কেন এই নীতি প্রচলন করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার?  এই নীতির সুবিধা কিংবা অসুবিধায় বা কি হতে পারে?  আপাতত এমনই নানান প্রশ্ন উঁকি  দিচ্ছে দেশবাসীর মনে। আসুন জানা যাক বিস্তারিত।

ভোটের বাদ্যি বাজতেই রাজনীতির ময়দানে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন রাজনীতির কারবারীরা। সকলেই জোর দিচ্ছেন নিত্য নতুন রণকৌশলের ওপর। তেমনি  এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগে, কেন্দ্রীয় সরকারের মূল মন্ত্র হতে চলেছে ‘এক দেশ, এক ভোট’ নীতি।  যা কার্যকর করতে ইতিমধ্যেই  একটি কমিটি গঠন করে ফেলেছে মোদি সরকার। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ এইভাবে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ভেঙে দেওয়ার ছক কষছেন নমো।  খুব শিগগিরই ‘এই এক দেশ এক ভোট’ নীতির  বিলও পেশ করতে পারেন কেন্দ্র সরকার। সম্প্রতি তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী।

এই এক দেশ এক ভোট নির্বাচন বলতে আসলে বোঝায় সারা দেশে একসাথে নির্বাচন। সাধারণত আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যার সাথে সারা দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনের কোন মিল থাকে না। কিন্তু যদি কেন্দ্রীয় সরকার দেশ জুড়ে এক দেশ এক ভোট নীতি চালু করতে পারেন তাহলে সারা দেশ জুড়ে লোকসভা এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন একই সাথে অনুষ্ঠিত হবে।

প্রসঙ্গত বর্তমানে যে নিয়ম প্রচলিত আছে তার ফলে ক্ষমতাসীন সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হলেই নতুন নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় । কিন্তু এক দেশ এক ভোট নীতিতে সেই হিসেবে উল্টেপাল্টে যেতে পারে। এখন দেখে নেওয়া যাক এই নির্বাচনের কি কি সুবিধা আর অসুবিধা রয়েছে?

সুবিধা:

আমাদের দেশে যে কোন নির্বাচন মানেই তার পিছনে থাকে এক বিরাট অংকের খরচ। তাই মনে করা হচ্ছে ‘এই এক দেশ এক ভোট নীতি’ চালু হলে নির্বাচনের খরচ কিছুটা কমানো সম্ভব হবে। যা এই নীতির অন্যতম প্রধান সুবিধা বলে মনে করছেন ভোট কারবারীরা। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৬০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়াও প্রত্যেকটি বিধানসভা নির্বাচনের পিছনে থাকে  আলাদা আলাদা খরচ।

এছাড়া এই নীতি চালু হলে দেশের প্রশাসনিক দক্ষতাও বাড়বে বলে দাবি করা হচ্ছে। প্রত্যেক ভোটের সময় প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা ভোটগ্রহণের দায়িত্বে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই সেই সময় ব্যাহত হয় প্রশাসনিক কাজকর্মও। যার ফলে সমস্যার মুখে পড়েন জনসাধারণ। কিন্তু এই নীতি কার্যকর হলে সেই সমস্যার সমাধান হবে বলেই মনে করছেন সমর্থকরা।

এছাড়াও এই নীতি কার্যকর হলে তা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নীতি এবং কর্মসূচির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতেও সাহায্য করবে। সরকারের কোন উন্নয়নমূলক কাজও কোনোভাবে বাধা পাবে না বলে দাবি করা হচ্ছে।

একইসাথে  আইন কমিশনের দাবি এই নীতি চালু হলে ভোটারদের সংখ্যা বাড়বে।  যার ফলে বাড়বে ভোটের হার। কারণ যে কোনো  মানুষের পক্ষেই একসাথে দুটি ভোট দেওয়া অনেক বেশি সুবিধা জনক হবে।

অসুবিধা:

এক্ষেত্রে  প্রথমেই তুলে ধরা হচ্ছে সাংবিধানিক সংশোধনীর কথা। কারণ লোকসভা এবং বিভিন্ন বিধানসভার ভোট একসঙ্গে করতে গেলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের পাশাপাশি অন্যান্য সংসদীয় পদ্ধতিতেও আনতে হবে সংশোধন। এছাড়া বিরোধীদের ভয় একসঙ্গে সমস্ত নির্বাচন সম্পন্ন হলে আরো বাড়বে কেন্দ্র সরকারের দাপট। যার ফলে জাতীয় স্তরের সমস্যা গুলোই প্রাধান্য পাবে, কিন্তু কোনো গুরুত্ব পাবে না রাজ্যস্তরের সমস্যাগুলো। এছাড়া  নির্বাচনী ব্যয় এবং কৌশলের ক্ষেত্রেও তারা জাতীয় দলগুলির সঙ্গে টেক্কা দিতে পারবে না বলে দাবি।

২০১৫ সালে আইডিএফসি ইনস্টিটিউটের করা এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একসাথে সব নির্বাচন হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভোটারদের বিধানসভা এবং লোকসভায় বিজয়ী দল বা জোটকে বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা ৭৭ শতাংশ। তবে ৬ মাসের ব্যবধানে ভোট হলে মাত্র ৬১ শতাংশ ভোটার একই দলকে ভোট দেবেন।

প্রসঙ্গত এখানে বলে রাখি ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লোকসভা এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন একসঙ্গে হত। তবে ১৯৬৮ এবং ’৬৯ সালে কয়েকটি রাজ্যের সরকার এবং ১৯৭০ সালে কেন্দ্রের সরকার ভেঙে গেলে ধীরে ধীরে সাধারণ নির্বাচন এবং বিধানসভা নির্বাচন আলাদা হতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী এক দেশ এক ভোটের বিষয়ে চাপ বাড়াতেই  বিরোধী দলগুলি বিরোধিতা করতে শুরু করেছেন। এ বিষয়ে বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার বৈঠকে বিরোধী নেতারা দাবি করেছেন এই নীতি নিয়ে মোদী সরকার ঘুরপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। তাঁদের অভিযোগ এটি অসংবিধানিক এবং গণতন্ত্রের নীতিবিরুদ্ধ।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *